দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন নিয়ে কথা বললেন 'সোনাদা' ও 'ঝিনুক'
রণিতা গোস্বামী
রণিতা গোস্বামী
গোয়েন্দা গল্প ও সেটা নিয়ে তৈরি সিনেমার উপর বাঙালি সিনেমাপ্রেমীদের বরাবরের একটা অন্যরকম আকর্ষণ রয়েছে বৈকি। আর সে কারণেই বোধহয়, ব্যোমকেশ বক্সী, ফেলুদা সহ একাধিক সাহিত্য নির্ভর রোমাঞ্চে ভরা গোয়েন্দা গল্প বারবার উঠে এসেছে সিনেমার পর্দায়। আর সবসময়ই বাঙালি সিনেমাপ্রেমীরা তা চেটেপুটো উপভোগ করেছেন। তবে সাহিত্য নির্ভর না হয়েও মৌলিক রোমাঞ্চে ভরা কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর, মুক্তিপ্রাপ্ত 'গুপ্তধনের সন্ধানে' ছবিটি দর্শকদের মন কেড়েছিল। সিনেমাপ্রেমীদের মনে ধরেছিল সোনাদা, আবির ও ঝিনুকের রসায়ন।
আর দর্শকদের সেই ভালোলাগার কথা মাথায় রেখেই ফের একবার পর্দায় ফিরছে এই জুটি। সৌজন্যে, 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন'। আগামী ২৪ মে শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। তার আগে সিনেমার খুঁটিনাটি, নানান কথা Zee ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন ছবির দুই তারকা আবির চট্টোপাধ্যায় ও ঈশা সাহা। অর্জুন শ্যুটিং ব্যস্ত থাকায় তাকে অবশ্য বাদ রেখেই আলোচনা শুরু করতে হল।
আবির- ছবিতে আমি অর্থাৎ সুবর্ণ সেন হলেন একজন ইতিহাসের প্রফেসর, কর্মসূত্রে বিদেশে থাকতেন, তবে তিনি আপাতত কলকাতায় চলে এসেছেন। যদিও আগের ছবিতেই সোনাদার কলকাতায় ফেরা দেখানো হয়েছে। সোনাদা চরিত্রটি এমন একটা চরিত্র যাঁর অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়তা, বুদ্ধিমত্তা, সেন্স অফ হিউমার সবই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে এবং হবেও। পাশাপাশি, বাঙালির যে 'সোনা ছেলে' বলে একটা ধরনা রয়েছে, সেটাও এই চরিত্রটির মধ্যে দর্শক পাবে।''
সোনাদার সঙ্গে আবির (অর্জুন চক্রবর্তী) ও ঝিনুকের (ঈশা সাহা) রয়াসনটা কতটা জমবে এই ছবিতে?
আবির- আগের ছবিতেই দেখা গিয়েছিল সোনাদার (আবির চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে আবিরের (অর্জুন চক্রবর্তী) সম্পর্কটা বেশ ভালো। যদিও তাঁরা সম্পর্কে কাকা-ভাইপো। তবে তাঁদের সম্পর্কটা দাদা-ভাইয়ের মতোই মজাদার। সোনাদা এতদিন বিদেশে থাকলেও আবিরের সঙ্গে সোনাদার যোগাযোগটা কিন্তু বজায় ছিল। সেটা আগের ছবিতে দেখানো হয়েছে। তবে এখন যখন সোনাদা কলকাতায় চলে এসেছে, তাঁর সঙ্গে আবিরের কথাবার্তা বেড়েছে, একসঙ্গে তারা খেতে যাচ্ছে, বেড়াতে যাচ্ছে, সবই করছে। তাই তাঁদের রসায়নটা এখানে আরও বেশি জমবে বৈকি। অন্যদিকে, আবিরের বন্ধু ঝিনুককেও (ঈশা সাহা) সোনাদা কিন্তু বেশ পছন্দ করেন। এবং তাঁদের এই সম্পর্কটাকে সোনাদা প্রশ্রয় দেন। সবমিলিয়ে এই ছবিতে সোনাদা-আবির-ঝিনুক রসায়নট জমে যাবে। তারা আরও কাছাকাছি আসবে। আগের ছবিতে যেমন দেখা গিয়েছিল সোনাদা শুধু আবিরের সঙ্গে মশকরা করছিল। এবার দেখা যাবে সোনাদা আবিরের বন্ধু ঝিনুকের সঙ্গেও বেশ আড্ডা ঠাট্টা, মশকরা করছে, আড্ডা দিচ্ছে। অন্যদিকে ঝিনুক এবং আবিরও সোনাদার সঙ্গে মশকরা করছে, ইয়ারকি করছে।
আবির ও ঝিনুকের প্রেমটা এই ছবিতে কতটা জমবে?
ঈশা- আমি এই বিষয়ে একটা কথা বলি, আগেরবার যেমন আবির ও ঝিনুকের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে দেখানো হয়েছিল, আবির ঝিনুককে প্রেমের প্রস্তাবও দিয়েছিল। এবার তাদের সম্পর্কটা আরও বেশকিছুটা এগোবে। তারা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই তাদের সম্পর্কে পরিবর্তন তো হবেই। বলা ভালো এই ছবিতে (দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন) ঝিনুক-আবিরের প্রেমটা জমে যাবে। আর আগের বার আবির ও সোনাদা ছবিতে প্রথম থেকে ছিল। আমি পরে এসে যোগ দিই। আর এবার এই তিনজন প্রথম থেকেই রয়েছে। ঝিনুক-আবির-সোনাদার রসায়ন বা বন্ধুত্ব, যেটাই বলো না কেন, পুরোটাই এখানে বেশ মজার।
এর আগে বাংলা ছবিতে ব্যোমকেশ বক্সী হয়েছে, ফেলুদা হয়েছে। সেই সমস্ত গোয়েন্দা গল্পের উপর তৈরি সিনেমা সিনেমাপ্রেমীরা বেশ পছন্দও করেছে। এই ছবিতে দর্শক কতটা সেই গোয়েন্দা গল্পের স্বাদ পাবে?
আবির- না, না এটা কিন্তু এক্কেবারেই গোয়েন্দা গল্প নয়। এটা পুরোপুরি বাঙালিয়ানায় ভরপুর, ইতিহাসকে ছুঁয়ে থাকা রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা গল্প। 'গুপ্তধনের সন্ধানে' ও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন, এই সোনাদা ফ্র্যাঞ্চাইজি সিনেমার মূল বৈশিষ্ঠই হল এখানে রোমাঞ্চ আছে ঠিকই, তবে সোনাদা কিন্তু এখানে মোটেও পেশাদার গোয়েন্দা নন। তিনি হলেন ইতিহাসের প্রফেসর। তিনি টাকার বিনিময়ে কোনও রহস্যের সমাধান করেন না। আর বাংলা ছবিতে 'গুপ্তধন' নিয়ে কিন্তু খুব বেশি ছবি হয়নি। আমরা হয়ত এধরনের গল্প বইয়ে পড়েছি। আর সবথেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সোনাদা, ঝিনুক, আবির চরিত্রগুলি কিন্তু এক্কেবারেই মৌলিক চরিত্র, এটা কোনও সাহিত্য নির্ভর ছবিই নয়।
ঈশা- (প্রসঙ্গক্রমে) এটা এক্কেবারেই ধ্রু দা (পরিচালক), শুভেন্দু দার (গল্পের লেখক) একটা গল্প, চরিত্রগুলোও তাঁদেরই বানানো।
আগেরবার গল্প এগিয়েছিল মনিকান্তপুরকে কেন্দ্র করে। আর এবার দেখানো হচ্ছে সোনাদা, ঝিনুক ও আবির যাবে দুর্গেশগড়ে। তো সেই সূত্রটা কীভাবে তৈরি হয়?
ঈশা- দেখানো হবে সোনাদা যেহেতু প্রফেসর, তো তাঁরই এক ছাত্র (যে চরিত্রটা আরিয়ান করছে) ওর আদি বাড়ি হল দুর্গেশগড়ের আশেপাশে একটা জায়গায়। তো সেখানেই আমরা দুর্গাপুজোর নিমন্ত্রণ পেয়ে যাবো। বাড়ির পুরনো ঐতিহ্যবাহী পুজো। সেখানে গিয়ে একটা অ্যাডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়ে সোনাদা, ঝিনুক ও আবির।
আচ্ছা একটু জিজ্ঞাসা করি, ট্রেলারে একটি সাঁতার কাটার দৃশ্য রয়েছে, যা খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হলো দেখে, গুলি চালানোর দৃশ্যও রয়েছে। সেটা নিয়ে যদি কিছু বলো...
ঈশা- না বাবা, এটা বলা আমাদের এক্কেবারেই বারণ। ধ্রুদা (পরিচালক) জানতে পারলে আমায় মেরেই ফেলবে( হাসতে হাসতে)। এটা জানতে হলে সিনেমাটা মুক্তির জন্য অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
ছবি: শ্যুটিংয়ের সময় কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, ঈশা সাহা ও অর্জুন চক্রবর্তী
শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আবির- ভীষণই ভালো। আমরা বাইরে শ্যুটিং করেছি, ঠাণ্ডার মধ্যে জঙ্গলে তাই বিভিন্ন রকম সমস্যা তো ছিল। আর যেহেতু একটা রোমাঞ্চকর গল্প, তাই বিভিন্ন ধরনের অ্যাকশন দৃশ্য, প্রতিকূলতা এগুলোতো থাকবেই। তবে ধ্রু (পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়) খুব ঠাণ্ডা মাথার লোক, অসম্ভব ধৈর্য ওর। টানা ১৪-১৫ ঘণ্টা শ্যুটিং হচ্ছে, অথচ কোনও চেঁচামিচি করেনি। আর ২৩ দিনের মধ্যে এই রকম একটা ছবির শ্যুটিং করা ভীষণই চ্যালেঞ্জিং। তবে ধ্রুবর সেন্স অফ হিউমার বা সিনেমা সেন্স ভীষণ ভালো। ওর সঙ্গে আমার বেশকিছু মিল আছে, যার জন্য ও ঠিক কী চাইছে, তা আমার বুঝতে সুবিধা হয়েছে। আর এই ইউনিটটা যাঁরা 'গুপ্তধনের সন্ধানে' তে ছিলাম, তাঁরাই আবার দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন করছে, পর্দার সামনে ও পিছনে গোটা টিমটাই আমরা খুব মজা করে, আনন্দ করে কাজ করেছি। যাতে সেই মজাটাই সিনেমার পর্দাতেও ফুটে ওঠে।
ঈশা-(প্রসঙ্গ ক্রমে) এই প্রসঙ্গে আমি একটু বলি, এই ইউনিটটার সঙ্গে আমি দ্বিতীয়বার শ্যুট করছি। কারোর সঙ্গে যদি আমরা বারবার কাছ করি, তাহলে একটা বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এক পরিবারের মতোই আমরা কাজ করেছি। ছবির শ্যুটিং হয়েছে ঝাড়গ্রাম ও কলকাতা সহ আরও বেশকিছু জায়গায়। সব ক্ষেত্রেই আমরা খুব মজা করে কাজ করেছি। একটা জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা লেগেছে। সেই সময়টাও আমরা সবাই মিলে উপভোগ করার চেষ্টা করেছি।
এই ছবিতে একটা ক্ষুদে চরিত্র রয়েছে, কুঁচো। শ্যুটিং চলাকালীন আমি তো যেন কুঁচোর লোকাল গার্জিয়ান হয়ে গিয়েছিলাম। কুঁচো এটা, করো, ওটা করো। কুঁচো আমাকে ঝিনুক বলেই ডাকে। বাকিদের, আবিরদা, সোনাদা বলেই ও ডাকতো। আর একটা বিষয় হল কুঁচোর সামনে যদি কেউ আবির চট্টোপাধ্যায়কে আবির দা বলে ডাকতো, তখন ও অর্জুনকে দেখিয়ে বলতো, আবির দা তো ওটা, এটা তো সোনাদা। তো ওকে নিয়েও দারুণ মজা হয়েছে।
দুর্গেশগড়ের গুপ্তধনের টীমের খুদে সদস্য সবার আদরের কুচোর কান্ডকারখানা#DurgeshgorerGuptodhon In Cinemas 24th May@itsmeabir @dhrubo_banerjee @Arjun_C @m_ishaa @AryannBhowmik @SVFsocial pic.twitter.com/adhMMdLiAu
— Sangeet Bangla (@SangeetBangla) May 21, 2019
এর পরে সোনাদা ফ্র্যাঞ্চাইজির আর কোনও ছবি আমরা কি দেখতে পাবো?
আবির- আরও একটি গল্প তো হওয়ার কথাই, আমি যেটুকু জানি আরও দুটো গল্প হতে পারে। তবে সেটা আগামী বছর যদি নাও হয়, তার পরের বছর হতে পারে। তবে দর্শকদের কাছে 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' নিয়ে শুধু আমার একটাই অনুরোধ এটা পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করে মজা করে দেখার একটি ছবি। আমি আশা করবো দর্শকদের ছবিটি ভালো লাগবে।