ব্যর্থতা সামলানোর সাগা- ছিঁছোড়ে
সেই ছেলেমেয়েদের কথা, যাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হস্টেলের যাবতীয় আনন্দ-মজা-দুষ্টুমি চেটেপুটে নেয়
শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায় : সাম্প্রতিক কালের সবথেকে বড় ব্যর্থতা সামলাতে না পারার নাম ভি জি সিদ্ধার্থ। ক্যাফে কফি ডে চেনের কর্ণধারের উথ্থান এবং সাফল্যের ইতিহাস ঈর্ষা করার মত। কিন্তু ২৯ জুলাই থেকে প্রথমে তাঁর অন্তর্ধান এবং পরদিন নেত্রাবতী নদী থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর সকলেই হতভম্ব। বাজারের দেনা এবং তা সামলাতে না পেরে বোর্ড অফ ডিরেক্টরকে একটা ব্যক্তিগত চিঠি লিখে আত্মহত্যা করলেন! মনস্তত্ববিদরা বললেন, এ এক সামাজিক ব্যাধি। সাফল্যের চাবিকাঠির হদিশ তো তবু জানা আছে, কিন্তু জানা নেই কীভাবে ব্যর্থতা সামলাতে হয়।
পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি নিয়ে এলেন তাঁর নতুন ছবি ‘ছিঁছোড়ে’। বাংলা করলে দাঁড়ায় ছ্যাঁচড়া। সেই ছেলেমেয়েদের কথা, যাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হস্টেলের যাবতীয় আনন্দ-মজা-দুষ্টুমি চেটেপুটে নেয়। আবার বড় কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে পিছপা হয় না। তেমনই ছেলের দল আন্নি (সুশান্ত সিং রাজপুত), অ্যাসিড (নবীন পলিশেট্টি), সেক্সা (বরুণ শর্মা), মাম্মি (তুষার পান্ডে), ডেরেক(তাহির রাজ ভাসিন)। এঁদের সঙ্গে আছেন মায়া(শ্রদ্ধা কাপুর)। কলেজে যেমন একটা দল থাকলে তার বিরুদ্ধেও আরেকটা দল থাকে, এছবিতেও তেমন আছে। আর সেই দলের মাথা রাগ্গি (প্রতীক বব্বর)।এ পর্যন্ত পড়ে য়দি ভাবেন, এ ছবি স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার সিরিজের আরেকটা গল্প, তাহলে সেখানেই মোচড়। কারণ, ছিঁছোড়ে শুরুই হয়, ফর্টি প্লাস সুশান্ত সিং রাজপুত আর একই বয়সী শ্রদ্ধা কাপুরের একমাত্র সন্তানের ক্রাইসিস দিয়ে। জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল যেন জীবনমরণ সমস্যা। বাবা-মা একবারেই য়া পার করে দেশের সেরা কলেজে পড়েছেন, ছেলে যদি তা একবারে পারকরতে না পারে! সেই চাপ কী রোহন নিতে পারবে? কীভাবেই বা কলেজের সেই দল রোহনের মনোবল ফিরিয়ে আনে। ফিরিয়ে আনতে আদৌ পারা য়ায়। একদল বাউন্ডুলে ছেলের জীবনদর্শন কি অনুসরণযোগ্য! এইসব উত্শৃঙ্খলা আমরা কি বাচ্চাদের শেখাব, নাকি তার থেকে দূরে সরিয়ে রাখব। সাফল্যের সিঁড়িতে চড়িয়ে দেওয়া সহজ, সেই খিদে জাগিয়ে দেওয়াও সম্ভব, কিন্তু সেই রাস্তায় য়দি বাধা আসে, ব্যর্থতার মলম, তার মৃত্যুযন্ত্রণার জিয়নকাঠির খোঁজ থাকে তো বাবা মায়ের হাতে?
দেখুন ট্রেলার...
কলকাতায় গত সোমবার দেখানো হয়েছে ছবিটি। শহরের একাধিক কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দেখলেন। মজার মোড়কে গভীর কথা শুনে হাসলেন, হাততালি দিলেন, সিটি বাজালেন। পরিচালকের ন্যারেটিভ যে সফল, তা হলে বসেই বেশ টের পেলাম। অভিনেতাদের কাজটা সহজ ছিল না। একই অভিনেতা একই দৃশ্যে দুটি বয়সে অভিনয় করছেন। কিন্তু তা খুবই সহজে বুনেছেন পরিচালক। একবারের জন্যেও মনে হয়নি, কাজটা জোর করে করা হয়েছে। বরুণ শর্মা আর তাঁর বান্টি এছবির বড় সম্পদ। তুষার পান্ডের মাম্মি নজর কাড়বে। বিশেষত, আহত আঙুল নিয়ে ক্যারাম খেলার দৃশ্য। ডেরেকের ভূমিকায় তাহির রাজ ভাসিন ড্যাশিং। সুশান্ত সিং রাজপুতকে হটনেসে তিনি প্রতিযোগিতার মুখে ফেলেছেন। নবীন পলিশেট্টির ছ্যাঁচড়াপনা দেখে গা জ্বলে যাবে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র হিসাবে সুশান্তের ফিমেল-ফ্যান ফলোয়িং বাড়লেও বেশি বয়সটা তাঁর উপর একটু চেপে বসেছে। বড্ড স্টাইলাইজড অভিনয়। শ্রদ্ধা আবার উল্টো। মায়া য়খন একছেলের মা, তখন ছেলের ক্রাইসিস, স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর ছেলের কাস্টডি ছেড়ে দেওয়া, এইসব দ্বন্দ ভাল ফুটিয়েছেন, কিন্তু কলেজগার্ল হিসাবে তিনি অতি অভিনয়ের শিকার।
প্রীতম সুরারোপিত সবকটি গান বেশ ভাল। বিশেষ করে অরিজিত্ সিংয়ের গাওয়া ইয়াদোঁ কি আলমারি আপনাকে নিয়ে য়েতে পারে আলি হায়দারের পুরানি জিন্স অউর গিটারের নস্টালজিয়ায়। কারণ কে না জানে নস্টালজিয়া সবথেকে বেশি সেলেবল। আমি রিভিউয়ে স্টার সিস্টেমে বিশ্বাসী নই। তবে এছবি একবার দেখে মন ভরবে না। আরেকবার বন্ধুদের সঙ্গে যেতে ইচ্ছে করবেই। তাই তো কলেজের বন্ধুদের ফোন করে বলছি, বন্ধু চল। থ্যাঙ্কিউ নীতেশ তিওয়ারি। দঙ্গলের পর আপনি নিরাশ করেন নি।