তিন নায়িকার যাদুতে মুগ্ধতার ম্যাগনেটিজম
আরো একবার
ছবির নাম: আরো একবার
রেটিং: ***1/2
টেলিফিল্ম ও সিরিয়াল মেকার জন হালদারের প্রথম ছবি। তিনে নেত্র আপ্তবাক্যের পুরোপুরি সফল রূপ। রূপা, ইন্দ্রাণী ও ঋতুপর্ণা এই ছবির তিনটি চোখ, যাদের মোহে দর্শক বাঁধা পড়বেন, মন্ত্রমুগ্ধ হবেন, আরও একবার হলমুখো হলেও আপত্তি নেই। বহু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হলে, তবেই এমন ম্যাজিক ক্রিয়েট করা যায়।
নারীর জীবন, বিবাহই স্থির করে দেয় জীবনের গতিপ্রকৃতি। মেয়েলি বন্ধুত্ব স্থায়িত্ব পায় না। এমনই এক ভোকাট্টা হয়ে যাওয়া বন্ধুত্ব হঠাতই প্রাণ পায়। তিন বান্ধবী আবার মিলিত হয়ে বিচ্ছেদের বহু বছর পরে। জীবননদী দিয়ে তখন অনেক জলই গড়িয়ে গিয়েছে। ঝড় ঝাপটায় এফোঁড়-এফোঁড় হয়ে গেছে পাল, তবুও নতুন করে খুঁজে পেল, কিন্তু এ নতুন কতটা শান্তিময়, কতটুকু সুখকর। তিন জাতীয়পুরষ্কার বিজয়িনী যেন কবিতা লিখলেন সারা ছবি জুড়ে।কখনও ডানা মেলে ওড়ে অনাবিল আনন্দ, কখনও বৃষ্টিধারার মতো ধেয়ে আসে কান্না, কখনও আকাশজোড়া নিঃশব্দ হতাশা। সব মিলিয়ে দশর্ককে প্রায় আবেগের ওয়ান্ডারল্যান্ডে পৌছে দিয়েছেন তাঁরা।
প্রথম ছবি বলেই সম্ভবত একটু বেশিই বলার চেষ্টা করে ফেললেন পরিচালক। দুটো বড় মিসটেকের জন্য বেশ ক্ষতিপূরণ। এক, ছবির শেষটা কী হবে, সেটা নিয়ে বড়সড় ধন্দ। ছবিতে একটি স্ট্রাইকিং মুহূর্তে তিন বন্ধুর আবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। রাতের কলকাতার রাস্তায় তিন বন্ধুর সেই চরম তিক্ত কথোপকথনের দৃশ্যটা নিঃসন্দেহে আপনাদের শ্বাস রুদ্ধ করে রাখবে। এমন উত্তুঙ্গ মুহূর্ত ক্রিয়েট করেও অযথা অনেকটা বেশি ছবিটাকে টেনে নিয়ে গেলেন পরিচালক। তার ওপর ভুল সময়ে ইন্টারভ্যাল। দর্শক খানিকটা মিসগাইডেডই হবেন।
দুই, ছবির মিউজিক। এমন সুন্দর সাবজেক্টে মিউজিক হতে পারত অসামান্য জোরের জায়গা। তার বদলে সেটাই উইক পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুরের মধ্যে আকর্ষণ, আভিজাত্য কোনওটাই নেই। কখনও সিচুয়েশনে বেশি লাউড। রূপা গাঙ্গুলির ছেলের ভূমিকায় সাহেব ভট্টাচার্য আর ইন্দ্রাণীর মেয়ের ভূমিকায় সায়নী। দুজনই এই ছবির মোড় ঘোরানোর কাজ করে। দুজনের অভিনয় বেশ জোরালো। নতুন ক্যামেরাম্যান শুভঙ্করের ক্যামেরাওয়র্কও স্থানবিশেষে ড্রামা তৈরি করে।
আরও একবার চান্স হয়ত পাবেন না পরিচালক। কিন্তু অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল ছবির এ়ডিটিং ও মিউজিক সম্পর্কে। যে ছবি একটি উত্তুঙ্গ মুহূর্তে বিয়োগান্তক হলেই অনেক বেশি স্মরণযোগ্য হয়, তাকে জোর করে মিলনান্তক করতে গিয়েই সমস্যা বাধিয়েছেন। নম্বর কাটা গেলেও অতিরিক্ত নম্বরে সাড়ে তিনটি স্টার পাবে এই ছবি। আরও একবার স্মরণীয় হয়ে থাকবে, ঋতুপর্ণার সংযত অভিনয়, রূপা ও ইন্দ্রাণীর মনমাতানো সৌরভে। যেটা ঠিক নম্বর দিয়ে মাপা যায় না।