জাস্টিস মিলনা মুশকিল হি নেহি, মুমকিন ভি হ্যায়!
আমাদের দেশের সবচেয়ে দ্রষ্টব্য ভুলভুলাইয়া কোনও টুরিস্ট স্পট নয়, বিচারব্যবস্থা। ল অ্যান্ড অর্ডার সিস্টেম। সর্বনেশে আইনকানুনের নাড়িভুঁড়ি বের করে আনলেন পরিচালক সুভাষ কপূর। কমেডি নয়, সিরিয়াসও নয়, একটা আজব টেকনিকে মেলে ধরলেন ফাস গয়ে রে ওবামা-র পরিচালক, দর্শকের কাছে যে-ভাষাটা বোধগম্য, অতি সহজবোধ্য। দ্বিতীয় যে কারণে এ ছবি একটা তৃতীয় মাত্রা পাবে তা অবশ্যই, বোমান ইরানি-আর্শাদ ওয়ার্সি দ্বন্দ্ব-সমাস।
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম: জলি এলএলবি
রেটিং: ****
আমাদের দেশের সবচেয়ে দ্রষ্টব্য ভুলভুলাইয়া কোনও টুরিস্ট স্পট নয়, বিচারব্যবস্থা। ল অ্যান্ড অর্ডার সিস্টেম। সর্বনেশে আইনকানুনের নাড়িভুঁড়ি বের করে আনলেন পরিচালক সুভাষ কপূর। কমেডি নয়, সিরিয়াসও নয়, একটা আজব টেকনিকে মেলে ধরলেন ফাস গয়ে রে ওবামা-র পরিচালক, দর্শকের কাছে যে-ভাষাটা বোধগম্য, অতি সহজবোধ্য। দ্বিতীয় যে কারণে এ ছবি একটা তৃতীয় মাত্রা পাবে তা অবশ্যই, বোমান ইরানি-আর্শাদ ওয়ার্সি দ্বন্দ্ব-সমাস। দুজনের অভিনয় প্রতিভা নিয়ে সন্দেহের অবকাশই নেই। অনেক কিংবদন্তি অভিনেতাকেও একশ মাইল পেছনে ফেলে দেবেন এঁরা। বাড়িয়ে বলছি না একটুও।
আসি আইনের কথায়। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আর উকিলের কাগজ পড়ে দেখার চেষ্টা করেছেন কখনও? একটি শব্দের মানেও বুঝতে পারবেন না। কারণ সাধারণ মানুষ যাতে না বুঝতে পারে, সেইরকম ভাষাতেই ওইসব কঠিন কঠিন ভাষাগুলো লেখা হয়েছে যে! বিচারের নামে ক্ষমতার অহং, কোটিকোটি টাকার খেল, সত্যকে দুমড়ে মুচড়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া, দুর্নীতির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকা... কিছু চেনা, কিছু অচেনা ছকি বেড়ে স্ক্রিপ্ট লিখেছেন পরিচালক।
সত্য আর মিথ্যের খেলাটা প্রায় সমান্তরালে চলে এই বিচারব্যবস্থায়। একটা আইডিয়া পাওয়া গেন এ ছবি থেকে, কারণটা খুব পরিচ্ছন্ন। সাধারণ ভাষায় আমরা যাকে বলি ভাল উকিল, তার ভেতরের `সেটিং` গুলো এমন দেখা গেল এই ছবিতে, হাঁ-টা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। বোমান ইরানি যে মাপের পারফরম্যান্স দিলেন এখানে, তাতে পরের ছবিতে যে-কোনও চরিত্রে তাঁকে মেনে নিতে একটু দেরিই হবে। নরুণচেরা তীক্ষ্ণ চোখ, উদ্দীপ্ত ভাষণ দেখে মনে হচ্ছিল বিপরীতে যে-কোনও দুঁদে উকিলকে যুক্তির মারপ্যাঁচে দিব্যি পাটকাঠির মতো মুটমুট করে ভেঙে ফেলতে পারেন। স্ক্রিপ্টে যা-ই থাক না কেন, শুধু সংলাপ পড়ে এমন উচ্চদরের অভিনয় টেনে আনা সম্ভব নয়। এবার আসি নামভূমিকার নায়কের কথায়। জলি এলএলবি নেহাতই কম-ইংরিজি জানা, মীরাটে বড় হওয়া, ল-পড়তে-আসা ছেলে। যা হোক একটা হিল্লে হলেই হল।একটি ঘটনাই বদলে দিল তার জীবন। এক শিল্পপতির ল্যান্ড রোভার চাপা দেয় চার ফুটপাথবাসীকে। বড় উকিলের সক্রিয় উদ্যোগে বেকসুর খালাশ হয়ে যায় অভিযুক্ত। এই অবস্থায় একটা দুঃসাহসিক কাজ করে বসে আরশাদ অর্থাত্ জলি এলএলবি। পিআইএল দায়ের করে। আইনের ব্যবস্থায় দুর্নীতির যে জটলা, তারই ফাঁকফোঁকরে ঢুকে অবশেষে দোষীর শাস্তি আদায় করে আনে। জাস্টিস মিলনা মুশকিল হি নেহি, মুমকিন ভি হ্যায়। টানটান গল্প আগে থেকে বলার দরকার নেই। তাহলে মিস করবেন আরশাদ-বোমান জুটিকে। সঙ্গে অমৃতা রাওয়ের চমত্কার অভিনয়টাও। বহুদিন বাদে আবার দেখা গেল সুন্দরীকে।
তবে পরিচালকের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব অন্যখানে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাস্তবের জমিতে হাঁটার ক্ষমতায়। অসংখ্য কমেডি করার সুযোগ পেয়েও তাকে নিংড়ে নিয়ে ব্যবহার করেননি। কোনও স্বর্গসুখকর এন্ডিং-এর দিকেও এগোননি। বাস্তবের এক সত্ আইনজীবী বিচারব্যবস্থাকে প্রশ্ন করে যত দূর সত্যকে অনুধাবন করে জাস্টিস বের করে আনতে পারে, ঠিক ততটাই তিনি পর্দায় দেখিয়েছেন।
আরশাদ ওয়ার্সি নাকি বলিউডে শুরু করেছিলেন কোরিয়োগ্রাফার হিসেবে। ভাগ্যিস সেসব পুরনো দিনের কথা। মুন্নাভাইয়ের সার্কিটকে যে চরিত্রে পাওয়া গেল তাতে আরও সিকোয়াল দেখার প্রত্যাশায় রইলাম। আশার কাহিনি এই যে, কোটির বাজারে এমন চমকে দেওয়া কম বাজেটের ছবিও হচ্ছে যার দর্শকসংখ্যা তুলনায় কিছু কম নয়। অন্য ধারার ছবি না বলে এগুলোকে একটা অন্য নাম দেওয়া উচিত। চোখ খুলে দেখার ছবি। চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর ছবি।