(অ)শুদ্ধ (অ)শুচি, (অ)সুস্থ (অ)রুচি
পরশুরামের কোনও এক রম্যরচনায় পড়েছিলাম। ক ভালবাসে খ-কে, খ ভালবাসে গ-কে, গ আবার ঘ-এর প্রেমে পাগল, ঘ হৃদয় দিয়েছে ঙ-কে, ঙ আবার মন প্রাণ সঁপেছে ক-কে। সবাই সবাইকে ভালবাসে, কিন্তু কেউ কাউকে পাচ্ছে না। লেখককে কেউ উপদেশ দিয়েছিলেন, এক কাজ করুন, প্রেমচক্রে একটা উল্টো পাক দিয়ে দিন।
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- শুদ্ধ দেশি রোমান্স
রেটিং- **
পরশুরামের কোনও এক রম্যরচনায় পড়েছিলাম। ক ভালবাসে খ-কে, খ ভালবাসে গ-কে, গ আবার ঘ-এর প্রেমে পাগল, ঘ হৃদয় দিয়েছে ঙ-কে, ঙ আবার মন প্রাণ সঁপেছে ক-কে। সবাই সবাইকে ভালবাসে, কিন্তু কেউ কাউকে পাচ্ছে না। লেখককে কেউ উপদেশ দিয়েছিলেন, এক কাজ করুন, প্রেমচক্রে একটা উল্টো পাক দিয়ে দিন। তাহলে খ ভালবাসবে ক-কে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাতেও অবশ্য সমাধানের দোর খুলল না, মোদ্দা ব্যাপারটা একই রকম থেকে গেল।
মণীশ শর্মা এর আগে "ব্যান্ড বাজা বারাত" করেছেন। বানিয়েছেন "লেডিজ ভার্সাস রিকি বেহল"। বারাত-বারাত করে মোটামুটি একটা ল্যাবরেটরি খুলে ফেলেছেন। এ ছবিতে বারাত নিয়ে অবসেশনটা প্রায় পাগলামির পর্যায়ে। এতটুকু বললে অবশ্য চলে না। প্রতিটি পাগলামিরই আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি রেখেছেন। এবং সেই যুক্তিসমূহ যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে তাঁর কেন্দ্রীয় চরিত্রেরা আউড়ে যান। কখনও বাথরুমে, কখনও শাদির আসরে, কখনও ঘরে বসে আপন মনে।
শাদি আর বারাত যুগ যুগ জিও। কিন্তু যুগ বদলাচ্ছে। তাল মিলিয়ে যশরাজ ফিল্মস-ও বিয়ে কী ও কয় প্রকারের নতুন ছাত্রবন্ধু লিখছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বদলেছে। আমি-তুমি কাব্য রচনা নেই। মাল্টিপল চয়েস আর টিকমার্ক। লাস্ট মোমেন্টে ওস্তাদের মার। বিয়ের মালা পরানোর আলপিন দূরত্বেও ডিসিশন চেঞ্জ করার অপশন আছে। বাথরুম থেকেই রাস্তা ক্লিয়ার। শাদির মন্ডপ থেকে দৌড় দিতে পারেন এ যুগের আগমার্কা যশরাজ নায়ক। সব মেয়ের মধ্যেই শাদির মেটিরিয়্যাল খুঁজে পান, আবার দিল্লি কা লাড্ডু খেতেও চান না। বিষম বিপদ!
যশরাজ ফিল্মস এখন সবে নিউ ফর্মুলা ট্রাই করছেন। ২০১০ পর্যন্ত যেমনটা ছিল, মানে প্রেম আর বিয়ের মধ্যে আর পেয়ালা আর চুমুকের সম্পর্ক, সেটা আর নেই। তার মধ্যে অনেকগুলো হোঁচট আর হেঁচকি ডেভেলপ করেছে। লিভ ইন। ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। বয়ফ্রেন্ড এক্সচেঞ্জ। বিয়েতে অসুস্থ অরুচি। নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুত এই গোলকধাঁধায় বেশ কানামাছি খেলেছেন। পরিণীতি চোপড়া আর নবাগতা বাণী কপূর। শেষোক্ত সুন্দরীর বিয়ের মন্ডপ থেকে নায়ক পালিয়েছেন। বাথরুম যাওয়ার নাম করে। প্রথমোক্ত সুন্দরী, মানে পরিণীতি চোপড়া আবার পালিয়েছেন সেই নায়কেরই বিয়ের মন্ডপ থেকে। বাথরুম যাওয়ার নাম করে। টিট ফর ট্যাট। এখানেই বাথরুম ব্রেক পড়ে।
সব মশলাই তো হল। সেক্সের ডোজ-ও যথেষ্ট। কিন্তু যে ভাঁড়ারে টান পড়ল, সেটা দুঃসাহস। নির্ভয়ে পা ফেলতে না-পারার জড়তা। তাই প্রতি সংলাপে ফুটনোট। কী করছি, কেন করছি, কেনই বা কাছে যাচ্ছি, কেনই বা দূরে যাচ্ছি, কেন দৌড়ে পালাচ্ছি, কেন আবার বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে লিভ-ইন করতে চলে আসছি। না-বলা কথার মধ্যেই দর্শক খুঁজে পেতেন নিজের জগত। দিতে পারতেন নিজের মতামত। সে অবকাশ পাওয়া গেল কই? সংলাপ প্রায় চুইংগামের মতো, টানতে টানতে কোথায় গিয়ে থামবে কেউ জানে না।
"হম দিল দে চুকে সনম" যদি এখনও স্মৃতিতে থাকে তবে নিশ্চয়ই মনে আছে ঐশ্বর্যা ও সলমন খানের মধ্যে সেই কোকাকোলা এক্সচেঞ্জ সং সিকোয়েন্স। এ ছবিতে সেই কোকা কোলা প্রপের মানেও বদলে গিয়েছে। ঠান্ডা মতলব কোকা কোলা। যখন কিছুই বুঝতে পারছেন না। খাবেন না মাথায় দেবেন বুঝতে পারছেন না, তখনই ঠান্ডা বলুন। নিমেষে কঠিন, জটিল সব গিঁট হাওয়ায় ভেসে চলে যাবে। ছবিতে নবাগতা বাণী কপূর বার বার এই কাজটি করেন। ফর্মুলা বদলের এটাও একটা ফর্মুলা।
এবার শুদ্ধ শুচিমনে একটিই কথা বলা যায়। এই মাগ্গিগণ্ডার বাজারে শুধু একটি বারাতের সেট আর ইন্ডোর মিলিয়ে একটি গোটা ছবি বানিয়ে দিতে পারেন যে পরিচালক, তার জন্য বহু প্রযোজক `প্রেজেন্ট প্লিজ` বলবেন। হালকা-ফুলকা গল্পে আর গানে একটা নর্থ ইন্ডিয়ান চার্ম আছে, যা অনস্বীকার্য। ভাল লাগে ঋষি কপূরের কমেডি। প্রেমচক্রে উল্টোপাক দেওয়ার নিদারুণ, নিরন্তর চেষ্টা করে গিয়েছেন। পরিণীতি খুব স্বচ্ছন্দ। যেমন সাবলীল, তেমনই ফোটোজিনিক। বাণী কপূরও বেশ প্রমিসিং। শুধু শুদ্ধ দেশি রোমান্স করতে গিয়ে একটু বদহজম হয়ে গেল সুশান্ত সিং-এর। যশরাজ ফিল্মস জঁরের সবচেয়ে বড় "বেচারা" নায়ক, সবচেয়ে প্রথম এক্সপেরিমেন্টের গিনিপিগ হিসেবে এখনই কুইজবুকে ঢুকে যেতে পারেন!