রেডিও ধার্মিক মীরের কাছে মহীষাসুরমর্দিনী আজও গাইডবুক
তিনি মীর। তিনি এফএম-এর বীর। স্বকীয় ভঙ্গীতে উপস্থাপনার জন্য তিনি অজেয়। তিনি ধর্মে মুসলমান আবার নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে রেডিও ধার্মিকও বটে। সেই মীর, রেডিওর স্বর্ণযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান মহীষাসুরমর্দিনীর বিষয়ে খোলাখুলি কথা বললেন ২৪ ঘণ্টা ডট কমের প্রতিনিধি নির্ণয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে। আলোচনায় উঠে এল সমকাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ঘটকালির প্রসঙ্গ...
‘মহালয়া’ এবং ‘রেডিও’ এই শব্দ দুটি পরপর শুনলে আপনার মনে ঠিক কোন অনুভূতি জন্ম নেয়?
মীর- ভোর বেলায় ঘুম থেকে ওঠার একটা চূড়ান্ত ভাল অভ্যাস আমার অনেক বছর ধরে রয়েছে। সাধারণত স্কুল জীবনে অনেকেই ভাবে, এবার কলেজে উঠলে বাঁচা যায়। কারণ, ডে কলেজে ভর্তি হয়ে গেলে আর সকালে উঠতে হবে না। কিন্তু সৌভাগ্য না কি দুর্ভাগ্য আমি বলতে পারব না, তবে স্কুল শেষ হতেই আমি ভর্তি হয়ে গেলাম মর্নিং কলেজে। ফলে ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠাটা আমার রয়েই গেল। আর কলেজের ফার্স্ট ইয়ারেই আমি রেডিওতে ছাত্র হিসাবে ভর্তি হয়ে গেলাম। আমার কর্ম জীবনও শুরু হয়ে গেল তখন থেকেই। ফলে সেই থেকে ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠা আমার জীবনে আজও চলছে পেশা এবং নেশার তাগিদে। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই আমি যে কাজটা করি সেটা হল- রেডিওটা চালিয়ে দেওয়া। অনেক সময় এমনও হত যে রাত থেকে রেডিওটা চলছে, আর বন্ধই করা হয়নি। তখন তো এত ইলেকট্রিক রেডিও ছিল না, ফলে আমার বাড়িতেও সেই ব্যাটারির রেডিওই। তাই সকালের দিকে কখনও হয়ত সারা রাত ধরে চলার কারণে রেডিওর ব্যাটারিটা বসে যেত। ব্যাটারি বদলে নিয়ে আবার চালাতাম রেডিও। সেই ছেলেবেলা থকে আসলে রেডিওটা আমার সঙ্গে সারাক্ষণ চলতে থাকত। অনেকটা যেরকম দর্জির দোকানে বা সেলুনে সব কাজের সঙ্গে সঙ্গে রেডিওটাও চলতে থাকে ঠিক তেমনই। তাও রোজ সকালে রেডিও শোনে এমন একটা ছেলের কাছেও মহালয়ার দিনটা বরাবরই স্পেশ্যাল। মহালয়ার আগের রাত্রে মনে থাকে যে কাল আরও একটু আগে থেকে চালাতে হবে। কারণ, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র নামক একজন মানুষ রেডিওতে কিছু করবেন। আমি তো রেডিওতেই খাচ্ছি-দাচ্ছি-ঘুমোচ্ছি... তবু এত বছর বাদেও আমার এখনও ভাল লাগে। এতটুকু ফিকে হয়নি। এখনও সেই মোহটা আছে এবং এ হচ্ছে একটা অভ্যাস। এক আধবার এমনও হয়েছে যে ঘুম হয়ত ভাঙেনি, খুব ক্লান্ত থেকেছি হয়ত। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই খুব আফশোশ হয়েছে (গলায় হতাশার সুর স্পষ্ট), ইশ! মিস হয়ে গেল...
আপনি তো ধর্মে মুসলমান। কখনও শুনতে হয়নি, মুসলিম হয়ে আপনার এত মহিষাসুরমর্দিনী শোনার আছেটা কী?
মীর- আলবাত শুনতে হয়েছে। এবার ব্যাপারটা হচ্ছে, আমার প্রথম ধর্ম কিন্তু রেডিও। আর আমি যেহেতু আজও নিজেকে রেডিওর ছাত্র মনে করি, ফলে সেই ছোট থেকেই রেডিও শোনার ফলে কোন স্টেশনে কী অনুষ্ঠান কখন হয় তা আমার নখ দর্পণে এবং সেগুলি শোনা বরাবরই আমার অভ্যাসের মধ্যেই ছিল। সে দিক থেকে মহিষাসুরমর্দিনী আমার কাছে রেডিও প্রোগ্রাম হিসাবেই ছিল। আমি কোনও দিন ধর্মের দিক থেকে প্রোগ্রামটাকে বিচার করিনি। আমি মনে করি এটা একটা ক্ল্যাসিক রেপ্রেজেন্টেশন অফ রেডিও। সত্যি, মহিষাসুরমর্দিনী ইজ ক্ল্যাসিক।
এত যুগ আগেকার একটা প্রোগ্রাম শুনতে আজও আপনার শ্রোতারা ঘুম থেকে অ্যালার্ম শুনে ওঠেন। বর্তমান সময়ের একজন স্বনামধন্য রেডিও উপস্থাপক হিসাবে আপনার হিংসা হয়না মহিষাসুরমর্দিনীর জনপ্রিয়তার কথা ভাবলে?
মীর- (হেসে বললেন) হিংসা নয়, বরং শ্রদ্ধা জাগে। মনে হয়, আহা, এমন একটা কাজ যদি করে যেতে পারি যেটা বছরের পর বছর মানুষ শুনবে। আসলে আমরা তো এখন কনটেম্পোরারি রেডিও করছি। মানে আজ যেটা করছি সেটা আজই শেষ, কাল আবার অন্য কোনও বিষয়। মহিষাসুরমর্দিনী বা গীতমালা ক্ল্যাসিক কাজ। যে মানুষরা এই কাজ করে গিয়েছেন আমরা তাঁদের নখের যোগ্যও নই। কিন্তু হ্যাঁ, ওই ম্যানুয়াল বা গাইড বুকের মতো করে সঙ্গে রাখতে হয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের এই কাজকে। ওঁরা যে ডেডিকেশন দিয়ে কাজটা করে গিয়েছেন তা আর আজ হয় কোথায়! যে কোনও একটা কাজ হলে লোকে সেটি দেখেন এবং বিচার করেন। কিন্তু আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, সেই কাজের প্রস্তুতিটা কেমন ছিল। জগন্নাথ বসুর কাছে থেকে আমি সেই সলতে পাকানোর গল্প বিশদে শুনেছি। ফলে আমার কাছে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র হলেন মিথ, জিনিয়াস, কিংবদন্তি- এসবের থেকে আরও অনেক বেশি কিছু। নামটা উচ্চারণ করতে গেলেই যেন মনে হয় একটা আভিজাত্য এল শরীরে (স্বকীয় ভঙ্গিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে মীর উচ্চারণ করলেন ‘বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র’)।
বীরেন্দ্র কৃষ্ণের এই বিপুল জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন খ্যাতির মধ্যগগণে থাকা মহানায়ক উত্তম কুমারও। কারণটা কী বলে আপনার মনে হয়?
মীর- ঘটনাটা ছিয়াত্তর সালের। এই ব্যর্থতার আসল কারণটা উত্তম কুমারের পারফরম্যান্সের সঙ্গে যুক্তই নয়। আমার মনে হয়, মহিষাসুরমর্দিনীতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র এমন একটা ছাপ রেখে গিয়েছেন এবং তখনই তিনি এমন একটা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলেন যার প্রতাপে উত্তম কুমারের মতো সুপার স্টারও দাঁড়াতে পারলেন না। উত্তম কুমার একজন লেজেন্ড। তিনি স্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত একজন শিল্পী। তাঁর চেষ্টা, অভিব্যক্তি এই সবকিছু মিলিয়েই বলছি, তিনি বেশ ভাল ছিলেন এবং তাঁকে বিচার করার মতো খুব কমই যোগ্য মানুষ পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর ব্র্যান্ড হেরে গেল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ব্র্যান্ডের কাছে। এটা দুটো ব্র্যান্ডের লড়াই ছিল। বীরেন্দ্র ভদ্র বনাম উত্তম কুমার...ব্র্যান্ড বনাম ব্র্যান্ড। এক্ষেত্রে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র যেহেতু অনেক বেশি দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠিত তাই তাঁর সামনে টিকতেই পারলেন না একজন নবাগত। অর্থাত্, এখানে উত্তম কুমার একজন নবাগত ছিলেন। মহিষাসুরমর্দিনীর ক্ষেত্রে উত্তম একদম জুনিয়র আর্টিস্ট লেভেলের হয়ে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- উত্তম কুমারের মহালয়ার পর শুধু ইট ছোড়া বাকি ছিল
মহিষাসুরমর্দিনী নামক প্রযোজনাটির কোনও খামতির দিক চোখে পড়ে আপনার?
মীর- নাহ্। একেবারে নিখুঁত একটা কাজ। আমি যদি ক্রিটিক্যালি দেখব বলেও ভেবে থাকি, তাহলেও পারব না। আর তাছাড়া এই দুঃসাহস না দেখানোই ভাল।
সুযোগ পেলে মীরত্ব আরোপ করে মহিষাসুরমর্দিনী রিমেক করবেন?
মীর- (প্রশ্ন শুনেই চোখে মুখে এমন একটা ভাব যেন সাক্ষাতকার গ্রহণকারী মহাপাপ করে ফেলেছেন) কিছু জিনিস রিমেক করতে নেই। এটা তেমনই।
বাণীকুমার, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিকদের সেই স্বর্ণযুগে যদি কাজ করার সুযোগ পান, তাহলে কি তা গ্রহণ করবেন না কি আজকের এই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য ও তারকা ইমেজের রাজপাটেই বহাল তবিয়তে থাকতে চাইবেন ?
মীর- নিশ্চই, যদি সুযোগ পাই তাহলে আমি আগের রাত থেকে জেগে থাকব এবং চা-চিনি-দুধ ইত্যাদি রেডি করে রাখব। মোটামুটি ভোর চারটে নাগাদ উনুন বা গ্যাস ওভেন জ্বেলে চা বসিয়ে দেব। বীরেন ভদ্র গঙ্গাস্নান সেরে আকাশবাণী কেন্দ্রে প্রবেশ করতেই বাণী কুমার, পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং তাঁর জন্য আমার তৈরি করা চা পরিবেশন করব। ব্যাস ওটুকুই। আমি তাতেই ধন্য।
সে কি! পারফর্মার হিসাবে মীর যোগ দিতে চাইছেন না কেন?
মীর- আমি খুব বেশি হলে বীরেন ভদ্র, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, বাণী কুমারদের জন্য চা তৈরি করার দায়িত্বটাই নিতে পারি। এর থেকে বেশি যোগ্যতা আমার নেই। আগের রাত থেকে জেগে চায়ের কাপ-প্লেট ধুয়ে টুয়ে রেখে আমি চা তৈরি করে সেটা পরিবেশন করে দিতে পারি। আমি নিজেকে ঠেলেঠুলে এই পর্যন্তই নিয়ে যেতে পারব। এর বাইরে, ওই ঘরে (যে ঘরে তাঁরা কাজ করতেন) আমার প্রবেশাধিকার নেই।
তবে হ্যাঁ, আমি সচেতনভাবে একটা কাজ করতে পারি। আমি আমার এই তারকা ইমেজটাকে ব্যবহার করে মহিষাসুরমর্দিনীর মতো একটা অসামান্য প্রোডাক্টকে আরও বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইব। আমার সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইব এই অনুষ্ঠানকে। তার বাইরেও আমার যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সেটাও পূর্ণ ব্যবহার করতে চাইব এই কাজে। আর এটাই হবে আমার অংশগ্রহণ।
মহিষাসুরমর্দিনীর এই স্তোত্রগুলোকে কখনও আপনার হিন্দু স্তোত্র বলে মনে হয়েছে?
মীর- নাহ্। আমার মনে হয়, আমি সবার আগে একজন ভারতীয়। তারপর একজন বাঙালি। আমি আর পাঁচজন বাঙালির মতো এই অনুষ্ঠান শুনে থাকি এবং মুগ্ধ হই। আমার কখনও এ গুলিকে হিন্দু স্তোত্র বলে মনে হয় না।
আপনি তো শ্রোতার মন বোঝেন। কী মনে হয়, শ্রোতারা কি এবিষয়ে আপনার মতই পোষণ করেন নাকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন?
মীর- আমি জানি না। আজকাল তো ভাবানো হচ্ছে। কেউ তো আর ভাবছে না। মানে, ঋত্বিক ঘটক ভাবা প্র্যাকটিস করার কথা বলেছিলেন। আর এখন ধর্মের ঘটকালি করার জন্য প্রচুর মানুষ বাজারে এসে গেছেন। বাজারে যারা ধর্মের ঘটক, যারা দালাল তারা লোকজনকে ভাবাচ্ছে। তারাই লোকজনকে বলে দিচ্ছে, এটা হিন্দুদের, এটা মুসলমানদের...তারা পার্বতীপুর গ্রাম চেনে না। যেখানে ৬০-৭০টি মুসলিম পরিবার মা দুর্গার চুল তৈরি করে। তার একবারও এই যোগাযোগটার কথা ভাবে না। যে ত্রিনয়নী মা দুর্গাকে দেখে হাত কপালে ওঠে, তার কয়েক ইঞ্চি উপরে মায়ের যে চুল তা এসেছে ডোমজুরের পার্বতীপুর গ্রাম থেকে। এই গ্রামে বংশ পরম্পরায় মুসলিম পরিবারগুলি এই কাজই করে চলেছেন দশকের পর দশক ধরে।
আপনার কথা অনুযায়ী ‘ধর্ম নিয়ে যারা ঘটকালি করছে’ তাদের ময়দান কি এখন সোশ্যাল মিডিয়া?
মীর- কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলেই ভাল হত। আমরা ডিজিটাল হতে গিয়ে ইমোশনাল হতে ভুলে গেছি। আমাদেরকে কিছু করানো হচ্ছে সারাক্ষণ। কেউ যেন সর্বদা আমাদের কান ধরে বলে দিচ্ছে, এই পোস্টটা কর, এই টুইটটা কর বা এই টুইটকে নিন্দা কর এইসব আরকি। আমার মতে সোশ্যাল মিডিয়াই সবথেকে অ্যান্টি সোশ্যাল একটি হাতিয়ার। এটা ছুড়ি, বোমা, সন্ত্রাসবাদী এদের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এইসব ‘অ্যন্টি সোশ্যাল’ কারা?
মীর- যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। শিক্ষাদীক্ষার বালাই নেই। অন্য কারও প্রোফাইল পিকচার ডাউনলোড করে নিজের ডিসপ্লে পিকচার করে নিয়েছে। মানে অসংখ্য এরকম মানুষ রয়েছে...
এরা তো আপনার শ্রোতাও...
মীর- হ্যাঁ, এরা আমার শ্রোতা, আমার দর্শক (গলায় হতাশা স্পষ্ট)।
এই শ্রোতা-দর্শকদের দেখলে মনে হয় না, আমি কাদের জন্য পারফর্ম করছি যাদের বিচার বুদ্ধি নেই?
মীর- নিশ্চই মনে হয়। আবার এটাও মনে হয়, আমরা তাহলে কী কমিউনিকেট করছি? এই যে এত রিচ, এত রিঅ্যাক্সন এসব নিয়ে আমরা মাতামাতি করি সেসব আসলে যাচ্ছে কোথায়! যেসব বিষয় সিরিয়াস সেটাকে ক্যাজুয়ালি নেওয়া হচ্ছে। আর যেটা অত্যন্ত ক্যাজুয়াল সেটাকে নিয়েই বরং রণমূর্তি ধরছে অনেকে।
কারণটা কী?
মীর- কারণটা হল স্রোতে গা ভাসানো। মানে একজন সেলেব্রিটিকে গালাগাল দেব, তাঁর সম্পর্কে দু’-চারটে নোংরা কথা বলব। আর তাতেই মনে হবে, জীবনে কিছু একটা অর্জন করে ফেললাম। সম্প্রতি এক জায়গায় বলছিলাম, হকি আমাদের জাতীয় খেলা। কিন্তু এটা একদম বদলে দেওয়া উচিত। সে জায়গায় সেলেব্রিটি ব্যাশিং-কে জাতীয় খেলা করা উচিত। কারণ, আমরা এ জাতীয় খেলায় ইদানিং বেশ দক্ষ।
ডিজিটাল রেভেলিউশনের জন্য রেডিওকে কী ভবিষ্যতে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে?
মীর- ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য রেডিওর জনপ্রিয়তা ইতিমধ্যেই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। আগে যেমন রেডিওতে একটা গান শোনার জন্য একজন শ্রোতাকে অপেক্ষা করতে দেখেছি, সেটা এখন নেই। কারণ, অনেকেই নিজেদের মতো করে মিউজিক স্যাম্পলিং-এ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কিন্তু, আপনার অনুষ্ঠান তো এখনও বেশ জনপ্রিয়...
মীর- হ্যাঁ, ঠিক। আমার অনুষ্ঠান আজও জনপ্রিয়। হয়ত ব্যতিক্রম। আমি কৃতজ্ঞ। আমি জানি না, এই সৌভাগ্য কতদিন টিকবে? কিন্তু হ্যাঁ, আমার নিজের ট্যালেন্টের উপরও একটু ভরসা রয়েছে। আমি জানি একটা চুম্বকের মত কাজ করতে পারি আমি যখন আমার ইচ্ছা হয়। কিন্তু সেই ক্ষমতাটা শেষ অবধি কতদিন টিকে থাকবে...কারণ এখানে একটা কোম্পানি রয়েছে, তার পলিসি রয়েছে, তার ব্র্যান্ড পলিসি রয়েছে, তার মিউজিক পলিসি রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে একজন শ্রোতাকে কতদিন বাবারে বাছারে বসরে, শোনরে এটা করতে পারব এটা নিয়ে আমারও সন্দেহ রয়েছে।
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রেডিও, এক্ষেত্রে রেডিওর বন্ধুদের কী বার্তা দেবেন স্টার আরজে মীর?
মীর- রেডিওটাকে আগে ভাল বাসতে হবে এবং মাধ্যম হিসাবে রেডিও যে অপ্রতিরোধ্য এই ভাবনাটাকে একটু হালকা করতে হবে। দাঁতে দাঁত চেপে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে শুধু কনটেন্টের জোরে লড়তে হবে। আমি নিজে এই লড়াইটা করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত...
আপনি কি নিজেকে ডিজিটাল মাধ্যমে নিয়ে আসার বিষয়ে কিছু ভাবনাচিন্তা করছেন?
মীর- আমি টেলিভিশন থেকে অনেক দিনের ছুটিতে রয়েছি। ২০১৬ সালের এপ্রিলে শেষ বার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, মীরাক্কেল সিজন নাইনে। তারপর থেকে আমি টিভি সেভাবে করতে চাইনি। কারণ, আমার মনে হয়েছে, অত্যন্ত মিডিওকার কনটেন্ট দেখানো হচ্ছে। আমি বলছি না যে আর টেলিভিশনে কাজ করব না। তবে ধীরে ধীরে ডিজিটাল মিডিয়া ও ইন্ডিপেনডেন্ট কাজের সঙ্গে বেশি করে যুক্ত হতে চাইছি।
মীরাক্কলেরের শেষ দু’-তিনটি সিজনের কনটেন্ট মারাত্মক দুর্বল। আর সেই খামতি মেটাতে গিয়ে আপনাকে যা যা করতে হয়েছে, সেটাও একেবারেই ভালভাবে নেয়নি দর্শক। তাদের মোটেই ভাল লাগেনি মীরকে ওভাবে দেখতে। কী বলবেন?
মীর- একদম ঠিক। সত্যি বলতে আমার নিজেরও ভাল লাগেনি। আসলে এর পিছনে রয়েছে আমাদের দর্শকদের না বুঝে উঠতে পারা। আমরা কিছু পরিসংখ্যান ফলো করে এসেছি, আমাদের দেখানো হয়েছে যে, এই ধরনের প্রোফাইলের দর্শক রয়েছেন, তাঁদের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেটা করতে গিয়েই আমরা আমাদের যে কোর ভিউয়ারশিপ ছিল সেটাকে ঘেঁটে ফেলেছি। আমাদের যেসব স্ট্যাটিসটিক্স দেখানো হয় সেগুলোর সত্যতা নিয়ে আমার সংশয় আছে।
আপনি এরপর টেলিভিশনে কাজ করলে কনটেন্ট নিয়ে কি আরও বেশি মাথা ঘামাবেন?
মীর- চ্যানেল সবসময় মাথা ঘামাতে অ্যালাউ করে না।
কিন্তু আপনি নিজেই তো ব্র্যান্ড। আপনার নামে শো চলে, সেক্ষেত্রে...
মীর- নিশ্চয়ই। এ ব্যাপারে হয়ত আমি খানিকটা এগিয়ে আছি। কিন্তু কি জানি আমি নিজেও হয়ত বুঝে উঠতে পারছি না যে লোকের ঠিক কি ভাল লাগবে। কোনটা ভাল কনটেন্ট আর কোনটা খারাপ কনটেন্ট বুঝতে পারছি না।
আরও পড়ুন- দেবীরূপের মাহাত্ম্যটা স্মরণে রেখে যেন কাজ করেন আজকের দুর্গারা
সত্য দা’র কোচিং-এর কনটেন্ট আপনার কেমন লেগেছে?
মীর- আমি ওই দিকেই বেশি ঝুঁকছি। আমি সোশ্যাল মিডিয়ার দিকেই ঝুঁকছি। আমি ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম মেকার্সদের সাপোর্ট করার জন্য তাদের পছন্দসই কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছি। যেখানে আমাদের নিজস্ব একটা বলার জায়গা থাকবে। কোনও চ্যানেলের চোখ রাঙানি, অঙ্গুলি হেলন এগুলো থাকবে না। এগুলো থেকে এবার আমি সত্যি সত্যি একটু দূরে হাঁটতে চাইছি।