প্রয়াত মৃণাল সেন, বছর শেষে আরও এক নক্ষত্রপতন
রবিবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে ভবানীপুরের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রয়াত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন। বড়দিনে শহর হারিয়েছিল 'কলকাতার যীশু'কে। ৯৪ বছর বয়সে প্রয়াত হন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। বছর শেষের রবিবারে বাংলা সাংস্কৃতিক জগতের আরও একটি তারা খসল। চলে গেলেন মৃণাল সেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন বিশ্ব বরেণ্য পরিচালক। এদিন সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সাড়ে ১০টা নাগাদ ভবানীপুরের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান পরিচালক। ১৯২৩ সালে ১৪ মে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন মৃণাল সেন। পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।
'রাতভোর' (১৯৫৫) ছবি দিয়ে সিনেমা বানানোয় হাতেখড়ি হয় মৃণাল সেনের। যদিও সেই ছবিটি তেমন সাফল্যের মুখ দেখেনি। দ্বিতীয় ছবি 'নীল আকাশের নীচে' তাঁকে পরিচিতি দেয়। তৃতীয় ছবি 'বাইশে শ্রাবণ' তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠা দেয়। তাঁর পরিচালনায় বাংলার দর্শক উপহার পেয়েছে অসামান্য কিছু ছবি। মৃণাল সেনের সৃষ্টির ঝুলিতে রয়েছে 'ভুবনসোম', 'কোরাস', 'মৃগয়া', 'আকালের সন্ধানে', 'পুনঃশ্চ', 'পরশুরাম', 'একদিন প্রতিদিনে'র মতো অসামান্য সব ছবি। তাঁর শেষ ছবি 'আমার ভুবন' (২০০২)। সর্বমোট ২৭টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি, ১৪টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ও ৪টি তথ্যচিত্রের পরিচালনা করেছিলেন মৃণাল সেন।
কিংবদন্তী পরিচালকের ঝুলিতে রয়েছে ১৮টি জাতীয়, ১২টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার। মস্কো, বার্লিন, কান ফেস্টিভ্যালে পুরস্কৃত হন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন মৃণাল সেন। ১৯৮১ সালে তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার। ২০০৫ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত বিনোদন জগতের সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। সাহিত্য ও শিল্পে অনস্বীকার্য অবদানের জন্য তাঁকে কম্যান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস (Ordre des Arts et des Lettres ) সম্মানে সম্মানিত করেছিল ফরাসি সরকার। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান কম্যান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস। মহীরূহের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন জগতে।
মৃণাল সেনের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন-
Saddened at the passing away of Mrinal Sen. A great loss to the film industry. My condolences to his family
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 30, 2018
প্রবাদপ্রতিম এই পরিচালক আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তবে কখনও পার্টিতে যোগদান করেননি। সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেননি। তবে রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হয়েছিলেন তিনি।