Aparna Sen Birthday: 'আমাকে মানুষ হিসাবে বদলে দিয়েছেন রীনাদি' লিখলেন পরিচালক রঞ্জন ঘোষ
'শুধু পরিচালক হিসাবে নয়, ওঁ প্রকৃতপক্ষে আমার গুরু'
রঞ্জন ঘোষ
'অন্তহীন' ছবির স্ক্রিপ্টিং অ্যাসিস্টান্ট হিসাবে কাজ করছিলাম, সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অপর্ণা সেন, শর্মিলা ঠাকুর, রাহল বোস ও রাধিকা আপ্তে। সেই ছবির সেটেই রীনাদির সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। তখন ওঁকে ম্যাম বলে ডাকতাম। একদিন বললাম, 'আমি আপনার সঙ্গে চিত্রনাট্য লিখতে চাই'। উনি বলেছিলেন, 'আমার চিত্রনাট্য তো আমি নিজেই লিখি। আমার কাউকে লাগবে না। তবে তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগে থেকো।' এরপরই আমি কার্যত ওঁর পিছু নিই। একদিন মজা করে উনি বললেন, 'রঞ্জন আমাকে প্রেমিকের মতো পিছু করছে।' এভাবে ছ'মাস আমি ওঁর পিছু নিয়েছিলাম।
আমার ভাগ্যের শিঁকে ছেঁড়ে ২০০৯ সালে। বছরের প্রথম সপ্তাহেই ওঁর বাড়িতে যাই। তখন উনি আবার বলেন, 'তুমি এভাবে আমার পিছু নিয়েছ কিন্তু সত্যিই আমার এ ব্যাপারে কিছু করার নেই কারণ আমি নিজের স্ক্রিপ্ট নিজেই লিখি। তবে কঙ্কনার একটা ছবির আইডিয়া আছে, ওটা নিয়ে তুমি কাজ করতে পারো'। তখন আমার স্ক্রিপ্ট রাইটিং কোর্সের জন্য এরকম একটা অ্যাসাইনমেন্ট দরকার ছিল। আমি কাজ শুরু করি। আমি লিখে ওঁকে পাঠাতাম, উনি চেক করে আমায় আবার পাঠাতেন। এর প্রায় দু তিন মাস পর উনি বলেন, 'একটি নতুন ছবির কাজ শুরু করছি, আমার একটা আইডিয়া আছে, তুমি কি আমার সঙ্গে কোলাবরেট করতে চাও?' ছবিটা ছিল 'ইতি মৃণালিনী'। এই কথাটা শোনার পর আমি তো আপ্লুত। সেই শুরু হল ওঁর সঙ্গে আমার জার্নি।
ছবির কাজ যখন শুরু হল সেই সময়টা আমার কাছে বিশেষ ছিল। কারণ ঐ সময় আমি অনেক কিছু হাতে কলমে শিখেছি। ওঁর চিন্তা ভাবনা, মানবতাবোধ, কাজের প্রতি ওঁর নিষ্ঠা ঐসময় আমি একেবারে সামনে থেকে সব প্রত্যক্ষ করি। চিত্রনাট্য রচনা, প্রি-প্রোডাকশনে চরিত্র নির্বাচন থেকে শুরু করে ক্যামেরার শট ব্রেকডাউন, আর্ট ডিপার্টমেন্টের সব কিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষণা করেন রীনাদি। আমি তখন অ্যাসিস্টান্ট ডিরেক্টর হিসাবে কাজ করছিলাম। প্রি-প্রোডাকশন থেকে পোস্ট-প্রোডাকশন নিজের হাতেই ছবি তৈরির পুরো বিষয়টা দেখেন উনি। আমি ফিল্ম স্কুলে দু'বছরে যা শিখেছিলাম... তারপর ওঁর অ্যাসিস্টান্ট হিসাবে কাজ করা আমার কাছে প্রায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করার মতো ছিল। রীনাদির কাছে কাজ শেখা আমার কাছে ফিল্ম স্কুলের মতোই।
তবে রীনাদির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সিনেমার থেকেও বেশি আমি মানুষ হিসাবে অনেক উন্নত হয়েছি বলে আমার বিশ্বাস। ব্যক্তি মানুষ হিসাবে অনেকটা বদলে গেছি ওঁর সান্নিধ্যে এসে। জীবন, সমাজ, রাজনীতি, বিশ্ব সম্পর্কে ওঁর যে জ্ঞান ও চিন্তাধারা তা আমাকে বরাবরই অনুপ্রাণিত করেছে। শুধু ছবির ক্ষেত্রেই নয়, প্রকৃতপক্ষেই উনি আমার গুরু। আমি যখন ওঁর সঙ্গে থাকি তখন চুপ করে ওঁর কথা শুনি, বোঝার চেষ্টা করি, স্পঞ্জের মতো সবটা আহরণ করি। যখনই সন্ধেতে ওঁর বাড়িতে যাই আমাকে কখনও রাতে না খাইয়ে ছাড়েন না। একটা বিশেষ মুহূর্তের কথা আজীবন মনে থাকবে, 'ইতি মৃণালিনী'র শুট চলছে... আমি একটা ভুল করে ফেলি। সেটে সকলের সামনেই রীনাদি আমাকে খুব বকা দেন। একটু আপসেট হয়ে যাই। চুপ করে গেছিলাম। এরপর একদিন একটা ঘরে বসে আর্টের কাজ করছি, হঠাৎই উনি ওই ঘরে আসেন, দেখছেন আমি কী করছি। দেখতে দেখতেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, 'ভালো করে কাজ কর'। এটা লিখতে লিখতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। এর ঠিক পরে পরেই একদিন সেটের সকলের সামনে আমার প্রশংসা করেন রীনাদি। এই যে রীনাদির চার্ম সেটাই ওঁর বিশেষত্ব।