সলমনের “কিক” বক্সিং, খান-মহল কম্পমান!

Updated By: Aug 11, 2014, 06:20 PM IST
সলমনের “কিক” বক্সিং, খান-মহল কম্পমান!

সত্যি বলতে কী, চারিদিক দেখেশুনে একটু দেরিতেই রিভিউ লেখা হল। দু হপ্তা ধরে যে-হারে এক্সটেন্ডেড সলমন-উত্‍সব চলল, তাতে চোখ ছানাবড়া করে দেখা আর কান খাড়া করে শোনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে হল। ফি-বছর ইদের দিনে যিনি ঘটা করে প্রোডিউসারের কপালের ভাঁজ ভ্যানিশ করে দেন, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়িয়ে দেল, নিমেষে শোধ করিয়ে দেন সবরকম পেন্ডিং লোন, সেই সলমন এবারে গড়লেন নতুন রেকর্ড। তিন দিনেই কালেকশন ৮৩.৮৩ কোটি। একশো কোটি ক্লাব মেম্বারদের মাথা তখনই বোঁ-বোঁ করে ঘুরতে শুরু করেছিল। হপ্তা শেষ হতে না হতেই কালেকশন ১৬৫ কোটি! ভারতজুড়ে সব ডিস্ট্রিবিউটরের তখনই প্রেডিকশন। এ ছবি ভেঙে দেবে সব রেকর্ড। গড়বে নতুন বলিউড ইকনমি।

কথাটা খাঁটি বটেই। বলিউড যাঁর ব্যাপারে অল্পস্বল্প গসিপ পেলেই ভূরিভোজ সেরে নেয়, সেই সলমন খান যে আজ পঁচিশ বছর হল, ক্রমাগত গোলপোস্টে কিক করেই চলেছেন, সে নিরীক্ষা কেউই তেমন মনোযোগ দিয়ে করলেন না। আজকে যে ফুলে-ফলে-গরবিনী মহীরুহ সলমনকে দেখার জন্য মাথা উঁচু করতে হয় অনেকখানি, সেটা নেহাত বরাতজোরে হয়নি। দীর্ঘ অনুশীলনের ফলাফল। আমরা যতই অবাক বনে যাই না কেন! অ্যাওয়ার্ড ফাংশন, সম্মাননা, ক্রিটিকের সু-কলম কে পাত্তাই না দিয়ে যে কারিগর, নিজেকে শুধুই তৈরি করে গিয়েছেন মনোরঞ্জনের প্যাকেজ হিসেবে, তাঁর সাফল্য আজ অনেকের উত্তর দিয়ে দিয়েছে!

যাই হোক। স্ট্যাটিসটিক্সে ফেরা যাক। মাত্র দশ দিনে কিক পা রাখল দুশো কোটি ক্লাবে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহরুখ খানের চেন্নাই এক্সপ্রেস, স্পিড লিমিট বাড়িয়েও এই ল্যান্ডমার্ক ছুঁতে সময় লেগেছিল পাক্কা ৩২ দিন। আমির খানের ধুম-থ্রি, যশরাজ ব্যানারের ছবি। এখনও পর্যন্ত হায়েস্ট গ্রসার (২৮৪ কোটি) হলেও, সেই লক্ষমাত্রা ছুঁয়েছিল ৩৫ দিনে। উল্টোদিকে, সলমনের কিক-এর এখনও হাউসফুল বোর্ড ঝুলতে দেখবেন দেশের সব শহর ও মফসসলের সিনেমাহলগুলিতে। মনে রাখবেন, দু হপ্তাও হয়নি। হিন্দি ভাষায়, দেখতে রহিয়ে!

কী আছে এই কিক-এ, যার লোভে এবং টানে সারা ভারত উত্তাল। হল থেকে বেরিয়ে আসা যে মুখগুলো দেখতে পাবেন, তার মধ্যে কলেজ-পড়ুয়া স্কুল-পড়ুয়া থেকে সম্ভ্রান্ত বয়োজ্যেষ্ঠদের খোঁজও পাবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে বৃহত্‍ বিজনেসম্যান, গৃহবধূ থেকে ওয়ার্কিং উওম্যান, কেউই অনুপস্থিত নেই। জিজ্ঞেস করলে জানতেও পারবেন, এখনই বারদুয়েক দেখা হয়ে গিয়েছে কারও কারও। হেতু, উদ্দেশ্য ও বিধেয়- সলমন খান। এই সলমন হ্যাংওভার তাঁরা মোটেই কাটাতে পারছেন না। কেমন যেন জড়িয়ে গিয়েছেন সম্মোহনের জালে।

এ ছবি যাঁর আকর্ষণে আরও একবার দেখতে যেতে হল এই অধম সমালোচককে, তিনি নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। অভিনয়বেত্তায় যিনি সলমনকে রেখেছেন সম্মুখসমরে। জিতে নিয়েছেন দর্শকের মন। অসাধারণত্ব তিনি প্রমাণ করেছেন গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর থেকে লাঞ্চবক্স-এ। পেয়েছেন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও। এই প্রথমবার তথাকথিত অফবিট তারকাও মেম্বারশিপ পেলেন দুশো কোটি ক্লাবের।

জ্যাকলিন! মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেক-ওভার হয়ে গিয়েছে এই নায়িকার। এক লাফে উঠে এলেন যেন। সলমনের গোল্ডেন টাচ না, জাকলিনের ভেতরের ছাইচাপা আগুন? যাই হোক নেপথ্যকারণ, অচিরেই দীপিকা, ক্যাটরিনা, সোনাক্ষীর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছেন তিনি। প্রোডিউসারের কল পাচ্ছেন যথেষ্ট।

এই ছবির ইউএসপির আর একটি, সলমনের গলায় গান। খান সাহেবরা প্রত্যেকেই কখনও না কখনও প্লেব্যাক গেয়েছেন। নামও কামিয়েছেন। সলমনের গান জনপ্রিয়তায় এখনও তাঁদের টেক্কা দেবে। ইউটিউবই তার প্রমাণ।

ছবির গল্প আর সিনেমাটোগ্রাফি, সেট ডিজাইনিং আর প্লেব্যাক, সবই বাকি রাখা হল দর্শকের জন্য। কিক দেখে এসে আপনারাই মন্তব্য করুন না, সব বলে দিলে মজাটাই থাকে না!

.