Sandhya Mukhopadhyay: ছবিতে সেদিন ভুল এবং বেসুরো গাইলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়! কেন?
ছবিতে যিনি লিপ দিচ্ছেন, তিনি তো এখনও তাঁর সঙ্গীতশিক্ষা সম্পূর্ণই করেননি!
সৌমিত্র সেন
সুচিত্রা সেনের লিপে সন্ধ্যা-কন্ঠ যেন এক 'মেড ফর ইচ আদার' ব্য়াপার ছিল। রেকর্ডিং রুমে একজনের গান আর পর্দায় অন্যজনের অভিনয় প্রায় মণিকাঞ্চন যোগ। সন্ধ্যার গানের অতুল ঐশ্বর্য আর সুচিত্রার অভিনয়ের অযুত সৌন্দর্য মিলেমিশে এক অন্যরকম রসায়ন তৈরি করত। কী সব কঠিন কঠিন গান দু'জনে উতরে দিয়েছেন! নিখুঁত গান আর নিখুঁত অভিনয় দিয়ে তাঁরা যৌথতায় এমন এক উচ্চমানের শিল্পসৃষ্টি করতেন যে, তা মানুষের মনে চিরকালের জন্য মুদ্রিত হয়ে থাকত।
কিন্তু তাঁদের এই অনন্য় জুটি একটু অন্যরকম কাজও একবার করেছিল। সুচিত্রার লিপে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ভুল এবং বেসুরো গাইলেন! ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৬৩ সালের 'উত্তর ফাল্গুনী' সিনেমায়। না, চমকে ওঠার মতো বিষয় নয়। এ ঘটেছিল ছবিরই প্রয়োজনে। ছবিতে নায়িকার গানের তালিম নেওয়ার একটি দৃশ্য ছিল। দেবযানী তখনও 'পান্নাবাঈ হয়ে ওঠেননি। ছায়াদেবী গান শেখাচ্ছেন পান্নাবাঈ-রূপী সুচিত্রাকে। সুচিত্রার কণ্ঠে ছিলেন সন্ধ্যা। শোনা যায়, তালিমের গানের রেকর্ডিংয়ের সময়ে ছবির পরিচালক অসিত সেন নাকি সন্ধ্যার কানে কানে বলেছিলেন 'যত পারেন বেসুরো করে গাইবেন দিদিভাই। পারলে ভুলভাল গাইবেন।'
স্বাভাবিক। সন্ধ্যার তো ওই তৈরি কণ্ঠ। তা দিয়ে অবলীলায় অনায়াসে নির্ভুল সুরই বেরয়। সচেতন ভাবে 'ভুল' বা 'বেসুরো' না গাইলে তা বেসুরো হওয়ারই নয়! এদিকে ছবিতে যিনি লিপ দিচ্ছেন, তিনি তো এখনও সঙ্গীতশিক্ষা সম্পূর্ণই করেননি। তিনি কী করেই-বা সন্ধ্যাকণ্ঠের পূর্ণ মহিমাকে ধারণ করবেন? তাই এই পরিচালনাগত সিদ্ধান্ত।
এদিকে, সুচিত্রার লিপে সন্ধ্যা মুখার্জ্জীর নিজের অন্যতম প্রিয় গান ছিল ওই ছবিতেই। 'উত্তর ফাল্গুনী'র 'কৌন তরহা সে তুম খেলো, খেলো তো হোলি'। তবে শুধু নিজের গান নিয়ে নয়, এই ছবিতে সুচিত্রার অভিনয় নিয়েও উচ্ছ্বসিত ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তিনি নাকি একদা বলেওছিলেন-- ''ছবি আমি কম দেখি। কম সংখ্যার মধ্যেও সুচিত্রা-অভিনীত 'উত্তর ফাল্গুনী' আমি পরপর তিন বার দেখেছিলাম। শুধু তাঁর অভিনয় দেখতে।''
আরও পড়ুন: Sandhya Mukhopadhyay: মান্না দে'র সঙ্গে গোলাপের বাগে চম্পা-চামেলি ফুটিয়েছিল সন্ধ্যা-কণ্ঠ