সত্যজিৎই প্রথম এদেশের বিজ্ঞাপনে ভারতীয় বাঙলিয়ানার ছোঁয়া নিয়ে এলেন

বেসিক সিনেমা এবং সিনেমা রিলেটেড আর্ট নিয়ে সত্যজিতের একটা ইন্টারেস্ট তৈরি হয় লন্ডনে।

Edited By: সৌমিত্র সেন | Updated By: May 1, 2021, 11:05 PM IST
সত্যজিৎই প্রথম এদেশের বিজ্ঞাপনে ভারতীয় বাঙলিয়ানার ছোঁয়া নিয়ে এলেন

বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়, পরিচালক, বিজ্ঞাপন ছবির নির্মাতা 

আমি নিজে একজন অ্যাড ফিল্ম মেকার।  সত্যজিৎও বিজ্ঞাপনের মানুষ। ফলে আমার মনে প্রশ্ন উঠত, সত্যজিৎ কি কখনও বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন? এটা আমাদের অনেক সময়ে কুইজ কোয়েশ্চেন হিসাবেও জিগ্যেস করা হত।সত্যজিৎ (satyajit ray) কি কখনও বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন?-- এই প্রশ্নের উত্তর হল, হ্যাঁ, বানিয়েছেন। সারা জীবনে একটিই বানিয়েছেন। সেটি 'সীমাবদ্ধ' ছবিতে। ছবিতে ব্য়বহৃত 'পিটার ফ্যানসে'র বিজ্ঞাপনটা ওঁর বানানো একমাত্র বিজ্ঞাপন। উনি কর্পোরেট ফিল্মে কাজ করেছেন, তবে বিজ্ঞাপন সেই অর্থে বানাননি। 

আরও পড়ুন: সত্যজিতের করা আমার সব চেয়ে প্রিয় ছবি গুপী গাইন বাঘা বাইন

সত্যজিতের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের সম্পর্কটা তৈরি হয় শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে বেরনোর পরে। তখন উনি ডিজে কিমারে যোগ দেন। সেটা ১৯৪৩ সাল। ডিজে কিমার পরে 'ক্ল্যারিয়ন' হয়। এবং এখন সেটাই 'অগিলভি ইন্ডিয়া'।


  
ডিজে কিমারে ১৬ বছর কাজ করেন। যতদিন না 'পথের পাঁচালী' (pather panchali) বানিয়ে বিখ্যাত হন, ততদিন কাজ করেন। সেখান থেকে তিনি ডিজে কিমারের লন্ডন অফিসেও যান। তিন মাসের জন্য। যাত্রাটা খুব সিগনিফিক্যাান্ট। কারণ, শোনা যায়, এই যাত্রাপথেই নাকি তিনি 'পথের পাঁচালী'র স্ক্রিপ্ট তৈরি করে ফেলেছিলেন। শুধু তাই নয়, লন্ডনে ওই তিনমাসে তিনি ৯৯টি ফিচার ফিল্ম দেখে ফেলেছিলেন! মিউজিয়ম তো ঘুরে ফেলেনই। পোস্টার আর্ট নিয়েও পড়াশোনা করেন। ওখানে বেসিক সিনেমা এবং সিনেমা রিলেটেড আর্ট নিয়ে একটা অসম্ভব ইন্টারেস্টের জায়গা তৈরি হয় ওঁর মধ্যে। এরই ফলশ্রুতি পরে আমরা ওঁর টাইপোগ্রাফি, ইলাস্ট্রেশন, পোস্টার ডিজাইনে দেখি।

ডিজে কিমারে থাকাকালীন বিজ্ঞাপন-ভাবনার ক্ষেত্রে সত্যজিতের দারুণ অবদান ছিল। তখনকার দিনে তো বিজ্ঞাপন ভীষণ পাশ্চাত্যভাবিত হত। কপি থেকে, আর্টওয়ার্ক থেকে সর্বত্রই। সত্যজিৎই সেখানে প্রথম ভারতীয় বাঙলিয়ানার ছোঁয়া নিয়ে আসেন। মনে হয়, শান্তিনিকেতনের কলাভবনের শিক্ষাকে এখানে কাজে লাগান তিনি। তখনকার বিজ্ঞাপনের জগতে বিরাজ করা আগাগোড়া ইউরোপীয় ভাবনার জায়গায় তিনি এই নিখাদ  ভারতীয় স্বাদ নিয়ে এসে একটা নতুনত্ব তৈরি করেন।

ডিজে কিমারের সূত্রে আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে সত্যজিতের জীবনে। ওখানে ওঁর সিনিয়র ছিলেন ডিকে গুপ্ত। যিনি 'সিগনেট প্রেস' করেন। ডিজে কিমারে কাজ করতে গিয়ে ডিকে গুপ্তের সঙ্গে ওঁর আলাপ-পরিচয় হয়। এই ডিকে গুপ্তই ওঁকে প্রচুর বইয়ের কাজ করান। সত্যজিৎ ওঁদের জন্য একাধিক কাভার তৈরি করেন। প্রচ্ছদ নিয়ে ভাবেন। 

এছাড়াও সত্যজিৎ একাধিক বিজ্ঞাপন করেন। এই মুহূর্তে যেমন 'প্যালুড্রিনে'র বিজ্ঞাপনটার কথা মনে পড়ছে। এটা খুব নাম করেছিল। 

আরও পড়ুন: সত্যজিৎ শতবর্ষ: সত্যজিতের কাজের সব চেয়ে বড় কথা হল ওঁর টোটাল ডিসিপ্লিন

.