Belashuru Movie Review: হাতে হাত রেখে 'বেলাশুরু' সৌমিত্র-স্বাতীলেখার আশ্চর্য দাম্পত্যের
প্রেম, দাম্পত্য, সন্তান...শুধু কি এগুলোই বিয়ের সংজ্ঞা! যে সংজ্ঞার খোঁজে ছিল বেলাশেষের বিশ্বনাথ-আরতি, মিলি-বিজন, পিউ-পলাশ, বারিন-শর্মিষ্ঠা সেই সম্পর্কের উত্তর খুঁজে পেল বেলাশুরুর চরিত্ররা। মাঝে কেটে গেছে সাত বছর, পরিণত হয়েছে চরিত্ররা, তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি সংযত।
সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: 'চলে গেছে গেছে যেদিন/মধুমাসের ছদ্মবেশ,/তোমারও হাত দুহাত জুড়ে/ফুল ছোড়ার বদ অভ্যেস,/খেলা কি শেষ, নাকি বেলাশুরু...' বিশ্বনাথ-আরতির জীবনে এবার এক অন্য দাম্পত্যের 'বেলাশুরু'(Belashuru)। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়(Shiboprasad Mukherjee) ও নন্দিতা রায়ের(Nandita Roy) বিশ্বনাথ-আরতি অর্থাৎ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়(Soumitra Chatterjee)-স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত(Swatilekha Sengupta) পর্দায় হাতের উপর হাত রেখে তৈরি করলেন সিনে-মায়ায় ভরা এক আশ্চর্য পৃথিবী, যেখানে লেখা হয়েছে সম্পর্কের অন্য গাথা। শান্তিনিকেতনের লালমাটির রাস্তা দিয়ে ফরিদপুর খুঁজতে খুঁজতেই দর্শকের হৃদয়পুরে যখন ঢুকে পড়লেন আরতি সরকার, ঝাপসা চোখেই দর্শক সাক্ষী হতে শুরু করল এক অলীক দাম্পত্যের, যেখানে দূরে কোথাও বেজে চলেছে নহবত।
কাট টু 'বেলাশেষে' ছবির শেষদৃশ্য, নিজের ভুল সিদ্ধান্ত বুঝে আরতির কাছেই ফিরেছেন বিশ্বনাথ। কাছের মানুষের কাছেই তো ফিরেছেন বিশ্বনাথ, কিন্তু যে মানুষকে নিয়ে তাঁর ঘর, তাঁকে কি তিনি ফিরে পাবেন?বেলাশেষের বিশ্বনাথ যাঁর কাছে বাইরের দুনিয়াই ছিল সব, কারণ তিনি জানতেন বাড়িতে কেউ আছেন তাঁর সংসার সামলানোর জন্য, তাঁকে সামলানোর জন্যে, সেই বিশ্বনাথ এখন সারাক্ষণ চোখের আড়াল করেন না আরতিকে। কিন্তু আরতি ভুলেছেন সাম্প্রতিক স্মৃতি, ফিরে গেছেন ছোটবেলায়। অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত তিনি, মাঝে মাঝেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ফরিদপুরের উদ্দেশে। তাঁকে নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটে বিশ্বনাথ সহ তাঁদের ছেলে মেয়েদেরও।
প্রেম, দাম্পত্য, সন্তান...শুধু কি এগুলোই বিয়ের সংজ্ঞা! যে সংজ্ঞার খোঁজে ছিল বেলাশেষের বিশ্বনাথ-আরতি, মিলি-বিজন, পিউ-পলাশ, বারিন-শর্মিষ্ঠা সেই সম্পর্কের উত্তর খুঁজে পেল বেলাশুরুর চরিত্ররা। মাঝে কেটে গেছে সাত বছর, পরিণত হয়েছে চরিত্ররা, তাঁরা আগের থেকে অনেক বেশি সংযত। বিশ্বনাথ ও আরতির চরিত্রে দুই কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত যখন যখন পর্দায় এসেছেন তখন তখন দর্শককুল স্মৃতিমেদুর হতে বাধ্য, তাঁরা যেন প্রাণপণ ভুলে যেতে চান এই দুই কিংবদন্তি আর ইহলোকে নেই। তাঁদের অস্তিত্ব অস্বীকার করার অধিকার যেমন বাংলা সিনেমার নেই, তেমনই তার অবকাশ এ ছবির দর্শকেরও নেই। চরিত্র হয়ে তাঁরা হাতে হাত রাখেন, আর তাঁরা হাত ধরতেই এ ছবি উড়াল দেয় অন্য আকাশে। এক পরিবারের গল্পকে সকল মানুষের গল্প করে তোলেন দুই অভিনেতা, তাঁদের অনুনকরণীয় অভিব্যক্তিতে। খেয়াল করে দর্শক দেখেন, সৌমিত্র বা স্বাতীলেখাকে নয়, তাঁদের মুখের রেখায় তাঁরা দেখছেন হয়তো তাঁদেরই আপনজনকে।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুজয় প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখোপাধ্যায়, মনামী ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, ইন্দ্রানী দত্ত, অরুণিমা হালদার, প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রত্যেক অভিনেতাই উজাড় করে দিয়েছেন দর্শকের কাছ। তবে এই ছবির কিছু দৃশ্য যা দর্শকের মনে ছাপ ফেলবেই। তারমধ্যে একটি দৃশ্য যেখানে ঋতুপর্ণা অর্থাৎ মিলি তাঁর বাবার কাছে বিয়ে-সম্পর্ক-দাম্পত্য নিয়ে আলোচনা করছেন সেই দৃশ্যে নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখেছেন ঋতুপর্ণা। শেষের আগের দৃশ্য, যেখানে এক অদ্ভুত দ্বিধা নিয়ে বাসর রাতে মুখোমুখি বিশ্বনাথ ও আরতি। অল্প সংলাপ-অভিব্যক্তিতে একদিকে যেমন পর্দায় দর্শককে মোহিত করে রেখেছেন সৌমিত্র-স্বাতীলেখা তেমনি তাঁদের জীবনের ঝড় যেভাবে তবলা ও সেতারের মধ্য দিয়ে আবহ সঙ্গীতে তুলে ধরেছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদ তা সত্যিই তাঁদের মুন্সিয়ানার পরিচয়। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্য়ায়ের কথায় ও সুরে কবীর সুমনের কন্ঠ এই ছবির আরেক প্রাপ্তি। শেষের দৃশ্যে খালি গলায় কবীরের বেলাশুরু গানটি দর্শককে পৌঁছে দেবে অনুভবের এক অন্য দুনিয়ায়, যেখানে মনে হয় শেষ বলে কিছু নেই, এ তো সবে 'বেলাশুরু'।
আরও পড়ুন: Belashuru: 'আমরা বাঁচব অনেক দীর্ঘকাল', সৌমিত্র-স্বাতীলেখার শেষ দেখার মুহূর্ত পোস্ট শিবপ্রসাদের