হাঁপানির রোগীদের করোনার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি! সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চাই বাড়তি সতর্কতা!

জেনে নিন এ বিষয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চেস্ট স্পেশালিস্ট) ডঃ অনির্বাণ সরকার...

Reported By: সুদীপ দে | Updated By: Apr 14, 2020, 07:04 PM IST
হাঁপানির রোগীদের করোনার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি! সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চাই বাড়তি সতর্কতা!

সুদীপ দে: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট, জ্বর, মাথা ব্যথা, হাঁচি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়— এ কথা আমরা এখন মোটামুটি সকলেই জানি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কোষগুলি ফুলে ওঠে। ভাইরাস অণুগুলি ফেটে চারপাশের অন্যান্য কোষগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। সংক্রমণ দ্রুত ব্রঙ্কিওল টিউবে ছড়িয়ে পড়ে।

সংক্রমণ আরও বাড়লে ভাইরাসের অণুগুলি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ফুসফুসের মিউকাস মেমব্রেনে। ফুসফুসের দুই পা‌শের পেরিফেরিয়াল অংশ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে শ্বাসানালীর উপরে ট্রাকিয়ার দিকে। সংক্রমণ ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়লে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের কাজটাও সঠিক ভাবে হয় না। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি ক্রমশ দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

করোনা সংক্রমণ গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে, প্রাণ কেড়েছে লক্ষাধিক মানুষের। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চেস্ট স্পেশালিস্ট) ডঃ অনির্বাণ সরকারের মতে, যাঁদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। তাই যাঁদের হাঁপানির সমস্যা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের (Chronic Obstructive Pulmonary Disease) সমস্যা রয়েছে, করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কী করবে তাঁরা? জেনে নিন এ বিষয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চেস্ট স্পেশালিস্ট) ডঃ অনির্বাণ সরকার

Asthma

ডঃ সরকার জানান, হাঁপানি হল ডায়বিটিস বা হাই ব্লাডপ্রেশারের মতো একটি অসুখ, যা সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় করা সম্ভব নয়। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করে চললে আর সঠিক চিকিৎসায় এই রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি...

১) যাঁদের নিয়মিত ইনহেলার নিতে হয়, তাঁরা অবশ্যই নিয়ম মেনে ইনহেলার ব্যবহার করুন। ইনহেলারগুলি ভাল ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখাটাও জরুরি।

২) ধূমপান এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ— তা হাঁপানির সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। সম্প্রতি ‘চাইনিজ সেন্টার্স অব ডিজিজ কন্ট্রোল’-এর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ধূমপায়ীরা!

৩) পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। হাঁচি-কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করুন। বাইরে বেরলেই মাস্ক, রুমাল বা কাপড়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। বার বার হাত, মুখ সাবার দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। প্রতিদিন কাচা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরুন। চাদর-বালিশ নিয়মিত রোদে দিন। ধুলো-বালি, পুরনো জিনিসপত্র ঘাঁটাঘাঁটি এড়িয়ে চলুন।

Dr Anirban Sarkar

৪) যাঁদের হাঁপানির সমস্যা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের (COPD) সমস্যা রয়েছে, তাঁদের আকস্মিক তাপমাত্রার পরিবর্তনে সমস্যা বাড়তে পারে। তাই গরম লাগছে বলে কনকনে ঠাণ্ডা জল খেয়ে নিলেন বা এসি চালিয়ে ঘরের তাপমাত্রা ১৬-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলেন—এ সব অভ্যাসও তাঁদের অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে!

ডঃ সরকার বলেন, “অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসা করানোর চেয়ে আগাম সতর্কতায় সুস্থ থাকাটা বেশি জরুরি। হাঁপানির সমস্যা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের (COPD) সমস্যা রয়েছে, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধপত্র আর ইনহেলার নিয়ম মেনে চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, এই মুহূর্তে সতর্কতা আর সচেতনতাই আমাদের সুস্থতার আসল চাবিকাঠি!”

.