মন খুললেন মদন (পর্ব-২)
গণ জামাইষষ্ঠীর আবহেই কথা ঘুরল রাজনীতির রাজপথে। ব্যাট হাতে দাঁড়ালেন মদন মিত্র। কোনও বলে বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি যেমন হাঁকালেন, ঠিক তেমনই জাজমেন্টও দিলেন বেশ কয়েকটিতে। সুন্দর সামলালেন গুগলিও-
আপনি হয়ত নিশ্চয়ই জানেন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এখন 'আপনার ক্যাবিন-এ' ভর্তি...
মদন মিত্র- (প্রশ্ন শেষের আগেই...) আমি একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে সুদীপ দা'কে (সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়) চিনি। আমাদের দলের নেতা ছিলেন, নেতা আছেন, আমি ওনার সুস্থতা কামনা করছি। (এরপরই সোজা ঢুকে পড়লেন, বর্তমান রাজনৈতিক ইস্যুতে) মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে বিভেদ সৃষ্টি করার যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে তাতে কিন্তু ভারতবর্ষকে এক রাখা যাবে না। 'নো ডাউট', ভারতবর্ষে একতা বজায় রাখতে পেরেছিল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসই। পরবর্তীকালে যেটা একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস করছে।
একতা অটুট রাখতে কি তাহলে 'চির শত্রু' সিপিআই(এম)-এর হাত ধরবেন? রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বামেদের সঙ্গে মিত্রতা... রাজ্যে কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তি, কীভাবে সম্ভব?
মদন মিত্র- এটাকে বলে, 'পলিটিক্স অব অপরচুনিজম'। অর্থাৎ, নীতি কী? কোনটা আমার নীতি? 'ইট ইজ অ্যা ম্যারেজ অব কনভেনিয়েন্স'। কার সঙ্গে কার বিয়ে হলে ভাল হবে, সেই বিয়ে আমার সঙ্গে তোমার পশ্চিমবঙ্গে হতে পারে, আবার তোমার শত্রুর সঙ্গে আমার মহারাষ্ট্রতেও হতে পারে। কোথায় কার সঙ্গে বিয়ে করলে, 'ইট উইল বি অ্যা ম্যারেজ অব কনভেনিয়েন্স...'।
এটা হলে কি বিজেপি রাজনৈতিক মাইলেজ পেয়ে যাবে না?
মদন মিত্র- কার কীসে মাইলেজ আসবে, আমি জানি না। দেশটা শেষ হয়ে যাবে।
রাষ্ট্রপতি পদে কাকে বাছবেন?
মদন মিত্র- দেখো, আমার সব থেকে সেফ উত্তর হল, 'ল্যাংটার নেই বাটপারের ভয়'। কারণ, আমি মন্ত্রীও নই, এমএলএ'ও নই, যখন যেটা বেস্ট সেটাই...। প্রণব মুখোপাধ্যায় খুব ভাল, শিক্ষিত মানুষ। আব্দুল কালামও ভালো। তবে সবথেকে ভালো রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন। যাকে দেখে টিচার্স ডে পালন হয়।
এখন কি এমন কেউ নেই?
মদন মিত্র- সেটা আমি বলতে পারব না।
এবার টি-টোয়েন্টি।
ধরে নেওয়া যাক তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের সরকার চালাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ৫টা দফতরে কাদের কাদের রাখবেন? (মমতা ব্যানার্জিকে একটাই দফতর দেওয়া যাবে) নিজে কোন দফতরে কাজ করতে পছন্দ করবেন?
মদন মিত্র- প্রথমত কোনও পদের জন্যই আমি নিজেকে যোগ্য মনে করি না। এখানে দুটো রুল আছে। প্রথম রুল হল, 'Boss can do no wrong'। রুল নম্বর টু, 'If boss is wrong, she do one'। ৫টা পদের জন্যই মমতা ব্যানার্জি। এর বাইরে কিছু নেই।
আপনি তো ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। বঙ্গ ফুটবলের অবস্থা নিশ্চয়ই জানেন? এআইএফফ এর সঙ্গে মোহন-ইস্টের দ্বন্দ্ব কাটাতে কোনও টিপস দেবেন?
মদন মিত্র- একমাত্র উপায় হল- এআইএফফ, আইএসএল, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল-সকলের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
এই কাজটাই কি করতে পারছেন না অরূপ বিশ্বাস? কত নম্বর দেবেন বর্তমান ক্রীড়ামন্ত্রীকে? ১০০/১০০ দেবেন?
মদন মিত্র- একশোতে একশো হয় না। আমাদের দেওয়া বারণ আছে...। দশে সাড়ে নয় অবধি দেওয়া যায়। তার বেশি নয়। দশে দশ দিলে মামলা হয়ে যাবে। যেমন ১০০% পোলিং হলেই বুথের ভোট বাতিল হয়ে যায়।
তাহলে অরূপ বিশ্বাস দশে দশ নয়। পরিবহন মন্ত্রীকে কত নম্বর দেবেন? ওটাও তো আপনারই ছেড়ে আসা দফতর...
মদন মিত্র- দুজনেই ভাল চালাচ্ছে, প্রকৃত মন্ত্রীর মতই কাজ করছে। ওরা দুজনেই প্রকৃত মন্ত্রী। আমি আসলে 'আউটডোর মিনিস্টার' ছিলাম। মন্ত্রী হয়ে পার্টির কাজ করতাম। আমাদের পার্টির এত এত ছেলে যারা লড়াই করছে, তাদের কথা তো শুনতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সেটা সবসময় সম্ভব নয়, আমিই এই দিকটা দেখতাম।
অনুর্ধ-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে যাবেন?
মদন মিত্র- প্রফুল্ল প্যাটেল তখন কেন্দ্রের মন্ত্রী। আমাকে ফোন করেছিলেন। দিল্লি এসো একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। ফিফার প্রেসিডেন্ট ব্লাটারের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। অনুর্ধ-১৭ মানে যারা সতেরোর মেসি, সতেরোর নেইমার, তারা খেলবেন। এই সতেরোর ফাইনাল, যেটা আমি খুব সম্মানের সঙ্গে কলকাতায় আনার চেষ্টা করেছিলাম। ব্লাটারের সঙ্গে দেখা করে, আলোচনা করে কলকাতায় অনুর্ধ-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল করাবার চেষ্টা করেছি। আমি তো এখন আর কোনও মন্ত্রী নই। এখন আর টিকিটও পাই না। (মদন মিত্রের গলায় আক্ষেপের সুর) খেলাটাই হয়ত দেখা হবে না।
শেষ প্রশ্ন, আপনার মোবাইল নাম্বারের শেষ ৬টি ডিজিট ৬ (....৬৬৬৬৬৬)। ছয় ছক্কার নজির তো ভারতের দুজন অলরাউন্ডারেরই আছে, এক রবি শাস্ত্রী, দুই যুবরাজ। রাজনীতির ময়দানে নিজেকে কার সঙ্গে তুলনা করবেন আপনি?
মদন মিত্র- ফেভারিট রবি শাস্ত্রী, ও আমার বন্ধু, খুব ভাল বন্ধু। যুবরাজের কামব্যাকটা ভীষণ গ্ল্যামারাস। ওর কামব্যাককে আমি ভীষণ সম্মান করি। যুবরাজ, লিয়েন্ডার পেজ, মনীষা কয়রালের কামব্যাককে ভীষণ সম্মান করি। (নিজেও গ্ল্যামারাস কামব্যাকের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, মদন মিত্র এটাই বোধহয় বুঝিয়ে দিলেন সতীর্থ এবং বিরোধীদের)
মন খুললেন মদন (পর্ব-১)