'অদ্ভুত আঁধার' কাটিয়ে দেওয়া 'মৃতবন্দরে বাঁচার আজান' রেড ভলান্টিয়ারের
নেপথ্যে গান বাজছে। সেখানে বলা হচ্ছে, অদ্ভুত এক আঁধার নেমেছে এ পৃথিবীতে।

নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রশ্নগুলো কঠিন, আর উত্তরও তো জানা।
কোন প্রশ্ন?
ওই লকডাউন, ট্রেন বন্ধ, কর্মী ছাঁটাই, করোনা-পরিস্থিতি, অক্সিজেন-সঙ্কট, গরিবের অসহায়তা ইত্যাদি জাতীয় যে -প্রশ্নগুলি 'রেড ভলান্টিয়ারে'র ভিডিয়োতে তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলির যৌক্তিকতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না।
আর এগগুলির উত্তরও তো একরকম জানাই। কেননা, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নীতি-নির্ধারণের রেলট্র্যাক ধরে যে গতিছন্দে চলবে দেশ, তা সব সময় সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের মনপসন্দ হবে না। সেখানে বৃহত্তর মানুষের সুরক্ষার কথা ভাবলে যদি লকডাউন (lockdown) বা তার জেরে বাস-ট্রেন বন্ধের যৌক্তিকতাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়, তবে এই সময়-পর্বে দরিদ্রের পেটে যে কার্যত তালা পড়ে যাবে, সেটাও ঠিক।
আরও পড়ুন: Left Manifesto: 'বিকল্প ইশতাহারের প্রচার' টালিগঞ্জে অভিনব প্রচারে এবার বামেরা | Bengal Election 2021
সমাধান এখনই হাতের কাছে নেই বলে কি প্রশ্ন তোলা হবে না? নিশ্চয়ই তোলা হবে। সেই জরুরি কাজটিই করেছেন বামমনোভাবাপন্নেরা। তাঁরা এই সব জরুরি প্রশ্ন তুলে-দেওয়া একটা ভিডিয়ো নিয়ে ভোট-পরবর্তী বাংলায় হাজির হয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন মিনিটের ভিডিয়োটিতে আগাগোড়া লাল প্রেক্ষাপট। সেখানে প্রথমেই দেখা যাচ্ছে, একটি স্কুটিতে দু'জন, একজন চালক, অন্যজন পিছনে বসে হাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সিপিএমের প্রতীক-আঁকা পতাকা। নেপথ্যে গান বাজছে। সেখানে বলা হচ্ছে, অদ্ভুত এক আঁধার নেমেছে পৃথিবীতে, ঢাকা পড়েছে স্বাভাবিক সুস্থতার আলো। কিন্তু তবুও বামেরা তাদের ঈপ্সিত কাজের পথেই চলবে। নিপীড়িত বঞ্চিত দরিদ্রের পাাশে দাঁড়াবে। যাঁদের কথা কেউ ভাবে না, তারা সেই সব মানুষের কথা ভাববে। তাঁদের পক্ষের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রশ্ন তুলে বিব্রত করবে শাসককে। কারণ, বামেরা মনে করে, তারা 'এবার ভোটে হেরে গেছি ঠিক/তবু আজও চলা লক্ষে সঠিক'! আর সেই সঠিক পথে চলার দাবিতেই 'মানুষের পাশে আছে রেড ভলান্টিয়ার'।
খুবই সুখশ্রাব্য একটি গান, তার আবহ, সঙ্গের ভিডিয়োটির ফিগারেটিভ রিপ্রেজেন্টেশনও ভালো লাগে। এবারের বিধানসভা ভোটকে সিপিএম প্রথম থেকেই বেশ চ্যালেঞ্জিং অ্যাটিটিউডে গ্রহণ করেছিল। কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোটের প্রশ্নে, বা ব্রিগেড আয়োজনের প্রশ্নে, বা সেই ব্রিগেডে বুদ্ধবাবুকে (buddhadev bhattacharya) হাজির করানোর প্রাথমিক চেষ্টা এবং ভেস্তে-যাওয়া-সেই-চেষ্টার পরের ধাপে তাঁর ভিডিয়ো-বার্তা শোনার প্রশ্নে-- সিপিএম এবারে প্রথম থেকেই খুব এনার্জেটিক ছিল। ভোট-প্রচার পর্বেও তারা এরকম ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে।
কিন্তু ভোটে (election) এর রেজাল্ট শূন্য। যে-মানুষের পাশে তারা এত আন্তরিক ভাবে দাঁড়াতে চাইছে, কেন সেই-মানুষই বামেদের এভাবে শূ্ন্য হাতে ফেরাল, এটা কিন্তু খুব তন্নিষ্ঠ ভাবে অনুসন্ধানের প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট মহলের পরামর্শ-- এখানে কথার সৌখিন মজদুরি দিয়ে ভাবের চুরি না চালানোই ভাল। কেননা তা হলে, 'তবু আজও চলা লক্ষে' সত্যিই 'সঠিক' কিনা, কোনও দিনই সেটার ময়নাতদন্ত হবে না। নিজেকে সময়ের মাপে এবং আধুনিকতার ছাঁচে আঁটিয়ে নেওয়ার জন্য যে সময়োচিত ঘষামাজাটা জরুরি, সেই প্রশ্নটা কিন্তু ঢাকা-চাপাই পড়ে থাকবে।
'অদ্ভুত আঁধার' কাটিয়ে দেওয়া 'মৃতবন্দরে বাঁচার আজান' অবশ্যই জরুরি। মানুষের পাশে থাকাটাও জরুরি। গণতন্ত্রে সর্বগ্রাসী প্রথম-দ্বিতীয় শক্তির পাশাপাশি একটা তৃতীয়স্বরকে তুলে রাখাও জরুরি। এই অতি অতি জরুরি কাজগুলি করছে 'রেড ভলান্টিয়ারে'রা। যা আগাগোড়া প্রশংসার। কিন্তু পাশাপাশি সোচ্চার লালকে আরও গভীর-সঞ্চারী করার হোমটাস্কটাও চলুক। সেটাও আদতে গণতন্ত্রকেই শুদ্ধ ও শক্তিমান করবে, রাজনীতিকে অর্থবহ করবে, সমাজকে বর্ণময় করবে।
আরও পড়ুন: Bengal election 2021: বিজ্ঞাপনী স্লোগানে অভিনব পোস্টারে প্রচার Left Front-র