বিবৃতি পেশ করে পিঠ বাঁচানোর চেষ্টা দেবযানীর

পুলিস হেফাজতে থেকেই লিখিত বিবৃতিতে নিজের সাফাই দিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই পাতার এই বিবৃতিতে সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত দেবযানী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত থেকেছেন। বিবৃতির ছত্রে ছত্রে ধরা রয়েছে সেন স্যার অর্থাৎ সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। কিন্তু এই বিবৃতির মধ্যেই ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতিও। ২০০৮ এর জানুয়ারিতে সারদায় যোগ দেওয়া সামান্য চাকুরে দেবযানী ওই বছরেরই জুলাই মাসে সারদার ডিরেক্টর হলেন কীভাবে, তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেননি তিনি। প্রশ্ন উঠছে, পুলিস হেফাজতে থাকাকালীন একজন অভিযুক্ত আদৌ কি বিবৃতি দিতে পারেন?  

Updated By: May 10, 2013, 10:25 PM IST

পুলিস হেফাজতে থেকেই লিখিত বিবৃতিতে নিজের সাফাই দিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই পাতার এই বিবৃতিতে সারদাকাণ্ডে অভিযুক্ত দেবযানী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত থেকেছেন। বিবৃতির ছত্রে ছত্রে ধরা রয়েছে সেন স্যার অর্থাৎ সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। কিন্তু এই বিবৃতির মধ্যেই ধরা পড়েছে একাধিক অসঙ্গতিও। ২০০৮ এর জানুয়ারিতে সারদায় যোগ দেওয়া সামান্য চাকুরে দেবযানী ওই বছরেরই জুলাই মাসে সারদার ডিরেক্টর হলেন কীভাবে, তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেননি তিনি। প্রশ্ন উঠছে, পুলিস হেফাজতে থাকাকালীন একজন অভিযুক্ত আদৌ কি বিবৃতি দিতে পারেন?  
আইনজীবী মারফৎ পেশ করা বিবৃতিতে সেন স্যারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন তাঁরই ছায়াসঙ্গী দেবযানী। সারদাতে যোগ দেওয়ার পর যখন টের পান `অন্যরকম কিছু হচ্ছে` তখনই নাকি সারদা কর্তাকে প্রশ্ন করেছিলেন তানিয়ে। কিন্তু তাতে রুষ্ট হয়ে উত্তর দেননি সুদীপ্ত। উল্টে দেবযানীকে খোয়াতে হয়েছে ৩৫টি সংস্থার ডিরেক্টরের পদ। দেবযানীর কথায়, "বসকে মন থেকে বিশ্বাস করতাম। বসের নির্দেশেই কাজ করতাম। প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব সামলাতাম আমিই।" তবে তহবিল দেখার দায়িত্ব তাঁর ছিল না বলে দাবি করেছেন দাবিযানী।
মুখ খুলেছেন সমাজের তাবর মানুষদের সারদা কর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠাটা নিয়েও। বিবৃতির বয়ান অনুযায়ী, ``সামাজের প্রথমসারির বেশকিছু মানুষের সঙ্গে বসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল।" চিটফান্ড সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, বিপদের দিনে `প্রথম সারির` সবাই মুখ ঘুড়িয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ দেবযানী ম্যাডামের।
সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর এবং কাশ্মীর থেকে সঙ্গিনী সমেত সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ার পর থেকেই ফিসফাস শুরু হয় দেবযানী-সুদীপ্তর সম্পর্ক নিয়ে। এ দিনের বয়ানে দেবযানীর সাফাই, "স্যার বিজনেস ট্যুরে আমাকে নিয়মিত নিয়ে যেতেন। তবে কোনও আলাদা সম্পর্ক ছিল না আমাদের। কোনও দিন এক ঘরে থাকিনি আমরা।" দেবযানী এও বলেন, সংস্থার বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করেন তিনি। ফলে অধিকর্তার পদ থেকে সরতে হয় তাঁকে। এ নিয়ে কোথাও যে অভিযোগ জানাননি, সেও স্পষ্ট করেছেন দেবযানী। এক বছর আগে সংস্থার পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সুদীপ্ত সেনের কথা রাখতেই তাঁকে দিল্লি ছুটে যেতে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।
সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন যে পরিকল্পনা করেই পালিয়েছিলেন, ক্রমশ জোরাল হচ্ছে সেই দাবি। পরিকল্পিতভাবে সিবিআইকে চিঠি লেখার পর কয়েকদিন অপেক্ষা করেন তিনি। তারপর অবস্থা বুঝে ফেরার হয়ে যান। এমনকী এদেশ ছেড়ে তিনি নেপালেও পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটি ফোন পেয়ে ফিরে এসেছিলেন ভারতে।
গত ২০ এপ্রিল মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, "সুদীপ্ত সেনের সন্ধানে তল্লাসি চলছে। যতদূর সম্ভব তিনি উত্তর ভারতে রয়েছেন।" মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরই নেপাল থেকে ভারতে ফিরেছিলেন সুদীপ্ত সেন। নেপালে গিয়ে পুলিসের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তা তিনি করেননি। ভারতে ফিরে কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। দীর্ঘ জেরার পর অবশেষে পুলিসের কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সুদীপ্ত সেন।

.