নোটবন্দির কোপ 'সোনাগাছির শিরদাঁড়া'য়
সৌরভ পাল
নোটবন্দির ধাক্কায় গোটা দেশ যখন টলমল, সোনাগাছির শিরদাঁড়া হয়েছিল ঊষা কো-অপারেটিভ। এখনও কলকাতার যৌনপল্লীর অর্থনীতির শিরদাঁড়া হয়েই রয়েছে এই সমবায়। দেশের, রাজ্যের ছোট বড় সব ব্যাঙ্ক যখন যৌনকর্মীদের আক্যাউন্ট খুলতে 'অনীহা' দেখিয়েছিল তখন এই ঊষা কো-অপরেটিভই ছিল সেক্স ওয়ার্কারদের একমাত্রা পরিত্রাতা। রোজকারের রোজগার জমা হত এখানে। আর এখান থেকেই নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় টাকার লেনদেন করতেন যৌনকর্মীরা। নোটবন্দি 'হাত বেঁধেছে' এই ঊষা কো-অপরেটিভের। সোনাগাছির রোজগারের আয়ে যেমন কোপ বসিয়েছে নোটবন্দি, তেমনই অদৃশ্য আঘাত এনেছে কো-অপরেটিভেও। দুর্বারের মুখ্য উপদেষ্টা তথা অধ্যাপক ডঃ স্মরজিৎ জানা নোট বন্দির নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করে সাফ জানালেন, "ক্রেতা নেই, রোজগার হচ্ছে না। ধাক্কা খেয়েছে ঊষা"।
আরও পড়ুন- মোদীর কাছে কর ছাড়ের আর্জি যৌনকর্মীদের
প্রধানমন্ত্রীর জন ধন যোজনা প্রকল্পের প্রশংসা করলেও ডঃ জানার মতে, " শুধু সেক্স ট্রেডেই নয় গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশাল প্রভাব ফেলেছে নোটবন্দি। সমাজের গরিব মানুষের অবস্থা শোচনীয়। প্রতিদিনের রোজগারে জোর ধাক্কা দিয়েছে নোটবন্দি।" একই সঙ্গে যৌনকর্মীদের পাশে থাকা ঊষার অনুদানে কোপ বসিয়েছে নোটবন্দি, এ কথাও সাফ জানিয়েছেন অধ্যাপক এস জানা। এতে যৌনকর্মীরা তো বটেই, সমস্যায় পড়েছে তাদের ছেলেমেয়েরা এবং পরিবারও।
দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঊষা কো-অপারেটিভ? এ কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কেবল সেভিংস আর ক্রেডিটের ওপর ভরসা করে থাকলে ঊষা চালানো কঠিন হয়ে পড়ত। অ্যাগরিকালচার উইংয়ের সাহায্যেই অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে বলেই দাবি করেছেন দুর্বারের মুখ্য উপদেষ্টা। ঊষা যা লাভ করে তার বেশিরভাগই কমিউনিটি ডেভলপমেন্টের কাজে ব্যবহৃত হয়। যারা কাজ করতে পারেন না (এইচ আইভি পজিটিভ), তাদের আর্থিক সাহায্যও করে ঊষা। বিনামূল্যে দেওয়া হয় রেশন। এছাড়াও স্পোর্টস অ্যাকাডেমি, রিসার্চ উইংয়েও ব্যয় করা হয় ঊষার লভ্যাংশ। নোটবন্দির কারণে এই বিষয়গুলিতে ধাক্কা খেয়েছে ঊষা, দাবি ডঃ জানার।
আরও পড়ুন- আমাদের পেটে লাথি মেরেছে, ক্ষতিপূরণ দেবে মোদী? প্রশ্ন যৌনকর্মীদের
শুধু নোটবন্দি নয় কেন্দ্রের ক্যাশলেস ইকোনমির বাস্তবিক ছবি তুলে ধরে অধ্যাপক স্মরজিৎ জানা বলেন, "রেডলাইট এরিয়াতে কার্ডে লেনদেন এখনও হয় না, আগামীতেও হবে না। ইন্টারনাল চ্যালেঞ্জের কারণেই হবে না।" এমন পরিস্থিতিতে সোনাগাছিতে নোটবন্দি এবং ক্যাশলেস পরিকাঠামো গড়ে তোলা যে কার্যত চাঁদ ছোয়ার মতো বিষয়, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন দুর্বারের 'স্যার'।
যৌনকর্মীর সন্তান সুভাষ কুমারও অধ্যাপক জানার কথায় একমত। সুভাষ বলেন,"নোটবন্দির জন্য মায়েদের সমস্যা হয়েছে সবথেকে বেশি।" তবে সুভাষ এও জানিয়েছেন, টাকা পয়সার সমস্যা হলেও সব মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে তাদের। আর সেখানেই বারেবারে উঠে এসেছে ঊষার সাহায্যের কথা। এমন অবস্থায় যৌনকর্মীদের পরম বন্ধু ঊষা কো-অপরেটিভের ওপর এ হেন আঘাতে নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ বাড়ছে সোনাগাছিতে।