‘মা বলেছিলেন, এখনও না ঘুরে দাঁড়ালে, আর কবে দাঁড়াবি’?

পঞ্চাশ পেরিয়েও ব্যারিকেড ভাঙা যায়? লাঠির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো যায়? উত্তর- হ্যাঁ, যায়। যায়। যায়। একশোবার যায়।

Updated By: Aug 10, 2018, 04:56 PM IST
‘মা বলেছিলেন, এখনও না ঘুরে দাঁড়ালে, আর কবে দাঁড়াবি’?

সৌরভ পাল

সে ছিল এক যুগসন্ধিক্ষণ। সাল ১৯৬৯। গণঅভ্যুত্থানের ঠিক আগে আগে। আজকের বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) তখন পাকিস্তানের শাসনাধীন (পশ্চিম পাকিস্তান)। বঙ্গদেশে সবে সবে দানা বাঁধছে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন। কবি হেলাল হাফিজ তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। হঠাত্ একদিন তাঁর নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়-তে তিনি লিখে বসলেন-  

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার  তাঁর শ্রেষ্ঠ সময়  

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তাঁর শ্রেষ্ঠ সময়

মিছিলের সব হাত

কণ্ঠ

পা এক নয়। 

চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে ‘পাকিস্তান দৈনিক’-এর সাহিত্য সম্পাদক আসান হাবিব, কবি হেলাল হাফিজের এই কবিতাটা সেদিন  ছাপতে পারেননি। তবে এটা তিনি পরিষ্কার বুঝেছিলেন, ‘কবি হেলাল হাফিজের আর কবিতা লেখার প্রয়োজন নেই, কারণ তাঁর অমরত্ব পাওয়া হয়ে গিয়েছে’। আজ বছর ৪৯ পর, তেমনই এক অমরত্বের দাবি হয়ত রাখছেন বছর ৫৬-র ‘যুবক’ দিলীপ দাস। 

পঞ্চাশ পেরিয়েও ব্যারিকেড ভাঙা যায়? লাঠির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো যায়? উত্তর- হ্যাঁ, যায়। যায়। যায়। একশোবার যায়। 
আপনার ভয় করে না? উত্তর- না, করে না। ৯০ পেরোনো বৃদ্ধ মা বলেছিল, এখনও না ঘুরে দাঁড়ালে আর কবে দাঁড়াবি? 

যাদবপুরের ৩/১০০ বিদ্যাসাগর কলোনীর ‘দামাল যুবক’ লাল ঝান্ডা নিয়ে দাঁড়ালেন মিছিলের মাথায়। ৯ অগাস্ট বামেদের জেল ভরো কর্মসূচির দিন, ছয়-সাড়ে ছয় ফুটের লোহার ব্যারিকেড টপকে তিনি আঘাত হানলেন সশস্ত্র পুলিসের ওপর। ‘রাষ্ট্রীয় গুন্ডাদের’ বিপরীতে তিনি ছিলেন সেই স্পার্টান, যার হাতে ছিল স্রেফ রক্তবর্ণের পতাকা। ক্যামেরাবন্দি হবার পরই ছবিটা প্রথম জায়গা করে নেয় নিউজ টেলিভিশনের ফুল স্ক্রিনে। আর এখন ওই ছবিটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ভার্চুয়াল আন্দোলনের দেওয়াল লিখন। বলা ভাল, বৃদ্ধতন্ত্রের বাম আন্দোলনে এটাই এখন সেরা পোস্টার।

এই বয়সেও এত সাহস আপনার? প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে উত্তর, কে বলেছে আমার বয়স হয়েছে? আমি মনেই করি না আমার বয়স হয়েছে। 

 ‘বাংলাদেশ হারেনি, হেরে গেছে হাসিনা’

আপনার কী মনে হয়, বাম ছাত্র-যুবরা কি আপনাকে দেখে আরও উজ্জীবিত হবে? দিলীপ বাবুর স্বগতোক্তি, “ওরা উজ্জীবিতই। মিছিলের সামনের সারিতে তো ছাত্র-যুবারাই ছিল। আমাদের সঙ্গে ওদের সম্পর্কটা বরাবরই ভাল। বেকার কাজ না পেলে আমরা যেমন মিছিলে সামিল হই তেমনই শ্রমিক কাজ হারালে সরব হয় ছাত্র-যুবরা। যারা নেতৃত্ব স্থানীয়, তাঁরা উদাসীন না-থেকে সামনে এগিয়ে এলে এই আন্দোলন আরও তীব্র হবে”। 

বাড়ির লোক আপনার এই রণমূর্তি দেখে কী বলল? উত্তর- মা বকেছে।

হ্যাঁ? মানে? সুজন চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করার সময় পুলিস লাঠি চালাতেই সেটা ধরে ফেলি। সেটার জন্যই বকেছে। (মুখে একগাল হাসি নিয়ে)  মায়ের একটাই কথা, পুলিসের লাঠির সামনে যাস কেন? এরপরই তিনি যোগ করেন, আমি বাম প্রভাবিত পরিবারের ছেলে। ছোটবেলায় দাদাকে গ্রেফতার হতে দেখেছি। এখন দাদার ছেলেরাও বাম আন্দোলনে সামিল।

ভারতের সবথেকে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আর আপনার সন্তানরা? কয়েক সেকেন্ড থেমে দিলীপ বাবু দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, “আমার কোনও পিছুটান নেই”। ঠিক যেমনটা নেই জীবদ্দশাতেই অমরত্ব পাওয়া কবি হেলাল হাফিজের... 

.