বাংলা না ইতালি? লকডাউন ভেঙে মণ্ডা-মিঠাই খাওয়ার আগে ভেবে নিন

 পরিসংখ্যান বলছে, এরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাতে থোরাই কেয়ার। 

Updated By: Apr 1, 2020, 11:24 PM IST
বাংলা না ইতালি? লকডাউন ভেঙে মণ্ডা-মিঠাই খাওয়ার আগে ভেবে নিন

নিজস্ব প্রতিবেদন: ভেবেছিলেন এই করোনার বাজারে মৌলিক বাঙালি গবেষণাগুলোকে মিস করবেন। কারণ লকডাউন। চায়ের দোকানের আড্ডা বন্ধ। তাহলে থিয়োরিগুলো আসবে কোথা থেকে? কিন্তু কোথায় কী! দিব্যি চলছে সব গবেষণা। মানে এরকম মারকাটারি সাবজেক্ট নিয়ে চায়ের দোকান নামক ল্যাবরেটরিতে যে রকম হওয়ার কথা, সব একদম সেভাবেই চলছে।

প্রাথমিক গবেষণায় বাংলায় করোনার হামলা ব্যর্থ হওয়ার অব্যর্থ নিদান তো বেড়িয়েই এসেছিল। 'হোয়াটসঅ্য়াপ ইউনির্ভাসিটি'তে জানা গিয়েছিল, এখানকার গরমে নাকি হুল ফোটাতে পারবে না করোনা। তা সে WHO যাই বলুক না কেন। আর আমাদের রোগপ্রতিরোধ কী ইউরোপ আমেরিকার মতো নাকি! ওরা তো এদেশে এসে মিনারেল ওয়াটার খেয়েও ডায়েরিয়া হয়ে মরে। আমরা তো নর্দমার জল আর ভেজাল খেয়ে বড় হয়েছি। ভাগাড়ের মাংসও নিশ্চিন্তে হজম করে ফেলেছি। করোনা আমাদের কী  করবে! শুধু একটু আমলকি আর পেঁয়াজের রস খেয়ে নিলেই হল। দু-এক কোয়া রসুনও খাওয়া যেতে পারে। এসব তো আর বিদেশিরা জানে না। তাই মরছে। বাঙালির আড্ডায় অব্যর্থ নিদান। এই সব সুচিন্তিত মত জনস্বার্থে প্রচার করার জন্যই তো মোড়ের মাথায় আড্ডা দেওয়া জরুরি।

সূর্য তো চাঁদি ফাটাতে শুরু করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এরাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাতে থোরাই কেয়ার। সত্যি বলছি , ধারণাই ছিল না বাঙালিরা এতটা অকুতোভয় জাতি। সংক্রমণ বাড়ুক, মৃত্যু বাড়ুক, লকডাউন হোক। লকডাউন ভাঙার বিপদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বারবার সতর্ক করুন। আমাদের কিচ্ছু আসে যায় না। লকডাউনের শুরুতে রাস্তা ঘাটে ভিড় দেখে মুখ্যমন্ত্রী কড়া হবার কথা বলেছিলেন। তারপরই কিছু ভিডিয়ো ঘুরে বেড়াতে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাস্তায় নামলেই লাঠিপেটা করছে পুলিস। ব্যাস, মুহূর্তে রাস্তা ফাঁকা। তারপর মুখ্যমন্ত্রী পুলিসকে মানবিক হবার কথা বলতেই সবাই আবার হাতির পাঁচ পা দেখতে শুরু করেছে আম জনতা। কিন্তু মানবিক ব্যবহার পাওয়ার জন্য মানুষ হওয়ার দরকার। যাঁরা এই সংকটের মুহুর্তে লকডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় নামছেন, তাঁরা আর যাই হোন, মানুষ নন, অমানুষ। শুনতে খারাপ লাগবে, কিন্তু পুলিসের উর্দি আর হাতের লাঠিকে যদি মানুষ ভয় না পায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা মুস্কিল।

অনেকেরই যুক্তি, রোজ বাজারে না গেলে দুবেলা ঠিক মতো খাবার পাবেন কোথা থেকে। আরে বেঁচে থাকলে চব্যচোষ্য খাওয়ার সুযোগ অনেক পাবেন। পিকনিক বা গেটটুগেদার করার জন্য আপনাদের ছুটি দেওয়া হয়নি। স্পষ্ট বলছি, গড়িয়া,চেতলা,উল্টোডাঙা, নানা জেলাসদর, গ্রামের রাস্তার মোড়, বাজারগুলোতে যাঁরা ভীড় করছেন, আমার -আপনার করোনায় মৃত্যু হলে তাঁরা দায়ি থাকবেন। করোনার ভাইরাস কিন্তু কাউকে সহানুভুতি দেখাচ্ছে না। বয়েস,ধর্ম, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কিচ্ছু দেখছে না। নির্বিচারে আক্রমণ করছে সবাইকে। তাই এখনও সচেতন হোন। এখনও বাড়িতে থাকার প্রয়োজন না বুঝলে পুলিসের লাঠি আপনাদের বোঝাক।

রেশন দোকানে কর্মির অভাবে ভিড় বাড়লে ছুটিতে থাকা সরকারি কর্মী বা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের কাজে লাগানো হোক। এখন তো আর রাস্তায় ভিড় নেই। আর এই বাজারে মিষ্টির দোকান খোলা রাখাটা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। মিষ্টি না খেলে বরং সুগার কমবে। শরীরে মিষ্টি থাকলেই কিন্তু মিষ্টি মুখ করতে ছুটে আসছে করোনা। আবার বলছি, নিজে বেঁচে থাকা আর অন্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সতর্ক হোন। কথা শুনুন। ঘরে থাকুন। নাহলে কিন্তু আবার ঝেড়েঝুড়ে বার করতে হবে সেই পুরনো লাইনগুলোকে....রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি। দেশটাকে ইতালি হতে দেবেন না। ইতালির নাগরিকরাও ভেবেছিলেন, ভাইরাস তাঁদের কিচ্ছুটি করতে পারবে না। এখন সেখানে মৃত্যুমিছিল।    

আরও পড়ুন- রাজ্যে ৩ জন মারা গিয়েছে, তার মধ্যে একজন নিউমোনিয়ায়: মমতা

.