সিদ্ধিদাতার বরেই উনিশে মোক্ষলাভের আশা

কিন্তু হঠাত্ গণেশ পুজোয় এত ঝোঁক কেন? গণেশ প্রেমের নেপথ্যে লুকিয়ে কোন অঙ্ক? বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা ঘাঁটতে ঘাঁটতে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে আসছে কয়েকটি বিষয়...

Updated By: Sep 13, 2018, 09:36 AM IST
সিদ্ধিদাতার বরেই উনিশে মোক্ষলাভের আশা

নিজস্ব প্রতিবেদন : উত্সবপ্রিয় বাঙালির শুধুই পুজোর আনন্দে শান নাকি উত্সবের আড়ালে রাজনীতির সমীকরণের খেলা? গণেশ পুজো ঘিরে শহরের আনাচে কানাচে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে এই একটাই প্রশ্ন। হবে নাই বা কেন? পরিসংখ্যান-ই তো বলে দিচ্ছে, মা-কে রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে ছেলে। আর সেই সংখ্যাতত্ত্বের আড়ালেই নাকি লুকিয়ে আসল খেলা।

কী সেই খেলা?
হিসেব বলছে, খুব বেশি নয়, মাত্র এই একবছর আগে শহরে গণেশ পুজো হত সাড়ে ১৩০০টি। একবছরে সেই সংখ্যাটা এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০০-তে। এখন, শহরের মোট দুর্গাপুজো হয় সাড়ে ৩০০০টি। তাই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার আগেই গণেশ পুজোকে কেন্দ্র করে আগাম উত্সবমুখর হতে চলেছে শহর কলকাতা।

কিন্তু হঠাত্ গণেশ পুজোয় এত ঝোঁক কেন? গণেশ প্রেমের নেপথ্যে লুকিয়ে কোন অঙ্ক? বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা ঘাঁটতে ঘাঁটতে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে আসছে কয়েকটি বিষয়। কী সেই বিষয়গুলি?

প্রথমত- কোনও অঞ্চলের পুজো সাধারণত সেই অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তিকে তুলে ধরে। এখন, খুব স্বাভাবিকভাবেই একথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, শহরে অবাঙালি জনসংখ্যা বেড়েছে। শুধু শহরে নয়, অবাঙালি জনসংখ্যা বেড়েছে রাজ্যেও। রাজ্যের মোট ৪২টা আসনের মধ্যে ৭টি আসনে অবাঙালি সংস্কৃতির বেশ ভালোরকম প্রভাব রয়েছে। এখন, বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। সেই লোকসভা ভোটে রাজ্যের শাসকদলের টার্গেট ৪২-এ ৪২। খুব প্রাসঙ্গিক কারণেই রাজ্যের অবাঙালি ভোটব্যাঙ্কের সমর্থন ছাড়া, এই লক্ষ্যপূরণ কোনওভাবেই সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন, ডিএ মামলায় রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব স্যাটের

দ্বিতীয়ত- পুজো জনসংযোগের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। সেই হাতিয়ারকে অবহেলায় 'ভোঁতা করে' দিতে চান না কোনও রাজনৈতিক নেতা-ই। দেখা গেছে, কলকাতা শহরের প্রতিটি বড় দুর্গাপুজোর পিছেন রয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। এর অন্যথা হচ্ছে না গণেশ পুজোর ক্ষেত্রেও। শহরের প্রায় ৬০০টি গণেশ পুজোর পিছনে রয়েছেন মদন মিত্র।

মদন মিত্তিরের সাফ বক্তব্য, "বিজেপি গণেশকে দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। এসব করে বিজেপি ভোটও কিনতে পারবে না। পুজোও কিনতে পারবে না।" তিনি জানান, গণেশ পুজো তাঁরা আজ হঠাত্ করছেন না। বহুদিন ধরেই গণেশের পুজো করে আসছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতা বলেন, "গণেশের আসল ভক্ত আমরাই।" যদিও এর পিছনে রাজনীতির কোনও অঙ্ক রয়েছে বলে মানতে রাজি নন তিনি। তাঁর দাবি, গণেশ পুজোটা নেহাতই আনন্দ-উত্সবের জন্য। তবে গণেশ পুজোর পর তিনি ৭ দিন ধরে ভারতমাতার পুজো করবেন বলে জানিয়েছেন।

গণেশ পুজোর 'দৌড়ে' পিছিয়ে নেই বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্তও। তাঁরও একটাই কথা। তিনি বিগত ৫ বছর ধরে গণেশ পুজো করে আসছেন। মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতেই তিনি পুজোর আয়োজন করে থাকেন বলে দাবি করেছেন। শুধু পুজো করা-ই নয়। গণেশ পুজোর উদ্বোধন ঘিরেও রীতিমতো যেন প্রতিযোগিতা চলছে নেতাদের মধ্যে। শাসকদলের নেতাদের প্রত্যেকে গড়ে প্রায় ৫০টা করে পুজোর উদ্বোধন করছেন।

আরও পড়ুন, ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল কলকাতা-সহ একাধিক জেলা

এ তো গেল সংখ্যার হিসেব-নিকেশ। এবার গণেশ পুজোয় সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে যেমন চমক রয়েছে, তেমন চমক রয়েছে আয়োজনেও। গণেশ পুজো ঘিরে এলাহি আয়োজন করা হয়েছে এবছর। তেঘড়িয়ায় তৈরি করা হয়েছে ৩০ ফিটের বিশাল গণেশ। কলকাতায় সবচেয়ে উঁচু গণেশ মূর্তি দেখতে ইতিমধ্যেই লোকের ভিড় জমতে শুরু করেছে। পুজোতে মহারাষ্ট্র থেকে আসছে ঢাকির দল। পুজো করার জন্য আসছে পণ্ডিতদের দলও। সবমিলিয়ে সাজো সাজো রব। আর এত ব্যবস্থাপনার পিছনে আসল কারণ যে ভোটব্যাঙ্কে মোক্ষলাভ-ই, তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। 

আরও পড়ুন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরকারি অনলাইন ক্যাব পরিষেবা চালুর দাবি মদনের

.