কার্যত অর্ধাহারে রাজ্যের ১৫ লক্ষ স্বর্ণশিল্পী

ধনতেরাস শেষ। আসছে বিয়ের মরশুম। ঝলমলিয়ে ওঠা সোনার গয়নায় বুঁদ বিত্তশালীরা। আর যারা দিন রাত এক করে তৈরি করছেন সেইসব অলঙ্কার, তাদের সংসারে হাঁড়ি চড়ছেনা অভাবের তাড়নায়। কেন স্বর্ণশিল্পীদের এই হাল? বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দারের অভিযোগ, স্বর্ণকারদের মজুরি কমতে কমতে দৈনিক মাত্র ষাট টাকায় এসে দাঁড়ানোয় তাদের সংসার চালানো এককথায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

Updated By: Nov 3, 2011, 05:27 PM IST

ধনতেরাস শেষ। আসছে বিয়ের মরশুম। ঝলমলিয়ে ওঠা সোনার গয়নায় বুঁদ বিত্তশালীরা। আর যারা দিন রাত এক করে তৈরি করছেন সেইসব অলঙ্কার, তাদের সংসারে হাঁড়ি চড়ছেনা অভাবের তাড়নায়। কেন স্বর্ণশিল্পীদের এই হাল? বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দারের অভিযোগ, স্বর্ণকারদের মজুরি কমতে কমতে দৈনিক মাত্র ষাট টাকায় এসে দাঁড়ানোয় তাদের সংসার চালানো এককথায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রাজ্যের পনেরো লক্ষ স্বর্ণশিল্পী ছড়িয়ে রয়েছেন সিঁথি, দমদম, বড়বাজার, ভবানীপুরের নাম না জানা গলিতে। বারাসতে-রাজারহাটে-নদিয়ায়-মুর্শিদাবাদে। দশ গ্রাম গয়না সোনার দাম যখন সাতাশ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে, তখন এদের মজুরি ক্রমশঃ কমছে কেন। বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, সোনার গয়না তৈরির মূলত ৮টি ধাপ।সোনা গলানো বা মেল্টিং, তার এবং পাত তৈরি করা, গুলি বা বল তৈরি, চেইন তৈরি কাটিং, ফিলিং, পালিশ এবং ছেলাই বা জেল্লা ফেরানো। এগুলো করতে প্রতি একশো গ্রাম সোনার মধ্যে নষ্ট হয় ৩.৫ গ্রাম। ২০০২ সাল পর্যন্ত বড় বড় সোনার দোকান বা শোরুম থেকে এই কারিগরদের কাছে যে কাজের বরাত আসত, তাতে ডিজাইন ভেদে প্রতি একশো গ্রামে ৬.৫ থেকে ১২ গ্রাম সোনা নষ্ট হবে ধরে নেওয়া হত। কারিগররা সুক্ষ কাজের মাধ্যমে যে সোনা বাঁচাতেন তা থেকেই তাদের পেট চলত। অর্থাত প্রতি একশো গ্রামে তখন কারিগররা মাত্র ৩.৫ গ্রাম সোনা নষ্ট করতেন। বাকি ৩ থেকে ৯ গ্রাম সোনা তাদের হাতে থাকত। সেটাই ছিল তাদের রোজগার। ২০০৩ সাল থেকে নিয়ম পাল্টালো। স্বর্ণকার এবং পাইকাররা জানিয়ে দিলেন, একশো গ্রামে নষ্ট সোনার পরিমাণ কমিয়ে ৩.৮ গ্রাম করা হচ্ছে। অর্থাত্ নতুন নিয়মে একজন কারিগরের একশো গ্রাম গয়না তৈরির সময় সোনা রোজগারের পরিমাণ কমে দাঁড়ালো শূণ্য দশমিক ৩ গ্রাম। অর্থমূল্যে গড়ে যার পরিমাণ দৈনিক পঞ্চাশ থেকে ষাট টাকা। এরওপর রয়েছে উত্পাদন খরচ যেমন গ্যাসের দাম, বিদ্যুত্ মাশুল, ঘর ভাড়া, ছাঁচের মোম বা প্লাস্টার তৈরি, যন্ত্রপাতি কেনার খরচ এবং কায়িক শ্রম, যা দিনে কমপক্ষে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা। তারওপর ধনতেরাস সহ বিভিন্ন উত্সবে বিনা মজুরিতে গয়না তৈরির আকর্ষণীয় অফারের সরাসরি বলি হচ্ছেন এই স্বর্ণকাররাই। অবস্থা যা তাতে নতুন করে কেউ এই শিল্পে আসতে চাইছেন না। পুরনো শিল্পীরাও বেছে নিচ্ছেন বিকল্প পেশা। ফলে প্রশ্ন উঠছে শিল্পের ভভিষ্যত্ নিয়েই।

.