Kolkata Tangra Case Update: বিষ পায়েস খেয়েই ট্যাংরায় আত্মঘাতী ৩ জন! ২ মহিলার হাতের ক্ষত বদলে দিতে পারে সব তত্ত্ব
Kolkata Tangra Case Update: গতকাল ট্যাংরার অতুল শূর রোডের বাড়ির তিনতলায় ৩টে আলাদা ঘরে ৩টি দেহ উদ্ধার হয়। দেহ উদ্ধার হয় দুই ভাই প্রসূন ও প্রণয়ের দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা দে (বড় বউ) ও রোমি দে (ছোট বউ)-এর

বিক্রম দাস: ট্যাংরার অতুল শূর রোডে ২ মহিলা ও এক নাবালিকার মৃত্যুর ঘটনায় রহস্য ও ধোঁয়াশা বেড়েই চলেছে। এখনওপর্যন্ত এক ভাই পুলিসের কাছে যে বয়ান দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে বাজারে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায় সমস্যা ছিল। তাই সবাই একসঙ্গে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার রাতে পূর্ব পরিকল্পনা মতোই প্রত্যের বিষ মেশানো পায়েস খান। সবার প্রথম সেই বিষের এফেক্ট হয় নাবালিকা প্রিয়ংবদা দে-র উপরে। তার মুখ দিয়ে গ্য়াঁজলা বের হতে শুরু করে। তা দেখেই ভয় পেয়ে গিয়ে বাড়ি দুই গৃহবধূ হাতের শিরা কেটে ফেলেন। বাড়ির ৩ পুরুষ সদস্যের সামনেই মৃত্য়ু হয় ওই ৩ জনের।
আরও পড়ুন-এখনই রেহাই নেই, বজ্রবিদ্যুত্-সহ শিলাবৃষ্টিতে তোলপাড় হবে গোটা দক্ষিণবঙ্গ, দুর্যোগ কাটবে কবে?
তিনজনের মৃত্যুর পরই বাড়ির তিনজন পুরুষ গাড়ি নিয়ে বের হন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে। তবে তার আগে তিনজন বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে যায়। তবে শেষমুহূর্তে তারা সিদ্ধান্ত বদল করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ইচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে তার আত্মহত্যার পরিকল্পনা করে। তবে ওই বয়ান কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখছে পুলিস।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সময় তার ১২টা ৫১ মিনিট। অভিষিক্তা মোড়ের কাছে দুর্ঘটনা ঘটে ভোর ৩টে ১৫ নাগাদ। মাঝের আড়াই ঘণ্টা কোথায় ছিলেন ৩ জন? সবেমিলিয়ে ট্যাংরাকাণ্ডের পরতে পরতে রহস্য তৈরি হচ্ছে। আত্মহত্য়া নাকি পরিকল্পিত খুন, দুর্ঘটনা নাকি সাজানো ঘটনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সবাই যদি আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেই থাকে তাহলে বাড়ির মধ্যে তারা আত্মহত্যা করলেন না কেন?
এদিকে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গতকাল যখন ৩টি মৃতদেহ উদ্ধার হয় তখন দেহ দেখে পুলিসের নজরে আসে দুই মহিলার কব্জিতে কাটা দাগ পাওয়া গিয়েছিল। একজন মহিলার গলাতেও ক্ষত ছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে ওই ক্ষত নিহতরা নিজেই করেছিলেন না তা অন্য কেউ করেছিল। তদন্তকারীরা মনে করছেন ওই ক্ষতগুলি নিহতদের নিজেদের করা নয়। অন্য কেউ সেই ক্ষত করছে। ফলে আত্মহত্যার যে তত্ব উঠে আসছে তা পাল্টে যেতে পারে। এসে যেতে পারে খুনের তত্ব। তবে পোস্ট মর্টেম হওয়ার পরই তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। নাবালিকার শরীরে কোনও আঘাত ছিল না। তার নাক থেকে ফ্লুইড বের হয়েছিল। তাহলে কি অন্য কোনওভাবে মারা হয়েছিল তাকে? এখনও পর্যন্ত ১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়েছে। বাকীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।
উল্লেখ্য, গতকাল ট্যাংরার অতুল শূর রোডের বাড়ির তিনতলায় ৩টে আলাদা ঘরে ৩টি দেহ উদ্ধার হয়। দেহ উদ্ধার হয় দুই ভাই প্রসূন ও প্রণয়ের দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা দে (বড় বউ) ও রোমি দে (ছোট বউ)-এর। একইসঙ্গে উদ্ধার হয় ছোট ভাইয়ের মেয়ে প্রিয়ংবদা দে-রও দেহ।
এখন প্রিয়ংবদা দে-র শরীরে কোনও রক্তপাতের ক্ষতচিহ্ন না থাকলেও রোমি দে-র গলায় ও হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পাশাপাশি, সুদেষ্ণা দে-র হাতেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওদিকে নিহত নাবালিকার মুখ থেকে শুধু গ্যাঁজলা বেরতে দেখা গিয়েছে।
উদ্ধার হয়েছে একটি পেপার কাটিংয়ের ছুরি। বাড়ির দোতলা সহ গোটা বাড়িতেই বিক্ষিপ্তভাবে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। ট্যাংরা কাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে ৩ডি ম্যাপারেরও এসেছে ঘটনাস্থলে। রক্তের নমুনার পাশাপাশি অন্যান্য তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করবেন তাঁরা।
দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে গাড়ির ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক রিস্টব্যান্ড। ক্রিস্টাল, চন্দন কাঠের তৈরি সেগুলি। দুর্ঘটনার জেরে সামনে থেকে দুমড়ে যায় গাড়িটি। দুটি এয়ারব্যাগ-ই রয়েছে খোলা অবস্থায়। সিটে রক্ত। সামনের সিট ভেঙে গিয়েছে।
এখন এই পরিবারের এক পরিচিতের বয়ানে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। মনোজ কুমার গুপ্তা নামে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি লেদার সরবরাহ করতেন এই পরিবারকে। তিনি জানান, ওই পরিবারের দেওয়া ২৩ লাখ টাকার চেক বাউন্স করেছিল।
ট্যাংরা কান্ড,দুর্ঘটনা ঘটনায় জখম প্রণয় দে, এবং তার ছেলে সহ প্রসূণ দে, বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনজনেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল তবে সংকটমুক্ত নন তারা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ভর্তি করার পর গতকাল রাতে অপারেশন হয়েছে প্রণয় দে এবং তার ছেলের। প্রণয় দে,ফিমার বোন ভেঙেছে, তার অপারেশন হয়েছে গতকাল। শিশুটির ডান হাতের কব্জির উপরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। ডান হাতের আঙ্গুলের হাড় ভেঙেছে। বাম কাঁধ এবং হাতের জয়েন্টের হাট ভেঙ্গে গিয়েছে। এই দুজনকে আই সি ইউ তে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রসূণ দে আই সি ইউ তে ভর্তি রয়েছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)