KMC Election Result 2021: "বামেরা থাকা শুভ", বামেদের একা চলার নীতিতে সাফল্যের ট্রেন্ডে বললেন ফিরহাদ
প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বামেদের ভোট।
অনুষ্টুপ রায় বর্মন: অবশেষে "একলা চল রে" নীতিতে কিছুটা হলেও সাফল্যের মুখ দেখল বাম শিবির। বিধানসভা উপনির্বাচনের সময় থেকে এই নীতিতে ভরসা রাখা শুরু করে বাম শিবির। পুরভোটে তারই ফলাফল পাওয়া গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
২০২১ এর কলকাতা পুরভোটে কিছু আসন কংগ্রেস এবং সমমনোভাবাপন্ন প্রার্থীদের জন্য ছেড়ে রেখেছিল বাম দলগুলি। যদিও পরে প্রার্থী ঘোষণার সাংবাদিক বৈঠকে কার্যত জোট ভাঙার বার্তা পাওয়া যায় বাম নেতৃত্বের গলায়। অত্যন্ত আগ্রাসী ভঙ্গিতে সাংবাদিক বৈঠক থেকে পুর নির্বাচনে লড়াইয়ের ডাক দেয় তাঁরা। স্থানীয় স্তরে প্রয়োজন ভিত্তিক জোট হলেও সেখানে বিধান ভবন অথবা আলিমুদ্দিন কারও তরফেই কোনও অনুমোদন থাকবেনা বলে জানিয়ে দেয় তাঁরা।
অন্যদিকে ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে সেই আসনে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। তাদের দাবি ছিল বিজেপি বিরোধী প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় নিশ্চিত করতেই তাদের এই পদক্ষেপ। অন্যদিকে বামেরা সেই পথে না হেঁটে সব আসনেই প্রার্থী দেয়। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, দুই হেভিওয়েটের লড়াইয়ের মাঝে পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি বাম প্রার্থী।
কলকাতা পুরনির্বাচনের শুরু থেকেই বামেদের বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল বিশ্লেষকদের। সকলের আগে একবারে সম্পূর্ণ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাকে নিজেদের ইস্তেহার প্রাধান্য দেওয়া এবং চিরাচরিত পদ্ধতিতে নিজেদের ইস্তেহার প্রকাশ করার বদলে সোশাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ইস্তেহারকে নতুন রূপে আরও বেশি মাত্রায় নতুন ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাওয়া। রেড ভলেন্টিয়ার ফোর্সকে কাজে লাগিয়ে তাদের মধ্য থেকে প্রার্থী তুলে আনার মধ্য দিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করে তারা।
বিধানসভা ভোটের হিসেবে, কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ড অঞ্চলে তৃণমূলের ভোট ছিল ৫৯.০৩ শতাংশ। সেখানে বিজেপির ভোট ছিল ৩২.৯২ শতাংশ। এই দুই "গোলিয়াথ"-র যুদ্ধে "ডেভিড" বামেদের ভোট ছিল ৪ শতাংশ। কলকাতা পুরভোটের ফলাফলের ট্রেন্ডে দেখা গেছে তৃণমূলের ভোট বেড়ে হয়েছে ৭১ শতাংশ এবং বিজেপির ভোট কমে হয়েছে ৯.৩ শতাংশ। অর্থাৎ বিজেপি-র ভোট কমেছে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। এই ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ ভোটের একটা সিংহভাগ অংশ তৃণমূলের দিকে গেলেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে বামেদের দিকে। ফলত বামেদের ভোট শতাংশ ৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ১১.৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের ভোট। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, সব রাজনৈতিক দলকেই নিজেদের মত করে এগোতে হয়। যেভাবে রাজ্যে TMC এবং দেশে BJP চলছে তার বিরুদ্ধে লক্ষ ছিল তাদেরকে হারানো। এখানে একা অথবা দোকার বিষয় নয়। এখানে TMC-র বিরুদ্ধে বিকল্প হিসেবে BJP-কে তুলে আনার যে প্রচেষ্টা হচ্ছে তা যে ঠিক নয়, এটা তার প্রমানের শুরু। অন্যদিকে তিনি আরও বলেন যে এই পার্সেন্টেজ ঠিক নয়। ঠিক ভোট হতে দেওয়া হয়নি এবং ভোট হলে ফলাফল আরও অনেক ভাল হত বলে তিনি মনে করেন।
গত বিধানসভা ভোটে দেখা গেছে শহরাঞ্চলে বাম প্রার্থীদের ভোট শতাংশ গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি। ফলত বিভিন্ন সময়ে মনে করা হয়েছিল বামেরা কলকাতা পুরভোটে কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরতে পারে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল বিজেপিকে পিছনে ফেলে নিজেদের হারানো জায়গা অনেকটাই পুনরুদ্ধার করল তারা। ৬৫টি আসনে দ্বিতীয় থানে বামফ্রন্ট, অন্যদিকে ১৫টি আসনে কংগ্রেস এবং ৫৪টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি। সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার জানিয়েছেন, তাঁরা আগেই বলেছিলেন বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি মানুষের মনে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন একা লড়ার ফলে ভোটারদের মনে তাদের পাশের দাঁড়ানোর ইচ্ছাটা এই ভোটের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর মতে, তারা একসঙ্গে লড়াই করলে অনেকের কাছেই এই জোট কার্যকর মনে হয়না। ফলত সেই ভোট অন্যদিকে চলে যেতে দেখা গেছে। অন্যদিকে গণনাকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে, বিরোধী হিসেবে বামেরা-ই থাকছে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, "বামেরা থাকাটা শুভ। কারণ বিভেদমূলক রাজনীতি বেশিদিন বাংলায় থাকতে পারে না।"