Kolkata: বাবার মৃত্যুতে বাড়ি বিক্রি করে হোটলে? রুমে মা-মেয়েকে পাওয়া গেল ভয়ংকর অবস্থায়!

কিড স্ট্রিটের যে হোটেলে মা-মেয়ে থাকতেন, তার রুম ভাড়া ছিল প্রত্যেকদিন ৪৮০০ টাকা। খাওয়া-দাওয়ার খরচা আলাদা। ৮ জুন চেক ইন করার পর থেকে প্রতিদিনের টাকা ঠিক সময়ই দিয়ে দিতেন। ফলে আর্থিক অনটন থাকলে, হোটেলের রুম ভাড়ার মোটা অঙ্কের টাকা কোথা থেকে মেটাতেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

Updated By: Jul 20, 2023, 12:38 PM IST
Kolkata: বাবার মৃত্যুতে বাড়ি বিক্রি করে হোটলে? রুমে মা-মেয়েকে পাওয়া গেল ভয়ংকর অবস্থায়!
হরিদেবপুরের ফ্ল্যাট, মা পলি মিত্র ও মেয়ে ইশিতা মিত্র

বিক্রম দাস ও রণয় তেওয়ারি: বাড়ি বিক্রি করে হোটেলে! সেই হোটেলেই মায়ের রহস্যমৃত্যু। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার মেয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার কিড স্ট্রিটে। কিড স্ট্রিটের হোটেল থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মা-মেয়ে দুজনকেই। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় দুজনকে। সেখানেই চিকিৎসকরা মাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওদিকে মেয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জানা গিয়েছে, মায়ের নাম পলি মিত্র। বয়স ৫৫ বছর। মেয়ের নাম ইশিতা মিত্র। বয়স ৩৫ বছর। ৮ জুন হোটেলে চেক-ইন করেছিলেন মা-মেয়ে। তারপর থেকে হোটেলেই ছিলেন। 

বুধবার কিড স্ট্রিটের এমিরেটাস নামক হোটেল থেকে অচেতন অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিস। তারপর হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিসের অনুমান, মা-মেয়ে দুজনেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। দুজনেই ওভার ডোজ ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেন। তাতে মায়ের মৃত্যু হলেও, মেয়ে বেঁচে গিয়েছেন। প্রসঙ্গত, হোটেলের ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি সুইসাইড নোট। যা থেকেই জোরালো হচ্ছে আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু কেন এভাবে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিল মা-মেয়ে? প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, আদতে হরিদেবপুরের ব্যানার্জি পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন মা ও মেয়ে। স্বামী স্বপন মিত্রর মৃত্যুর পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন স্ত্রী পলি মিত্র ও মেয়ে ইশিতা মিত্র। সেইসঙ্গে আর্থিক অনটনও ছিল। যে অবসাদ ও অনটনের কথা সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন মা-মেয়ে। 

আরও জানা গিয়েছে, মা-মেয়ে নাকি সিদ্ধান্ত নেন যে, সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দেবেন। সম্পত্তি বিক্রি করে হোটেলে থাকবেন। এখন ৮ জুন তাঁরা হোটেলে চেক-ইন করেন। তবে তার আগেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিয়েছিলেন কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা করা রয়েছে। কারণ, কিড স্ট্রিটের যে হোটেলে মা-মেয়ে থাকতেন, তার রুম ভাড়া ছিল প্রত্যেকদিন ৪৮০০ টাকা। খাওয়া-দাওয়ার খরচা আলাদা। ৮ জুন চেক ইন করার পর থেকে প্রতিদিনের টাকা ঠিক সময়ই দিয়ে দিতেন। ফলে আর্থিক অনটন থাকলে, হোটেলের রুম ভাড়ার মোটা অঙ্কের টাকা কোথা থেকে মেটাতেন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও পড়শিরা জানাচ্ছেন যে, তাঁদের আর্থিক সমস্যা ছিল। আর সেই নিয়ে মা-মেয়ের নিত্য ঝগড়াও হত। লকডাউনের সময় থেকেই আর্থিক অনটনের শুরু। এমনকি খাওয়ার টাকা পর্যন্ত থাকত না। ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণের টাকা পর্যন্ত তাঁরা দিতে পারতেন না। এদিকে তাঁরাই আবার দামী হোটেলে গিয়ে ওঠেন!

হোটেল সূত্রে খবর, ১৯ তারিখ সকালে হোটেল থেকে বেরোনোর কথা ছিল মা-মেয়ের। সেই কারণে ১৮ তারিখ থেকেই ফোন করা শুরু করেছিল হোটেল কর্তৃপক্ষ। তারপর ১৯ তারিখ সকালে ব্রেকফাস্ট নিয়ে যাওয়া হয় রুমে। কিন্তু তখন আর কেউ-ই দরজা খোলেননি। সারাদিনে কেউ আর রুম থেকে বেরও হননি। চেক আউটের জন্যও যাননি। তাতেই সন্ধের দিকে গাঢ় হয় সন্দেহ। পুলিসে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। ওদিকে মাস্টার কি দিয়ে রুমের দরজা খোলা হয়। দরজা খুলতেই দেখা যায়, মা-মেয়ে দুজনই খাটের উপর পড়ে আছেন। পাশেই পড়ে রয়েছে একটি সুইসাইড নোট। হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিসকে জানিয়েছে, হোটেলে ওঠার আগে মা-মেয়ে তাদের জানিয়েছিল যে, তাঁদের বাড়ি কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। সেই জন্যই তাঁরা হোটেল রুম ভাড়া নিতে চায়। 

তবে দুজনেরই ব্যবহার খুব খারাপ ছিল। হোটেল বয়দের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করতেন তাঁরা। কিন্তু যেহেতু প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন মিটিয়ে দিতেন, তাই হোটেলের তরফে 'গেস্ট'কে কিছু বলা হয়নি। তবে তাঁদের উপর সন্দেহ হাওয়ায়, এর আগেও একবার পুলিসকে জানানো হয়েছিল বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। ওদিকে পড়শিরা জানাচ্ছেন, আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাঁরা বলছেন, ২৫ দিন আগে মা-মেয়েকে শেষ দেখেছিলেন। কারও সঙ্গেই তেমন মেলামেশা করতেন না তাঁরা। এমনকি পলি মিত্রের এক ছেলেও রয়েছে। ছেলে বিয়ের পরই আলাদা হয়ে যান। মা-বোনকে দেখতেন না ছেলে। তবে ফ্ল্যাটটা নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝেই মাকে আইনি নোটিস পাঠাতেন। সবমিলিয়ে গোটা ঘটনা ঘিরে ধোঁয়াশা ছড়িয়েছে। ঘনীভূত রহস্য।

আরও পড়ুন, ভয়ংকর! বাবা-মাকে মেরে ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে চম্পট ছেলের

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.