আধিকারিকদের সই জাল করে অটোর পারমিট দিচ্ছে দালাল
খোদ রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসারের সই জাল করে অটোর পারমিট দিচ্ছে দালালচক্র। একই চেসিস নম্বরে দেওয়া হচ্ছে একাধিক পারমিট। ফলে কেউ অটো পাচ্ছেন। কেউ দালালকে টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। `২৪ ঘণ্টা`র অন্তর্তদন্তে প্রকাশ্যেই এল মোটরযান দফতরের এই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি।
খোদ রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসারের সই জাল করে অটোর পারমিট দিচ্ছে দালালচক্র। একই চেসিস নম্বরে দেওয়া হচ্ছে একাধিক পারমিট। ফলে কেউ অটো পাচ্ছেন। কেউ দালালকে টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন। `২৪ ঘণ্টা`র অন্তর্তদন্তে প্রকাশ্যেই এল মোটরযান দফতরের এই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি।
কী ভাবে চলছে দুর্নীতি? বছর ৩৫-এর ভৈরব বসু। ৩ বছর আগে তারাতলা-ঠাকুরপুকুর রুটে টু-স্ট্রোক অটো চালাতেন। ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের কাছে একটা টালির চালের বাড়িতে থাকতেন। আপাতত তিনি একেবারে অন্য ভূমিকায়। ভৈরববাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কিছু ব্যক্তির সই জাল করা প্র্যাকটিস করছেন তিনি। কাদের সই? আলিপুর মোটরযান দফতরের রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার চপল ব্যানার্জি, অতিরিক্ত আরটিও গোবিন্দ প্রসাদ হালদার, ফোর-স্ট্রোক অটো পারমিট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত করণিক গোপাল চন্দ্র সাহা এবং গোপালবাবুর সহকারি করণিক দীপক সেন।
এই ৪ জনের সই কেন জাল করছেন তিনি? প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই সামনে এল মোটরযান দফতরের কোটি টাকার দুর্নীতি। দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রুটের কমপক্ষে ৬৫ জন অটোটালককে পুরনো অটোর বিনিময়ে এলপিজি অটো পারমিট যোগাড় করে দেওয়ার ভুয়ো দলিল দস্তাবেজ বাড়িতে বসেই তৈরি করছেন তিনি। প্রতিটি অটোচালকের কাছে এই বাবদ তিনি নিয়েছেন দেড় থেকে পৌনে ২ লক্ষ টাকা। অর্থাত্ জালিয়াতি করে প্রায় এক কোটি টাকা পকেটস্থ করে এখন তিনি বেপাত্তা।
কীভাবে হত এই জালিয়াতি? প্রথমে আবেদনপত্রের ফর্ম সুকৌশলে হাতানো। তারপর তাতে ভুয়ো চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর বসানো। তারপর যাবতীয় মনগড়া নথি বসিয়ে মানুষকে প্রতারিত করা। ফাঁদ পাতা হত আলিপুর আরটিও অফিসের দরজায়। জাল সই করে নিখুঁত কপি গ্রাহকের হাতে চলে যেত অফিসের ভিতর থেকে। অর্থাত্ সবটাই হত পদস্থ প্রশাসনিক কর্তাদের নাকের ডগায়। তাঁদেরই অফিসের ভিতরে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে শহরে টু-স্ট্রোক ডিজেল অটো বাতিলের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ২০০৯-এর অক্টোবরের মধ্যে নির্দেশ সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার নির্দেশ আসে। তবে বাজারে যথেষ্ট সংখ্যক নতুন অটো না থাকায় ৩১ মার্চ ২০১১-র পর আদালতের অনুমতি নিয়েই নতুন এলপিজি অটো ক্রয়-বিক্রয়ের পারমিট দেওয়া বন্ধ রাখে রাজ্য। ইতিমধ্যেই যে সমস্ত টু-স্ট্রোক অটো চালকরা এলপিজি অটোর পারমিট অফার লেটার পেয়েছেন, তাঁদের হাতে অটো তুলে না দেওয়া পর্যন্ত নতুন পারমিট ইস্যু বন্ধ রাখা হয়।
মজার ব্যাপার, এই নির্দেশিকা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র না জানায় ২০১১-র ৩১ মার্চেরপর থেকে গত প্রায় একবছরে ভৈরবের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন ওই হতভাগ্য অটোচালকরা। কিন্তু অফিস চৌহদ্দিতেই বছরের পর বছর এই ভাবে দুর্নীতি চলছে, কর্তৃপক্ষ কিছুই জানতে পারেনি? দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার চপল ব্যানার্জি`র অকপট স্বীকারোক্তি, তাঁর অফিস চৌহদ্দিতে ঘুঘুর বাসা ভাঙার মত পরিকাঠামো, সময় বা ইচ্ছা, কোনওটাই এই মুহূর্তে নেই। তাই গোটা অফিস জুড়ে দালালচক্র ঠেকাতে কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই। নেই ৩১ মার্চের পর নতুন পারমিট জারি না করার বিজ্ঞপ্তিও। সরাসরি `২৪ ঘণ্টা`র সঙ্গে কথাও বলতে চাননি চপলবাবু।