ইচ্ছে ডানা উড়ল আকাশে: প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখল সোনাগাছির যৌনকর্মীদের সন্তানরা
সৌরভ পাল
মহাসপ্তমীর সকালে নতুন জামা, নতুন জুতোতে এক দল কচিকাঁচা লাইন দিয়ে উঠে পড়ল বাসে। গন্তব্য- হাজার হাত থুড়ি, দেশপ্রিয় পার্ক। আর উদ্দেশ্য ঠাকুর দেখা। হ্যাঁ, জীবনে প্রথম এমন একটা সকাল দেখল সোনাগাছি, আর যারা লাইন দিয়ে বাসে চড়ল তারা সবাই যৌনকর্মীদের সন্তান। এই অভিনব পদক্ষেপ এবং স্নেহের ছোঁয়া যিনি নিয়েছেন তিনি শ্রী সমর রায়, আর সমরবাবুকে এই কাজে সাহায্য করেছে 'আর্ট অফ লিভিং' সংগঠন।
হাতে মেহেন্দি...চলছে তোড়জোড়...
সমাজের এই অংশটা, অর্থাত্ যৌনপল্লী এলাকা ঐতিহাসিকভাবেই মূলস্রোত থেকে ব্রাত্য। তার উপরে যৌনকর্মীদের সন্তান! তারা তো আরওই অনাহূত। পিতৃতান্ত্রিক 'ভদ্র সমাজ' যেখানে ব্যক্তিকে চিনে নেয় বাবার নাম-পদবীর সিঁড়ি বেয়ে, সেখানে 'স্বীকৃত বেজম্মা' (সমাজের চোখে)-দের আবার স্বীকৃতি কিসের? সোনাগাছির আনাচে কানাচে বেড়ে ওঠা এই কচি প্রাণগুলোও যেন এই নির্বাসনটাকে গা সওয়া করে নিয়েছে। তাদের রোজকার জীবনে মাথা তুলে বাঁচাটাই যেখানে অসম্ভব, সেখানে ঠাকুর দেখার বিলাসিতাটা প্রায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এখানেই সমরবাবুর মতো ভিন্ন ধারার সমাজকর্মীর এগিয়ে আসা এবং বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া, "এই শিশুগুলোকে পুজোর আনন্দ দেওয়ার পরিকল্পনাটা অনেকদিনের। এই বছর গোটা ব্যাপারটা সফলভাবে করতে পারায় বেশ ভাল লাগছে, আমি গর্বিত। এই শিশুদের মায়েরা পুজোতে ব্যাস্ত থাকেন তাঁদের পেশাতে, তাই তাঁরাও পারেন না সন্তানদের সময় দিতে। ফলে, ওদের জীবনে তো আর এই সখগুলো ঠিক মেটে না, তাই এই প্রয়াস। আগামী বছরও একই ভাবে ওদের সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর দেখতে চাই।"
আরও পড়ুন- অষ্টম শ্রেণীর অষ্টমের সৃষ্টিই পুজো পাচ্ছে সোনাগাছিতে
পুজোর ছাঁট।
ঠাকুর দেখা শুরু হয়েছিল দক্ষিণের দেশপ্রিয় পার্ক দিয়ে। তার পরের গন্তব্য আভিজাত্যের একডালিয়া এভার গ্রীন, সেখান থেকে চেতলা। মাঝে বৃষ্টি কিছুটা ছন্দ পতন ঘটালেও, তাকে নেহাতই আপলকা লেগেছে ওই কচি মুখগুলোর হাঁসি-আনন্দের সামনে। আর হয়েওছে তাই বৃষ্টিকে রুখে দিয়ে এই কচিকাঁচাদের আনন্দরথ পৌঁছে গিয়েছে একের পর এক মাতৃপ্রতিমার সমুখে। এই অসামান্য মানবিক ও স্নেহপরায়ন কর্মকাণ্ডের সাক্ষী থাকতে পেরে মন ভরে গেছে ২৪ঘন্টা ডট কমেরও। এই শিশুগুলি ডানা মেলুক, পাড়ি জমাক স্বাধীনতার আকাশে।