ডিউটি অফিসার নাকি নেই! রাত ১টায় থানার বাইরে বসিয়ে রাখা হল ৮৩ বছরের বৃদ্ধাকে
ডায়েরি লিখলেন সেই ডিউটি অফিসার-ই, যিনি নাকি ডিউটি অফিসার নেই এই অজুহাতে বৃদ্ধাকে প্রায় ঘণ্টাখানেক থানার বাইরে বসিয়ে রেখেছিলেন।
অয়ন ঘোষাল : শহর কলকাতার বুকে এমনটা আজও ঘটে, ভাবাই যায় না! ৮০ বছরের বৃদ্ধা, দৃষ্টিশক্তি প্রায় নেই বললেই চলে, তিনি তাঁর ৫০ বছরের ছেলেকে নিয়ে থানায় গিয়েছেন অভিযোগ দায়ের করতে। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন মধ্যরাত পেরিয়ে প্রায় ১টা। থানার পুলিস তাঁদের বাইরে বসিয়ে রেখেছে। কোনও তত্পরতাও নেই। তাপ উত্তাপও নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অশক্ত শরীরে তাঁরা বসে আছেন। খানিক পরে থানায় ঢুকলেন ওই এলাকার এক বড়কর্তা। তাঁর কাছে ধমক খেয়ে শেষমেশ একটা জেনারেল ডায়েরি লেখা হল। ডায়েরি লিখলেন সেই ডিউটি অফিসার-ই, যিনি নাকি ডিউটি অফিসার নেই এই অজুহাতে বৃদ্ধাকে প্রায় ঘণ্টাখানেক থানার বাইরে বসিয়ে রেখেছিলেন।
এই ঘটনায় পুলিসি অসহযোগিতার অভিযোগে ফের কাঠগড়ায় উঠেছে পর্ণশ্রী থানা। জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ। ৩৯৭এ পর্ণশ্রী পল্লির বাসিন্দা, পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী প্রবালকান্তি সরকারের বাড়ির ঠিক পাশে ঢালাও মদ্যপানের আসর বসেছিল। বার বার বারণ করলেও কেউ কোনও কথা শোনেনি। অনবরত উড়ে আসছিল চিৎকার, চেঁচামেচি আর হল্লার আওয়াজ। সঙ্গে গালিগালাজ আর খিস্তিখেউড়ও চলছিল।
এঘটনায় অনেকক্ষণ ধরেই বিব্রত ও অসুস্থ বোধ করছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। শরীরে ক্যাথিডার লাগানো অবস্থায় জানলা দিয়ে প্রথমে প্রতিবাদ করেন বাবা প্রলয়কান্তি সরকার (৮৬)। প্রতিবাদ করতেই জোটে হুমকি। পাল্টা হুমকিতে চুপ করে যান তিনি। এরপরই মা ইলা সরকার (৮৩)ও ছেলে প্রবাল সরকার প্রতিবাদ করলে শুরু হয়ে যায় একদল মদ্যপের তাণ্ডব। অভিযোগ, গ্রিলের দরজায় উপর্যুপরি লাথি, ঘুষি পড়তে থাকে। আতঙ্কিত হয়ে থানায় ফোন করেন প্রবলবাবু।
কিন্তু কেউ ফোন তোলেননি বলে অভিযোগ। এরপর বাধ্য হয় ১০০ ডায়াল করেন। কিন্তু তাতেও থানা থেকে কেউ আসেননি। পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাতে টহলরত পিসি পার্টিকে। অভিযোগ, তাঁরা এসেই রোয়াব দেখাতে শুরু করে। উল্টে প্রবালবাবুকেই মদ্যপ বলে হেনস্থা করা হয়। শেষে সুবিচার পাওয়ার আশায় গভীর রাতে ছেলের সঙ্গে বাইকে থানায় পৌঁছন অশীতিপর ইলা দেবী। কিন্তু সেখানেও ফের একপ্রস্থ হেনস্থা। গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত সরকার পরিবার। উপরওয়ালার ধমকে লিখিত অভিযোগ নেওয়া হলেও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। আবার কখন দল বেঁধে দুষ্কৃতীকারীরা হামলা করবে, সেই আশঙ্কাতেই দিন কাটছে এই পরিবারের।
আরও পড়ুন, ভারতে বড়সড় নাশকতার ছক পাকিস্তানের! কচ্ছ থেকে গ্রেফতার ISI এজেন্ট