বেলা বোস.. টেলিফোন বুথ... আর নস্ট্যালজিয়া!
সময় বদলায়। জীবন বদলে যায়। একদিন যা ছাড়া এক পা চলা যায় না, তাই একসময় হয়ে যায় ফেলনা। এমনই কারোর কথা আজ জানুন।
ওয়েব ডেস্ক : সময় বদলায়। জীবন বদলে যায়। একদিন যা ছাড়া এক পা চলা যায় না, তাই একসময় হয়ে যায় ফেলনা। এমনই কারোর কথা আজ জানুন।
মনে পড়ে অঞ্জন দত্তের সেই বিখ্যাত গানটির কথা?
"এটা কী 2441129...বেলা বোস তুমি পাচ্ছ কী শুনতে?...দশ-বারোবার রং নম্বর পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি..." আজও কানে আসে সেই গানটির কথা। কিন্তু কানে আসে না সেদিনের সেই ক্রিং ক্রিং শব্দ। "আজ আর কাউকে বলতে হয় না দাদা একটা লোকাল কল করব!"
বেলার নাকি শরীরটা খারাপ। সুগার ধরা পড়েছে। আসলে বয়স হচ্ছে তো...। বেলাটাতো প্রায় পঞ্চাশ ছুঁতে চলল। তবে শান্তি একটাই। বিল্বটা ঠিক আগের মতোই ওকে জড়িয়ে আছে। ভারী অদ্ভুত ভাবে ফোন করত বিল্ব। কালো রিসিভারটা বাঁ কানে। আর চকচকে রূপোলি তারটা ডান গালে ঠেকিয়ে কত কী বলে যেত বিল্ব। আমি চুপ করে শুনতাম....''
আজও তো চুপ করেই আমার ক্ষয়ের আওয়াজ শুনতে পাই আমি।...
অন্তিম ক্ষণ আসছে... আমি জানি। সব জানি। তবু আছি। আজও দাঁড়িয়ে। সেদিন যেমন ছিলাম।...
যেদিন বিল্ব প্রথম ফোনটা করল বেলাকে। নাইনটিন নাইনটি ফোর। বাইশ বছর আগের কথা। কম দিন তো নয়।
তবুও পুরনো সেই গন্ধ আজও লেগে এই রিসিভারের গায়ে।
সবকিছু কি মুছে যাবে আমার সঙ্গেই? আজ বড় মনে হয় এ কথাটা।..............
এ শহরের কত বেলা-বিল্ব, কত শঙ্কর-ময়ূরি, কত আমির-সাহানাদের দেখেছে আমার এই চার দেওয়াল।
সবই কি মুছে যাবে!.... সব!!
এ এক অদ্ভুত জিনিস। এক পিসিও বুথের আত্ম কথা।
রিমা চ্যাটার্জি! শহরেরই এক বাসিন্দা। বলছিলেন এই বুথ থেকেই তাঁর জীবনে প্রেম এসেছিল। "এখান থেকেই কত ফোন করেছি.." রিমার শ্রীঞ্জয়। শ্রীঞ্জয়ের রিমা। দু'জনের খুনসুটি-প্রেম এখন না হয় মোবাইলেই। শুরুটা কিন্তু ছিল এখান থেকেই। এদের কাছে, লাভ বুথ।
''বদলে যাচ্ছে জীবন। বদলাচ্ছে লাইফ স্টাইল। রাস্তার পাশে, হঠাত্ কোথাও আজও আমি রয়েছি ঠিকই। তবে জানিনা আর কতদিন! একটা সময় ছিল, যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হত এখানে। বাইরে লম্বা লাইন। সবাই অধীর। ...আর এখন! এখন শুধুই নস্টালজিয়া। আজ আর কে আসে? কেউ না।...কেউ আসে না আজ।
আমাকে মনে রাখিস, বেলা, বিল্ব... কোনও এক বর্ষার রাতে, আঙুলে-আঙুল আঁকড়ে, দুজনে আসিস। এখানটায়। চুপ করে দাঁড়াস কিছুক্ষণ। আর অস্ফুটে বলিস, একবার বলিস... ভাল থেকো..টেলিফোন বুথ।''
একসময়ের রাজা, আজ ফকির। একসময় যা ছিল দরকারি, আজ বড়ই বেদরকারি।...ফোন বুথের চৌহদ্দিতে, এখন কালেভদ্রে দেখা মেলে দু-একজনের। সৌজন্যে টেক-বুম। হাতের মুঠোয় এখন বন্দি দুনিয়া। মোবাইলেই মিটে যাচ্ছে সব প্রয়োজন। কথা তো হচ্ছেই। ছবি দরকার? মোবাইলে ক্যামেরার এক ক্লিক। মোবাইলেই নেটের মাধ্যমে মুঠোয় সব তথ্য।.. বাদ কী? সেটাই বড় প্রশ্ন। এর ধাক্কায় বেসামাল এতকালের ফোন বুথগুলি। পরিসংখ্যানও তাই বলছে...মাত্র ছ বছরে পঞ্চাশ লক্ষ থেকে পাঁচ দশমিক সাত লক্ষে নেমে এসেছে এদেশে পাবলিক বুথের সংখ্যা।
জুন, ২০১৪ থেকে ২০১৫-র মার্চ, মাত্র দেড় বছরেই ২৬ শতাংশ পতন ফোন বুথের সংখ্যায়। নব্বইয়ের দশকে পিসিও-পাবলিক বুথ ছিল, ইমপরটেন্ট ম্যাটার। আর এখন! সব তলানিতে। হাতে মোবাইল থাকতে কেই বা পথেঘাটে, খুঁজেপেতে বুথে যায়! শুধু কি এদেশে? বিদেশেও এক হাল।
লাল ফোন বুথগুলি একসময় ছিল লন্ডনের পরিচিতি। স্ট্যাটাস সিম্বল অফ গ্রেট ব্রিটেন। বলা হত, K2 টেলিফোন বক্স। ROYAL দেশে, ROYAL ব্যাপার। পরে হয় আধুনিকীকরণ। K2 হয়ে যায় K6 বক্স। সময়টা ছিল সেই ১৯৩৬।...তবে কোনও কিছুই স্থির হয়নি। সময়ের সঙ্গে মুছে গিয়েছে প্রয়োজনীয়তা। হারিয়ে গিয়েছে রেড টেলিফোন বক্স। কিছু জায়গায় এখনও অবশ্য রেখে দেওয়া হয়েছে এগুলি। তবে শুধুই স্মারক হিসেবে। আর ভারতে! অবহেলা-অযত্নে, এখানে-সেখানে কিছু বুথ থেকে গিয়েছে। ইতিহাস হওয়ার পথে এক পা বাড়িয়ে...