মনে আছে শুধু কয়েদি নম্বর, 'পরিচয়হীন' ইউসুফ আজও ঘরে ফেরেননি

Updated By: Nov 9, 2017, 11:15 AM IST
মনে আছে শুধু কয়েদি নম্বর, 'পরিচয়হীন' ইউসুফ আজও ঘরে ফেরেননি

নিজস্ব প্রতিনিধি:  অত্যন্ত কাছের কোনও আত্মীয়ের নাম, বাড়ির ঠিকানা, পরিচয় তো দূরস্ত! স্মৃতি হাতড়ে, চোয়াল শক্ত করেও মনে করতে পারেননি কোন দেশে বাড়ি তাঁর। চোখে নির্লিপ্ত দৃষ্টি, মুখে বুলি নেই, যেন কিছুতেই কিছু যায় আসে না তাঁর। যে কোনও প্রশ্নের উত্তরে অনর্গল একটাই কথা বলে চলেছেন, তা হল নিজের কয়েদি নম্বর। 'মা কু চিহল পঞ্জম হস্তম', অর্থাত্ আমি তো '৭৮৪ নম্বর আসামী',  এই বুলিই যেন মুখস্ত করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সৈয়দ মুজতবার লেখা এই গল্পই সত্যি হয়ে উঠেছে মাঝবয়সী পি ইউসুফের জীবনে।

আরও পড়ুন: জামিন আটকাতে হাইকোর্টের বিচারপতিকে হুমকি এসএমএস

২০১২ সালে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে পড়ার অভিযোগে বনগাঁ থেকে পি ইউসুফকে গ্রেফতার করে পুলিস। তাঁর কাছ থেকে কোনও নথি উদ্ধার হয়নি। কেবল সন্দেহের বশেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। হেফাজতে থাকাকালীনই পুলিসকর্মীরা চেষ্টা করেছেন তাঁর পরিচয় জানার। কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর ইউসুফ যে ভাষায় দেন তা দুর্বোধ্য। হাল ছেড়ে দেয় পুলিস। এরপর আইনানুগভাবে তাঁকে পেশ করা হয় আদালতে। অবৈধভাবে দেশে ঢুকে পড়েছেন নাকি? পরিচয় কী? বাড়ি কোথায়?  আদালত কক্ষে দাঁড়িয়ে বিচারকের এসব প্রশ্নের উত্তরে কেবল ঘাড় নাড়ে গিয়েছেন ইউসুফ। কিন্তু সেই ঘাড় নাড়ার যে কী অর্থ তা বুঝে উঠতে পারেননি বিচারক। অগত্যা, পাকিস্তানি নাগরিক ভেবে তাঁকে ২ বছরের জেল হেফাজত দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই পাকিস্তান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইউসুফ সেদেশের বাসিন্দা নন।

গোটা ঘটনায় বেকায়দায় পরে যায় পুলিস। ২ বছরের জেল খাটার মেয়াদও পূর্ণ হয়ে যায় ইউসুফের। খোঁজ শুরু হয় আবারও। এরমধ্যে ঘটনার মোড় নেয় অন্যদিকে। ইউসুফকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তাঁর পরিবার। আর তখনই প্রকাশ্যে আসে, ইউসুফ আসলে কেরলের বাসিন্দা। গোটা ঘটনায় তাজ্জব হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। নিম্ন আদালতে নতুন করে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে। এই মামলাটি মানবিকতার দিক থেকে বিচার করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

কিন্তু, আইনি জটিলতায় আজও মুক্তি পাননি ইউসুফ। এখনও পর্যন্ত বোধগম্য ভাষায় কথাও বলে উঠতে পারেননি তিনি। 'হিজিবিজি' বুলিতে শুধু বলে চলেছেন নিজের কয়েদি নম্বর টুকুই। আর তিন সংখ্যার সেই নম্বর বলে ওঠার সময়েই চিক চিক করে ওঠে তাঁর চোখের কোণটা। বুলি হয়তো বোঝা দায়, কিন্তু তাঁর চোখের পরিভাষাই বলে দেয়, কতটা অভাগা তিনি!

আরও পড়ুন: উড়লেও সূর্যকে ধরতে পারবেন না, নাম না করে মুকুলকে খোঁচা অভিষেকের

.