তৃণমূলের জয়ের সবথেকে বড় তিনটি কারণ
এই প্রথমবার এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগাম ফল নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা ছিল না মানুষের মধ্যে। গতকাল পর্যন্ত যাকেই ভোটের ফল নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, সেই বলেছে, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। লড়াইটা এবার হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে মনে হচ্ছে। আসলে প্রথম দুই দফা ভোটের পর থেকে নির্বাচন কমিশন এতটাই কড়াকড়ি করে যে, হাওয়ায় রটে যায়, মানুষের ভোট মানুষ দিয়েছে। আর মানুষের ভোটের বেশিরভাগটাই যাবে বিরোধী জোটের পক্ষে।
ওয়েব ডেস্ক: এই প্রথমবার এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগাম ফল নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা ছিল না মানুষের মধ্যে। গতকাল পর্যন্ত যাকেই ভোটের ফল নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, সেই বলেছে, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। লড়াইটা এবার হাড্ডাহাড্ডি হবে বলে মনে হচ্ছে। আসলে প্রথম দুই দফা ভোটের পর থেকে নির্বাচন কমিশন এতটাই কড়াকড়ি করে যে, হাওয়ায় রটে যায়, মানুষের ভোট মানুষ দিয়েছে। আর মানুষের ভোটের বেশিরভাগটাই যাবে বিরোধী জোটের পক্ষে।
কিন্তু আজ নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই দেখা গেল অন্য ছবি। রীতিমতো ঝড়ের মতো বিরোধীদের উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০০-রও বেশি আসনের দখল এখন তাঁদের। কিন্তু এটা হলটা কীভাবে? মানে, এই বিরাট জয়ের তো কোনও কারণও থাকবে। কী সেটা? এভাবে একটা কোনও নির্দিষ্ট কারণের জন্য তো আর কোনও রাজনৈতিক দল ২০০-রও বেশি আসনে জয় পায় না। থাকে বেশ কিছু যুক্তিগ্রাহ্য কারণ। অনেক কারণে আর গেলাম না। মূলত, যে তিনটে কারণ ভোটের ফলের উপর প্রভাব পড়েছে বলে মনে হচ্ছে, সেই তিনটি কারণই নিচে বিশ্লেষণ করা হল।
১) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামটাই একশো - হ্যাঁ, কিছু মানুষ থাকেনই এমন। যাঁরা একাই একশো। এই নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একের পর এক সমালোচনার জবাব দিতে হয়েছে বিরোধীদের। তাঁর দলের লোকদের নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী তারপরে বলেছেন, সব ক্ষমা-ঘেন্না করে দিয়ে, অভিমান, রাগ ঝেড়ে ফেলে, মানুষ যেন তাঁকেই ভোট দেন। কোন রাজৈনতিক দলের সমর্থন এ রাজ্যে বেশি, এই নিয়ে মানুষের মধ্যে সুস্থ তর্ক-বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু এই রাজ্যে এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বেশি জনপ্রিয় আর কোনও রাজনীতিবিদ আছে বলে মনে হয় না কেউ তর্ক করতে আসবেন বলে। এই বিরাট জয়ের প্রধান কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামটাই।
২) পাওয়ার হিসেব - সাধারণ মানুষ অন্তত এটা বুঝে গিয়েছেন, নেতারা একটু আধটু 'সুবিধা-টুবিধা' নেন। নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু নেতাদের পোশাক সাদা ধবধবে, এমন বিশ্বাস করার লোক আজকের দিনে পাওয়া কিন্তু খুব মুশকিল। তাই ধরে নেওয়া গেল, ওই প্রবাদটাই। 'যেই যায় লঙ্কায়, সেই চোর'। তাই যদি হবে, তাহলে লঙ্কাতে সেই থাকুক, যে আমাদেরও কিছু দেবে। এই সরকারের আমলে গ্রামের মানুষগুলো ২ টাকা কেজি দরে চাল পেয়েছেন। বাচ্চাটা জুতো পড়ে স্কুলে গিয়েছ। সাইকেল পেয়েছে। ক্লাবগুলো বছর বছর টাকা পেয়েছে। যে নেয় নিক, আমাদের তো কিছু দেয়। এই মানসিকতাটাই বোধহয় কাজ করেছে বেশি করে মানুষের মধ্যে।
৩) উন্নয়ন - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলের লোকেরা সমানে যে কাজের ফিরিস্তি দেন, সেটা ঠিক না ভুল সেই হিসেব আজকেই করতে বসার মানে হয় না। তবে, আপনি যদি এ রাজ্যের মানুষ হন, এবং আপনার নানা জায়গায় যাতায়াত পড়ে, তাহলে বুঝবেন, এ রাজ্যের রাস্তার রূপ বদলে গিয়েছে অনেকটাই। এখন এ রাজ্যের মানুষকে খানাখন্দে ভরা রাস্তায় আর চলতে হয় না। মানুষ মসৃণ গতিতে ছুটতে পারেন নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। শহর থেকে মফঃস্বল কিংবা গ্রামের রাস্তারও চেহারা একই। সঙ্গে আলো। আগের থেকে বেড়েছে বইকি। নিজের পাড়ার রাস্তাটা একটু ভালো হলে, অথবা একটু বেশি আলো পেলে, মানুষ আর ভোট দেবেন না কেন!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিরাট জয়ের কারণ এই তিনটেই মনে হল প্রধানত। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্লেষকদের মত অন্য হতেই পারে। হতে পারে সেই কারণগুলোই ঠিক। কিন্তু এগুলোও যে কারণ হতে পারে, সেটা ভুলে যাবেন না কিন্তু।