প্রতিরোধ আইন কেন পাশ হল না, উঠছে প্রশ্ন
সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণায় হাহাকার রাজ্যজুড়ে। প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকারের ভূমিকাও। বাম আমলেই বিধানসভায় পাস হয়েছিল, বেআইনি আর্থিক সংস্থা প্রতিরোধক বিল। কিন্তু, গত দুবছরেও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে তা কার্যকর করার চেষ্টা করেনি বর্তমান সরকার। এমনকী, সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের জবাবেও নিরুত্তর থাকার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিরুদ্ধে।
সারদা গোষ্ঠীর প্রতারণায় হাহাকার রাজ্যজুড়ে। প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকারের ভূমিকাও। বাম আমলেই বিধানসভায় পাস হয়েছিল, বেআইনি আর্থিক সংস্থা প্রতিরোধক বিল। কিন্তু, গত দুবছরেও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে তা কার্যকর করার চেষ্টা করেনি বর্তমান সরকার। এমনকী, সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের জবাবেও নিরুত্তর থাকার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রীয়তাতেই এই পরিস্থিতি। বেআইনি চিটফান্ডগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল বাম সরকারের আমলেই। ভুঁইফোঁড় আর্থিক সংস্থাগুলিকে রুখতে তৈরি হয়েছে ইকনমিক অফেন্স উইং। যার উদ্দেশ্য ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে বেআইনি সংস্থাগুলির মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া।
আটকে প্রতিরোধ বিল
২০০৯-এর ২৩ ডিসেম্বর বিধানসভায় পাস হয়েছিল প্রটেকশন অফ ইন্টারেস্ট অফ ডিপোজিটরস অফ ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন বিল
বিলে বেআইনি চিট ফান্ডগুলির বিরুদ্ধে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়
ওই বিলে প্রতারক সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্পত্তি ক্রোক করে গ্রাহকের টাকা ফেরতের বন্দোবস্তের কথা বলা হয়
ফৌজদারি বিধিতে প্রতারকের যাবজ্জীবন কারাবাস পর্যন্ত শাস্তির বিধানও ছিল বিলটিতে
২০১০-এ রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল বিলটি
সাধারণত এই ধরণের বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেতে সাত থেকে আট মাস লেগে যায়। ইতিমধ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। তারপর, দু`বছর কেটে গেলেও সেই বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলেনি। যদিও এই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল তৃণমূল। নীতি নির্ধারণের একাধিক বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল তারা। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রীয়তাতেই গত দুবছরে রাজ্যজুড়ে ডালপালা মেলেছে বেআইনি চিট ফান্ড সারদা গোষ্ঠী।
সারদা কেন বেআইনি
সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানতকারীর টাকা জমা রাখার ব্যবসা করতে হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন লাগে, সারদা গোষ্ঠীর তা নেই
সম্পত্তি লেনদেন সংক্রান্ত ব্যবসায় যুক্ত আর্থিক সংস্থার, সেবির অনুমোদন লাগে। সারদা গোষ্ঠীর তাও নেই
রাজ্যের রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের তালিকায় সারদা গোষ্ঠীর নাম নথিভুক্ত নেই
২০১২-র অক্টোবরে রাজ্যে বেআইনি আর্থিক সংস্থাগুলির তালিকা পাঠিয়েছিল কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক। তালিকায় সবার উপরে ছিল সারদা গোষ্ঠীর নাম
শুধু সারদা গোষ্ঠী নয় বর্তমান সরকারের আমলে রাজ্যজুড়ে মাথা তুলেছে আরও বহু বেআইনি আর্থিক সংস্থা
চিটফাণ্ডের রমরমা
২০১০-এর মাঝামাঝি রাজ্যজুড়ে ৬৫ চিটফাণ্ড ছিল
অর্থ দফতরের হিসেব অনুযায়ী ২০১৩-এ রাজ্যে চিটফাণ্ডের সংখ্যা ১৩৫
এর বাইরেও, জেলায় জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বেআইনি চিট ফান্ড। যাদের সম্মিলীত লেনদেনের পরিমাণ কেউই জানে না। চিটফাণ্ডের রমরমার প্রমাণ মেলে স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগের বেহাল দশা থেকেই।
বেহাল স্বল্পসঞ্চয়
২০১০-১১ অর্থবর্ষে রাজ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থাগুলিতে স্বল্পসঞ্চয় প্রকল্পে লগ্নির মোট পরিমাণ ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি
বর্তমানে রাজ্যের রাষ্ট্রয়ত্ত আর্থিক সংস্থাগুলিতে লগ্নির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা
করা অনেক কিছুই যেত। হয়নি কিছুই। তারই ফলশ্রুতি এই হাহাকার। এত মানুষের ক্ষোভ, হাহাকার আর কান্নার দায় কি এড়াতে পারে রাজ্য সরকার? উঠছে প্রশ্ন। যদিও মদন মিত্রের যুক্তি, সরকার তো আর চিটফান্ডে টাকা রাখতে বলেনি।