একে একে খুন স্ত্রী, সন্তান, প্রেমিকা, কেন? কে এই শঙ্কর কর্মকার?
প্রথমে স্ত্রী ও ছেলেকে খুন। এরপর প্রেমিকা ও তার মেয়েকে। অবশেষে মৃত্যু নিজের। কেন এই নৃশংস হত্যালীলা? কে এই শঙ্কর কর্মকার? কেন বেছে নিতে হল তাকে খুনের মতো এই চরম পথ?
জানা যায় ১৬ বছর আগে পৌলমীকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল শঙ্কর কর্মকার। ষোড়শী পৌলমী সবে তখন পাঠভবন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এরপরেও শঙ্করের জীবনে এসেছে একাধিক নারী। ছিল রোহিণীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক। এসবের পাশাপাশি শঙ্করের কাজের জগতও ছিল আগাগোড়া রহস্যে মোড়া।
পড়াশোনার হরিনাভির DVS স্কুলে। তবে মাধ্যমিকের চৌকাঠও পেরোয়নি শঙ্কর। খুব ছোটবেলায় বাবা মারা যান। মা আয়ন ল্যাব নামে একটি সংস্থায় ওষুধের লেবেল লাগানোর কাজ করতেন। ছোটবেলায় পড়াশোনা ছেড়ে দেয় শঙ্কর। সেই সময়ই আলাপ পৌলমীর সঙ্গে। মাত্র ১৬ বছরের পৌলমী তখন পাঠভবন স্কুল থেকে সবে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করছিলেন দুজনে।। কয়েক বছর অন্যত্র থাকবার পর নিজের বাড়িতে ফিরে আসে শঙ্কর। সালটা ১৯৯৮-১৯৯৯।
প্রথমে ছোটখাটো জমি বাড়ির দালালি। ইমারতি সামগ্রী সরবরাহের কারবার। আস্তে আস্তে প্রোমোটারি ব্যবসায় হাত পাকাতে শুরু করে শঙ্কর। রাসবিহারী এলাকায় অফিস রয়েছে শঙ্করের। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজার থেকে টাকা তোলা, জমি বিক্রির নামে প্রতারণার একাধিক অভিযোগ রয়েছে শঙ্করের বিরুদ্ধে। এই সময়ই চেতলা এলাকার কয়েকজন বড় প্রমোটারের সঙ্গে পরিচয় হয় শঙ্করের। চেতলা, গোপালনগর এলাকার কয়েকটি বড় কাজ হাতে এসে যায় শঙ্করের। হঠাত্ই হাতে এসে যায় অনেক কাঁচা টাকাও। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগণার গোচরন ধোসারহাট এলাকার কয়েকজনের মাধ্যমে নাকি অ্যান্টিক পাচারের কারবার শুরু করেছিল শঙ্কর। হাতে কাঁচা টাকা থাকায় কলকাতার অপরাধ জগতের সঙ্গেও ওঠাবসা বাড়ে শঙ্কর কর্মকারের। বাড়ে অপরাধী জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা।
বাজারে ধার দেনাও কম ছিল না শঙ্করের। হরিনাভির বাড়িতে রাতে পাওনাদারের হানা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সবটাই সামলাতেন পৌলমী। টাকার দৌলতেই শঙ্করের জীবনে নারীদের আসা যাওয়াও লেগেই ছিল। বছর খানেক আগে শঙ্করের জীবনে আসেন রোহিণী। বেশিরভাগ রাতেই বাড়ি ফিরতেন না শঙ্কর। জানা গেছে, রাতগুলো কাটত গড়ফায় রোহিণীর ফ্ল্যাটে। রোহিণীর এবং তার মেয়ের খরচও দিত শঙ্করই। বাইপাসের ধারে এক নামী স্কুলে পড়ত রোহিণীর ৩ বছরের মেয়ে ইয়াশি। অভিযোগ, এই নিয়ে একাধিক বার স্ত্রী পৌলমীর সঙ্গে বিবাদ হয়েছে শঙ্করের। তবে কোনও কিছুই শঙ্করের নৈশ অভিসার রুখতে পারেনি। খুব সম্প্রতি, প্রেমিকা রোহিণীর সঙ্গেও সম্পর্কে চিড় ধরেছিল শঙ্করের। নেপথ্যে কয়েকজন বার ডান্সার। পানশালায় আলাপ হওয়া ওই তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল শঙ্করের। যা মেনে নিতে পারেননি রোহিণী। আর রোহিণীর সঙ্গে সম্পর্ক অজানা ছিল না পৌলমীরও। ব্যাক্তিগত জীবনের এই টানাপোড়েন থেকেই পরপর এই হত্যালীলা?