মান্ধাতার আমলের আগেও চল ছিল বিকিনির! এর ইতিহাস প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরনো

জানেন কি, বিকিনি মোটেও হাল ফ্যাশানের পোশাক নয়, বরং ‘মান্ধাতার আমলের’ও অনেক আগের পোশাক!

Edited By: সুদীপ দে | Updated By: Jan 15, 2020, 06:12 PM IST
মান্ধাতার আমলের আগেও চল ছিল বিকিনির! এর ইতিহাস প্রায় ৩৫০০ বছরের পুরনো

নিজস্ব প্রতিবেদন: হলিউড বা বলিউডের সুন্দরি নায়িকারা বিকিনিতে ক্যামেরার সামনে ধরা দিলেই সে ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশ্বের বিখ্যাত সব ফ্যাশন পত্রিকাগুলির কভারে, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বিকিনি পরা মডেলদের ছবি বা সিনেমার পর্দায় বিকিনি পরা লাস্যময়ী সুন্দরীদের দেখে আমাদের অনেকেরই রক্তচাপ বেড়ে যায়। মেয়েদের আল্ট্রা-মডার্ন ফ্যাশনেবল পোশাকের তালিকায় বিকিনি সবচেয়ে উপরে। কিন্তু জানেন কি, বিকিনি মোটেও হাল ফ্যাশানের পোশাক নয়, বরং ‘মান্ধাতার আমলের’ও অনেক আগের পোশাক!

দীর্ঘদিন আমরা জেনে এসেছি বা এ কথা আমরা অনেকেই জানি যে, বিকিনির আবিষ্কারক ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার লুই রিওয়ার্ড। ১৯৪৬ সালে মায়ের (লজাঁরি) অন্তর্বাস বুটিক চালানোর সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাদের ইউনিফর্ম তৈরির জন্য কেনা অব্যবহৃত কাপড় দিয়ে ‘টু-পিস সুইমস্যুট’ তৈরি করেন রিওয়ার্ড। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ ‘বিকিনি অ্যাটলে’ অনুষ্ঠিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক পরীক্ষার মহরার কথা মাথায় রেখে এই ‘টু-পিস’-এর নাম রাখেন বিকিনি। বিকিনিকে প্রথম বানিজ্যিক ভাবে বাজারে নিয়ে আসেন ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার জ্যাকুইস হেইম, ১৯৪৬ সালে। সে সময় রীতিমতো ‘ভাইরাল’ হয়েছিল এই পোশাক। পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই ‘টু-পিস’।

Bikini

কিন্তু বিকিনি ‘আবিষ্কার’-এর এই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়, যখন ১৯৫০ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা সিসিলির পিয়াজ্জা আর্মেনিয়া অঞ্চলে, একটি সুপ্রাচীন রোমান দুর্গে কাজ করছিলেন। সে সময় তাঁদের নজরে আসে দুর্গের কুঠুরির দেওয়ালে প্রায় ৩৫০০ বছর আগেকার একটি ম্যুরাল (দেওয়াল ভাস্কর্য)। ওই ম্যুরালটি দেখে রীতিমতো চমকে যান প্রত্নতত্ত্ববিদরা। কারণ, ওই দেওয়াল চিত্রে পর পর দাঁড়িয়ে বিকিনি পরা প্রাচীন রোমান নারীরা। ‘করোনেশন অফ উইনার’ নামক এই ম্যুরালটিতে দশ জন বিকিনি পরা রোমান নারীর ছবি আছে। যে দুর্গে এই ম্যুরালটি পাওয়া যায় তার নাম ‘রোমানা ডেল ক্যাসেল’। এটি ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তালিকাভুক্ত। আর এখানে পাওয়া ম্যুরালটি এখনও পর্যন্ত আবিস্কার হওয়া সেরা ম্যুরাল বলে মত একাধিক প্রত্নতত্ত্ববিদদের। বিকিনি থাকার সব চেয়ে প্রাচীন প্রমাণটি পাওয়া যায় তাম্র যুগে। সে সময়ের দক্ষিণ আনাতোলিয়ার এক অংশে ‘কাতাল হোইউক’ নামের এক দেবীর পোশাক এখনকার বিকিনির সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এ ছাড়াও, পম্পেইয়ে রোমান দেবী ভেনাসের বিকিনি পরিহিত থাকার প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ভেনাসের একটি মূর্তিতে পোশাকের ধরন দেখে তাঁদের এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে।

আরও পড়ুন: এই ক্যাফেতে প্লাস্টিক-আবর্জনা জমা দিলেই মিলবে খাবার!

সুতরাং, মানব সভ্যতার আদি যুগ থেকেই নারীদের পোশাক হিসেবে বিকিনির চল ছিল। তবে সে যুগ আর এ যুগে মেয়েদের বিকিনি পরার কারণ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সে যুগে মেয়েরা বিকিনি (ওই জাতীয় পোশাক) পরত সহজে শরীর আবৃত করার জন্য আর বর্তমানে বিকিনি আল্ট্রা-মডার্ন ফ্যাশনেবল পোশাকের প্রতীক। সাড়ে তিন বা চার হাজার বছর পেরিয়ে পোশাক একই রয়েছে, পাল্টেছে শুধু ভাবনা আর দৃষ্টিভঙ্গি।

.