হাইজিন থেকেই শুরু হয় স্টাইল: প্রিয়াঙ্কা পাল

মডেল থেকে ছোটপর্দার সফল অভিনেত্রী। প্রিয়াঙ্কা পালকে এভাবেই চিনতেন সকলে। তবে এসবের বাইরে যে তাঁর আরও একটা পরিচয় রয়েছে। ডাকসাইটে ডিজাইনারও তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই আবিষ্কার করলেন আমাদের প্রতিনিধি প্রমা মিত্র।

Updated By: Nov 5, 2012, 12:25 PM IST

মডেল থেকে ছোটপর্দার সফল অভিনেত্রী। প্রিয়াঙ্কা পালকে এভাবেই চিনতেন সকলে। তবে এসবের বাইরে যে তাঁর আরও একটা পরিচয় রয়েছে। ডাকসাইটে ডিজাইনারও তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই আবিষ্কার করলেন আমাদের প্রতিনিধি প্রমা মিত্র।
পরিবার এবং পড়াশোনা
আমার বাড়ি কাঁকুড়গাছিতে। সল্টলেক সি এ স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছি। তারপর ভবানীপুর গুজরাটি এডুকেশনাল সোসাইটি থেকে কমার্স নিয়ে গ্রাজুয়েশন। পড়াশোনার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্ত স্কুল শেষ করার পরপরই এই পেশায় চলে আসায় আমি খুব একটা সময় দিতে পারিনি পড়াশোনায়।
মডেলিংয়ে আসা কীভাবে?
আমি মনে করি বাই লাক। ভাগ্যে ছিল তাই এসেছি। আমার বাড়িতে কেউ কোনওভাবে, কোনওদিক দিয়ে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত নয়। আমি ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষার পর যখন বাড়িতে এমনিই বসেছিলাম, তখন হঠাত করে একদিন একটা হোর্ডিং দেখি। মিস সিন্ড্রেলা কনটেস্টের হোর্ডিং। তখন মনে হল আমি হয়ত নিজেকে গ্রুম করার একটা সুযোগ পাব এখানে গেলে। তবে মডেলিংয়ে আসার কথা তখনও ভাবিনি। যদিও ছোটবেলা থেকে টিভি, সিনেমায় অভিনয় করার একটা শখ ছিল। ওখানে জেতার পর থেকেই আমি অফার পেতে থাকি। যেদিন ফাইনাল ছিল তার পর দিনই কলকাতার এক বিখ্যত মডেল রিয়া মিত্র আমাকে ফোন করে একটা ফ্যাশন শো-র অফার দেন। আমি জানতাম না উনি আমার বাড়ির জাস্ট চারটে বাড়ি পরেই থাকতেন। আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম শো টা করে। আমার প্রথম শো ছিল রাঁচীতে। তানিষ্কের শো।
এখনও পর্যন্ত তোমার জীবনের সেরা কাজ কী?
প্রচুর আছে। আমি ওটেম পিএসপিও-র অ্যাড করেছিলাম। রাজেশ খন্না মারা যাওয়ার ঠিক আগে ওটা শুট করেন। সারা ভারতে ওটার হোর্ডিং এসেছিল। আমি মনে করি ওটা আমার জীবনের খুব উল্লেখযোগ্য কাজ। ওখানে বড় স্টারের সঙ্গে কাজ করে, ন্যাশানালি এতটা প্রচার পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। এছাড়াও প্রচুর আছে। মাধুরী দীক্ষিতের বডির সঙ্গে আমার ফেস দিয়ে একটা হোর্ডিং করা হয়েছিল। ফ্যাশন শো আমি এই মুহূর্তে খুব কম করি। প্রিন্ট আর স্টিলস এখনও প্রচুর করছি। আমার সবথেকে ভাল লাগে স্টিল শুট করতে। সেখানে সবকিছু খুব অর্গানাইজড থাকে। স্টাইলাইজার থাকে, কলসেপ্ট থাকে। যেটা সবথেকে বেশি এনজয় করি সেটা হল জুয়েলারি শুট।
কোনওদিন ন্যাশানাল লেভেল কনটেস্টে অংশ নেওয়ার কথা মনে হয়নি?
না। আমার কখনও দরকার হয়নি। আমি শুরু থেকেই এত বেশি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে ওই একমাস কোনও কনটেস্টকে দিলে আমার সময় নষ্ট হত। আর আমার কখনও কলকাতার বাইরে গিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। তাই কখনই ন্যাশানাল লেভেল কনটেস্টে অংশ নেওয়ার কথা ভাবিনি। আমি এখনও কলকাতাতেই থাকতে চাই।
পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখ?
এখন তো আমি সিরিয়ালে অভিনয় করছি। এখন আমি পালাবদল সিরিয়ালে নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করছি। এর আগে মুখোশ মানুষ সিরিয়ালে লিড চরিত্রে অভিনয় করেছি। পাঁচ বছর পর আমি আমি কিছু ভাল ছবিতে অভিনয় করতে দেখতে চাই নিজেকে। শুধু নায়িকা হিসেবেই দেখতে চাই না নিজেকে। ভাল চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। মডেলিং করার সময় আমি টেলিফিল্মেও অভিনয় করেছি।
তোমার স্টাইল স্টেটমেন্ট?
আমি শাড়ি পরতে খুব ভালবাসি। আমার মনে হয় শাড়িতেই সবাইকে সবথেকে গ্ল্যামারাস লাগে। আমি মনে করি যেখানে যেটা পরা উচিত, সেখানে সেটা পরে গেলেই সেটাকে স্টাইল বলা হয়। একটা নাইট ক্লাবে শাড়ি পরে গেলে সেটা যেরকম বেমানান হয়, সেরকমই বিয়েবাড়িতে হঠাত ক্যাজুয়াল ডেনিম আর টপ পরে গেলেও সেটা খুব বেমানান হয়। সবসময় কোথায় যাচ্ছি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকদের জন্য টিপস
আমার কাছে স্টাইলের প্রথম কথা হল হেলদি ফুড। দই, জল, ফল এগুলো খুব খাওয়া উচিত। সেইসঙ্গেই ত্বক বা চুল যেটাই বলো, সবকিছুকে ভীষণ ভাবে পরিষ্কার করে রাখাটা আমার মনে হয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনও জিনিস পরিষ্কার রাখলে সেটা অনেক বেশি ভাল খাকে। হাইজিন সেন্স থেকেই স্টাইল সেন্স তৈরি হয়।
পুজো কীভাবে কাটালে?

পুজোতে সপ্তমী পর্যন্ত শুটিং করেছি। অষ্টমী তাই বাড়িতে ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। নবমীতে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে পুজো হয়, সেখানেই সকাল থেকে শাড়ি পরে সেজেগুজে গিয়ে সারাদিন কাটিয়েছি। আমি শাড়ি এতটাই ভালবাসি যে আমি নিজেও প্রচুর শাড়ি ডিজাইন করি।
ঠিক কী ধরণের ডিজাইনিং তুমি করো?
আমি শাড়িটাই বেশি বানাই। তবে সালওয়ারও বানাই। আমার দুজন টেলর আছেন। বাকি ডিজাইনিংটা আমি পুরোটাই নিজের হাতে করি।
এটাকে নিজের পেশা বানানোর ইচ্ছা আছে?
আপাতত আমি নিজের জন্যই করি। আমার বন্ধুরা আমাকে শাড়ি বানানোর অর্ডার দিলে বানাই। তবে ভবিষ্যতে আমার এটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত আমি কোটার কাজ সবথেকে বেশি করেছি। বা কাপড় দিয়ে পাড় বসিয়ে ব্রাইট কালার কম্বিনেশনে শাড়ি বানিয়েছি।
শীতকালটা কীভাবে কাটাতে চাও?
শীত আমি ভীষণ এনজয় করি। আমার রোজ রাতেই মনে হয় ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। শীতকাল এমন একটা সময় যখন যা খুশি পরা যায় আর সত্যিই স্টাইল করা যায়। দার্জিলিং যেতে আমি খুব ভালবাসি। দার্জিলিং প্রচুর বার গেছি আর ওখান থেকে আমি প্রচুর ব্রাইট কালারের জ্যাকেট, মাফলার, বুট কিনে এনেছি। ওগুলো সারা বছর তোলা থাকে। শীতকালে এক দু মাস চুটিয়ে পরি। শীতকালে লং ড্রাইভে যেতে, আশাপাশে কোথাও ঘুরতে যেতে আমি খুব ভালবাসি। আমার দুটো পুচকু ডগি আছে। ওদেরকে ট্রেনে করে কোথাও বেরাতে নিয়ে যেতে পারি না। শীতকালে ওদেরকে নিয়ে লং ড্রাইভে টুক করে কোথাও ঘুরে চলে আসি।

.