অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার নয়া যুগে ভারত
পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম `ভূমি থেকে ভূমি` ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষামূলক উত্ক্ষেপণ করল ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। সেই সঙ্গেই অত্যাধুনিক আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভার-সমৃদ্ধ এলিট দেশগুলির গোষ্ঠীতে ঠাঁই করে নিল নয়াদিল্লি।
পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম `ভূমি থেকে ভূমি` ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫-এর সফল পরীক্ষামূলক উত্ক্ষেপণ করল ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। সেই সঙ্গেই অত্যাধুনিক আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভার-সমৃদ্ধ এলিট দেশগুলির গোষ্ঠীতে ঠাঁই করে নিল নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫মিনিটে ওড়িশার বালেশ্বর উপকূলের কাছে `ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ`(আইটিআর)-এর ৪ নম্বর উত্ক্ষেপণ কেন্দ্রের একটি ` মোবাইল লঞ্চিং প্যাড` থেকে উত্ক্ষেপণের ২০ মিনিট পর ভারত মহাসাগরের নির্দিষ্ট ঠিকানায় থাকা 'টার্গেট'কে নিখুঁত ভাবে আঘাত করে অগ্নি-৫।
খারাপ আবহাওয়ার জন্য বুধবার অগ্নি-৫-এর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মিসাইলটি উত্ক্ষেপণের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন ডিআরডিও-র মুখপাত্র রবিকুমার গুপ্ত। ৫,০০০ কিলোমিটার পাল্লায় লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল ভাবে আঘাত হানতে সক্ষম, ভারতীয় বিজ্ঞানীদের তৈরি এই প্রথম ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র)-এর পাল্লার মধ্যে রয়েছে গোটা চিন এবং এশিয়া ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ অংশ। ফলে জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে অগ্নি-৫-কে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
১৭ মিটার দৈর্ঘ্য, ২ মিটার প্রস্থ এবং ৫০ টন ওজনের এই `অন্তর্বতী পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র`টির সঙ্গে দু`টি অতিরিক্ত কম্পোসিট মোটর সংযুক্ত করার পরীক্ষাতেও প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। এর ফলে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও চিনের পর বিশ্বের ষষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী হতে চলেছে নয়াদিল্লি। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চাঁদিপুর উপকূলেই অগ্নি সিরিজের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র, অগ্নি-১-এর সফল পরীক্ষা করেন ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘ পরীক্ষানিরীক্ষার পর ২০০২ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অস্ত্রসম্ভারে ঠাঁই করে নেয় ৭০০ কিমি পাল্লার এই `ভূমি থেকে ভূমি` ক্ষেপণাস্ত্র।
এক টন ওজনের 'ওয়ারহেড' বহনযোগ্য অগ্নি-সিরিজের এই নবতম সংস্করণে প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রও ব্যবহার করা যায়। অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে চালিত অগ্নি-৫ ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন দিশার সূচনা করবে বলেই মনে করেছেন ডিআরডিও-র ক্ষেপণাস্ত্র বিভাগের বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ নভেম্বর ওড়িশা উপকূলে সফলভাবে ৩,০০০ কিলোমিটার পাল্লার অগ্নি-৪ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছিল ডিআরডিও। সে সময় অগ্নি-৪-এর নিখুঁত `কন্ট্রোল অ্যান্ড গাইডেন্স সিস্টেম` চমকে দিয়েছিল করেছিল প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। আপাতত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অগ্নি-৫-ই ভারতের সব থেকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। বর্তমানে ডিআরডিও-র ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে আরও দূরপাল্লার অগ্নি-৬ এবং `সূর্য` ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে ওড়িশার চাঁদিপুর সমুদ্রসৈকতের অনতিদূরে `হুইলার আইল্যান্ড`-এ।