প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে (১৯২৬-২০১২)
উত্থান পতন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তাঁর শারীরিক অবনতিতে মূহ্যমান হয়ে পড়ে গোটা মুম্বই। গত বুধবার রাত থেকে শারীরিক অবস্থা চরম সঙ্কটজনক হয়ে পরে। শনিবার দুপুর সাড়ে তিনটেয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন 'মারাঠি অস্মিতা'র প্রতিভূ, শিবসেনা প্রধান বালাসাহেব কেশব ঠাকরে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিবসেনা সুপ্রিমো। সর্বক্ষণ তাঁর ওপর নজর রাখছিলেন মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিত্সকরা। কিন্তু চিকিত্সায় তেমন সাড়া না মেলায় তাঁকে বাসভবন মাতুশ্রীতে নিয়ে যান আত্মীয়-পরিজনেরা।
উত্থান পতন চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। তাঁর শারীরিক অবনতিতে মূহ্যমান হয়ে পড়ে গোটা মুম্বই। গত বুধবার রাত থেকে শারীরিক অবস্থা চরম সঙ্কটজনক হয়ে পরে। শনিবার দুপুর সাড়ে তিনটেয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন 'মারাঠি অস্মিতা'র প্রতিভূ, শিবসেনা প্রধান বালাসাহেব কেশব ঠাকরে।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শিবসেনা সুপ্রিমো। সর্বক্ষণ তাঁর ওপর নজর রাখছিলেন মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিত্সকরা। কিন্তু চিকিত্সায় তেমন সাড়া না মেলায় তাঁকে বাসভবন মাতুশ্রীতে নিয়ে যান আত্মীয়-পরিজনেরা। রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। অবশেষে চিকিত্সকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন মারাঠি রাজনীতির অবিসংবাদী নেতা বালাসাহেব ঠাকরে। আজ বিকেল তিনটে নাগাদ প্রয়াত নেতার অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হবে।
বিতর্কিত রাজনৈতিক জীবনে বর্ণময় ছিলেন এই কার্টুনিস্ট। মুসলিম, গুজরাতি, মাড়োয়ারি বা দক্ষিণ ভারতীয়দের বিরোধিতার প্রশ্নই হোক, আর উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে আসা মানুষকে মহারাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক আখ্যা দেওয়া। সবক্ষেত্রেই চরম দক্ষিণপন্থি প্রাদেশিক রাজনৈতিক অবস্থান বিতর্কের কেন্দ্রে রেখেছে বাল ঠাকরেকে।
জন্ম ১৯২৬-এর ২৩ জানুয়ারি। বাবা ইউনাইটেড মহারাষ্ট্র আন্দোলনের সক্রিয় ভুমিকায় থাকা লেখক ও সমাজকর্মী কেশব সীতারাম ঠাকরে। বাল ঠাকরের কেরিয়ারের শুরুটাও বেশ ব্যতিক্রমী। মুম্বইয়ের ফ্রি প্রেস জার্নালে কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। এরপর ১৯৬০-এ ভাইকে নিয়ে শুরু করেন আলাদা রাজনৈতিক সাপ্তাহিক মার্মিক। সেই সাপ্তাহিকেই মহারাষ্ট্রের মুসলিম, গুজরাতি, মাড়োয়ারি বা দক্ষিণ ভারতীয়দের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ ওগড়াতে শুরু করেন। স্লোগান তোলেন মহারাষ্ট্র কেবল মহারাষ্ট্রের অধিবাসীদের জন্য।
প্রাদেশিক সেই স্লোগানকে সামনে রেখেই ১৯৬৬-তে তৈরি হয় শিবসেনা। ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষদের বিরোধিতা করে মহারাষ্ট্র অধিবাসীদের কাজের নিশ্চয়তার দাবিতে শুরু হয় শিবসেনার আন্দোলন। মহারাষ্ট্রের বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলিকে দুর্বল করে দেওয়ার কাজে শিবসেনা বড়সর ভূমিকা নেয়। ওই সময় থেকেই পাকাপাকিভাবে নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নিতে শুরু করেন শিবসেনা। এজন্য বাল ঠাকরের দল গাঁটছড়া বাঁধে মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে। বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে শিবসেনা মহারাষ্ট্র বিধানসভায় জয়ী হয় ১৯৯৫-এ। কার্যত সেই জোট সরকারের রাশ বরাবরই বাল ঠাকরের হাতেই থেকেছে। ফলে রাজনৈতিক বৃত্তে শিবসেনা সুপ্রিমো পরিচিত হয়েছেন সরকারের রিমোট কন্ট্রোল নামে। এরপর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ১৯৯৯-এর ১১ ডিসেম্বর থেকে টানা ছ’বছর ভোট দেওয়া বা ভোটে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয় বাল ঠাকরেকে।
এর মাঝেই ফাটল ধরে শিবসেনা প্রধানের নিজের পরিবারের অন্দরে। ছেলে উদ্ভব ঠাকরে এবং ভাইপো রাজ ঠাকরের সেই বিরোধের জেরে শেষ পর্যন্ত দু টুকরো হয়ে যায় শিবসেনা। ২০০৬-এর ৯ মার্চ শিবসেনা থেকে বেরিয়ে মহারাষ্ট্র নব নির্মান সেনা তৈরি করেন রাজ ঠাকরে। ২০০৯- শিবসেনা ছাড়েন বাল ঠাকরের পুত্রবধূ স্মিতাও। যোগ দেন কংগ্রেসে।
পছন্দের চরিত্রের তালিকায় হিটলারকে রাখাই হোক বা শ্রীলঙ্কায় এলটিটিইকে সমর্থন। বরাবরই নিজের বিতর্কিত অবস্থান খোলাখুলি ভাবে জানিয়েছেন বাল ঠাকরে। প্রকাশ্যে সমালোচনায় সরব হয়েছেন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের। সংসদ ভবনে হামলায় দোষী সাব্যস্ত আফজল গুরু ফাঁসির প্রশ্নে সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগেছেন। বারবারই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে বাল ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনার ভ্যালেন্টাইন ডের বিরোধিতার কথা। অনেক সময়ই সেই বিরোধিতা হিংসাত্মক চেহারা নিয়েছে। বিতর্কিত এই চরম রাজনৈতিক অবস্থানই ভারতীয় রাজনীতিতে আলাদা জায়গা করে দিয়েছে বাল ঠাকরেকে। পরিচয় স্বত্তার রাজনীতি আঁকড়ে তৈরি হয়েছে ব্যক্তিপুজো নির্ভর স্বতন্ত্র এক রাজনৈতিক ব্র্যান্ড। যেখানে এক পেশাদার কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গ কৌতুকের দক্ষতাকে বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতার 'গড ফাদার'।