বিমা, পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগে ছাড়পত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার
একমাসের মধ্যেই আর্থিক সংস্কার নিয়ে ফের কড়া সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। বিমা ও পেনশন ফান্ডের বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব অনুমোদন করল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার অনুমোদন মিলেছে। পেনশন ফান্ডে ২৬ শতাংশ বিদেশি লগ্নিতে ছাড় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এক মাসের মধ্যেই সংস্কারের দ্বিতীয় ধাপে সবুজ সঙ্কেত দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিমা ক্ষেত্রে এফডিআইয়ের পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার প্রস্তাব এবং পেনশনে ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিমায় এফডিআইয়ের হার মেনেই পেনশন ফান্ডে বিদেশি লগ্নির সীমা নির্ধারণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন চিদম্বরম। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম যুক্তি দিয়েছেন, আইআরডিএ দাবি তুলছিল বিমাক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। এই অর্থের চাহিদা মেটাতেই বিমায় ৪৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তবে সংস্কারের সবথেকে বড় ধাক্কা এসেছে পেনশনে। পেনশন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ২৬ শতাংশ থেকে ৪৯ শতাংশ করার সুয়োগ করে রেখেছে মন্ত্রিসভা। বলা হয়েছে, সংসদে বিমায় ৪৯ শতাংশ এফডিআই-এর অনুমোদন মিললেই, পেনশনেও ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রেও যুক্তি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। যুক্তি দিতে গিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশকে সামনে নিয়ে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির পাঁচটি সুপারিশই মেনে নিয়েছে মন্ত্রিসভা।
শুধুমাত্র বিমা ও পেনশনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্তেই এযাত্রায় থেমে থাকল না কেন্দ্র। বিরোধীদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিয়ে কোম্পানি বিলের পরিবর্তনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কম্পিটিশন বিল ও কৃষিজাত পণ্যের ফরওয়ার্ড ট্রেডিং-এ সবুজ সংকেত মিলেছে।
স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তে বিরোধিতার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অন্যান্যবারের মতোই তীব্র বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বামেরা। তাঁদের অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে কার্যত নতিস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। দ্বিতীয় ইউপিএ-র প্রাক্তন শরিক তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে বার্তা দেন, "সরকার জানা জরুরি হ্যায়, দেশ কো বাচানে কে লিয়ে।"
এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপিও। বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, এনডিএ আমলে বিমায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করে এখন সেই কাজটাই করল কংগ্রেস। তাঁর দাবি, যে সব শ্রমিক পেনশন পান, তাঁদের অধিকার এবং পেনশনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগ হলে সেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে এনডিএ আমলে এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বটে কিন্তু সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। এখন যদি পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগে ছাড় দেওয়া হয়, তা হলে সরকারকে তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাভড়েকর।
অন্যদিকে, জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদবের দাবি, একের পর এক এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি পুঁজির কাছে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র। পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, অবসরকালীন ভাতা কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরাও।