একুশে আইন: মোদী সরকারের সমালোচনার 'অপরাধে' আইআইটি মাদ্রাসে নিষিদ্ধ হল পড়ুয়াদের গ্রুপ

এ একেবারে একুশে আইন। বেনামি অভিযোগের ভিত্তিতে পড়ুয়াদের একটি ডিসকাশন ফোরাম বন্ধ করে দিল আইআইটি মাদ্রাস। অভিযোগ ছিল এই ডিসকাশন ফোরামটি তপসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত পড়ুয়াদের জড় করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে 'ঘৃণা' ছড়াচ্ছে। ডিসকাশন ফোরামটিতে বিভিন্ন সরকারি পলিসি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। প্রশ্ন তোলা হয়েছিল হিন্দির ব্যবহার ও গো হত্যা নিষিদ্ধ করা নিয়ে। এবার থেকে কি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পড়ুয়াদের সরকারের সমালোচনা করার গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও থাকবে না? মাদ্রাস আইআইটি-র এই সিদ্ধান্ত উসকে দিল সেই সম্ভাবনাই।  

Updated By: May 29, 2015, 10:00 AM IST
একুশে আইন: মোদী সরকারের সমালোচনার 'অপরাধে' আইআইটি মাদ্রাসে নিষিদ্ধ হল পড়ুয়াদের গ্রুপ

ওয়েব ডেস্ক: এ একেবারে একুশে আইন। বেনামি অভিযোগের ভিত্তিতে পড়ুয়াদের একটি ডিসকাশন ফোরাম বন্ধ করে দিল আইআইটি মাদ্রাস। অভিযোগ ছিল এই ডিসকাশন ফোরামটি তপসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত পড়ুয়াদের জড় করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে 'ঘৃণা' ছড়াচ্ছে। ডিসকাশন ফোরামটিতে বিভিন্ন সরকারি পলিসি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। প্রশ্ন তোলা হয়েছিল হিন্দির ব্যবহার ও গো হত্যা নিষিদ্ধ করা নিয়ে। এবার থেকে কি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পড়ুয়াদের সরকারের সমালোচনা করার গণতান্ত্রিক অধিকারটুকুও থাকবে না? মাদ্রাস আইআইটি-র এই সিদ্ধান্ত উসকে দিল সেই সম্ভাবনাই।  

মাদ্রাস আইআইটি-র আম্বেদকর পেরিয়ার স্টুডেন্ট সার্কেলের (এপিএসসি) বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে বেনামে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। অভিযোগের সঙ্গে এপিএসসি-এর একটি প্যামফ্লেট জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। প্যামফ্লেটটিতে ছিল মোদী সরকারের বিভিন্ন পলিসি নিয়ে কাটাছেড়া , ছিল সমালোচনাও।  

গত ১৫ ভারত সরকারের সচিবের তরফ থেকে আইআইটি-র ডিরেক্টর প্রিসকা মাথিউকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিটিতে লেখা ছিল ''"I am directed to forward herewith a copy of anonymous letter alleging serious complaints received from students, IIT-Madras along with pamphlet issued by Ambedkar-Periyar study circle on the above mentioned subject and to request that comments of the institute may please be sent to this ministry at an early date.''

এর এক সপ্তাহ পরে, ২৪ মে আইআইটির ডিন (পড়ুয়াদের জন্য) শিবকুমার শ্রীনিবাসন এপিএসসি-এর কোঅর্ডিনেটরদের একটি ই-মেল করে জানান তাঁদের 'ডিরিকগনাইজড' করা হচ্ছে।  

এপিএসসি-এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের পিছনে নিশ্চিত ভাবেই ডানপন্থী গোঁড়া সংগঠন রয়েছে। মানব সম্পদ মন্ত্রক ও আইআইটির সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে।

এপিএসসি জানতে চেয়েছে কিসের ভিত্তিতে একটি 'বেনামি; চিঠিকে আইআইটি মাদ্রাসের সিংভাগ পড়ুয়াদের মত বলে ধরে নেওয়া হল।

''আত্মপক্ষ সমর্থনের বিন্দুমাত্র  সুযোগ না দিয়েই ডিন যেভাবে একতরফা আমাদের স্টাডি সার্কেলকে ডিরিকোগনাইজড করেছেন আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ডিন আমাদের জানিয়েছেন আমাদের স্টাডি সার্কেল নাকি 'বিতর্কিত ক্রিয়াকলাপে' লিপ্ত থাকছে যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টুডেন্ট বডির আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণাও পরিস্কার। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের কোনও সুবিধার অপব্যবহার করিনি।'' মন্তব্য নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক এপিএসসি সদস্য।

২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল আইআইটি মাদ্রাসের রাজনৈতিকভাবে সচেতন এক দল পড়ুয়া এপিএসসি নামের ডিসকাশন ফোরামটি তৈরি করেন। আম্বেদকর ও পেরিয়ারের মতাদর্শের প্রচার ও তাঁদের লেখার পর্যালোচনা এই স্টাডি সার্কেল গঠনের অন্যতম উদ্দশ্য ছিল। দলিত অধিকার রক্ষা, আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চলত।

যে প্যামফ্লেটটি নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত সেটিতে দ্রাবিড়িয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ আর বিবেকানন্দের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছিল। 'সাম্প্রতিক সময়ে ডঃ আম্বেদকরের প্রাসঙ্গিকতা' নিয়ে আইআইটি ক্যাম্পাসেই একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল এপিএসসি-র সদস্যরা। এই সভায় মোদী জমানা 'কর্পোরেট পন্থী' বলে তীব্র সমালোচনা করেন বক্তা। আর বিবেকানন্দের বক্তব্যে উঠে আসে জমি বিল, বিমা বিল ও নয়া শ্রম আইনের প্রসঙ্গও। গো হত্যা বন্ধ, ঘর ওয়াপস্যার মাধ্যমে এই সরকার দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে, অভিযোগ করেন বক্তা।

অন্যদিকে আইআইটি মাদ্রাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এপিএসস্যার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিন-এর দাবি এই দলটি প্রতিষ্ঠানের সুযোগের অপব্যবহার করেছে, ভঙ্গ করেছে আচরণ বিধি। তাদের নিষিদ্ধ করা অনির্বার্য ছিল।

 

 

 

.