বেলাইন রেল
মন্ত্রী আসে, মন্ত্রী যায়। লাইন বদলায় রাজনীতির ট্রেন। কিন্তু হাল বদলায় না ভারতীয় রেলের। বিশেষ করে যাত্রী নিরাপত্তায় গত এক দশকে এক রত্তিও এগোয়নি বিশ্বের সব থেকে বড় যাত্রীপরিবহণ ব্যবস্থা। ট্রেনযাত্রায় নিরাপত্তার জন্য এখনও ইষ্টনামই ভরসা যাত্রীদের।
মন্ত্রী আসে, মন্ত্রী যায়। লাইন বদলায় রাজনীতির ট্রেন। কিন্তু হাল বদলায় না ভারতীয় রেলের। বিশেষ করে যাত্রী নিরাপত্তায় গত এক দশকে এক রত্তিও এগোয়নি বিশ্বের সব থেকে বড় যাত্রীপরিবহণ ব্যবস্থা। ট্রেনযাত্রায় নিরাপত্তার জন্য এখনও ইষ্টনামই ভরসা যাত্রীদের। গত ১০ বছরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের। নীতীশ কুমার, লালু যাদব হোন, বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্ঘটনায় মুখ পুড়েছে প্রত্যেক রেলমন্ত্রীরই। কখনও যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনও কর্মীদের গাফিলতি আবার কখনও নাশকতাকে দায়ী করে পদ বাঁচিয়েছেন সবাই। এমনকী, এ কলঙ্ক থেকে পরিত্রাণ পাননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। রোজ ২ কোটি মানুষের ভরসা ভারতীয় রেলের যাত্রীনিরাপত্তায় যে কোনও উন্নতি হয়নি তার প্রমাণ মেলে পরিসংখ্যানেই।
১৯৯৯ সালে এনডিএ পাকাপাকি ভাবে ক্ষমতায় আসার পর রেলমন্ত্রী হন বিহারের জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। যদিও এর আগেও এক দফায় রেলমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর মন্ত্রিত্বকালে দেশ জুড়ে ৯৩৯টি রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২,৬৭১ জনের। ইউপিএর আমলে এর পর ওই চেয়ারে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী থাকাকালীন ১৭ মাসে ৬২টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২২৫ জনের। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ইউপিএ, রেলমন্ত্রী হন লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁর পাঁচ বছরের জমানাতে ৫৪৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১,২৭৭ জনের। ২০০৯ সালে ফের রেলমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদফায় দুবছর রেলমন্ত্রী থাকা কালে ২৩৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণ গিয়েছে ৩৩৮ জনের।
পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ট্রেন দুর্ঘটনায় ব্রেক লাগেনি। প্রতি বছর রেল বাজেটে ঘোষিত হয়েছে একের পর এক ট্রেন। গোটা দেশের রেলপথগুলির ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। যাত্রী নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে শত শত কোটি টাকা। খাতায় কলমে আধুনিকীকরণ হয়েছে সিগনালিং ব্যবস্থার। ইঞ্জিনে লাগানো হয়েছে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস। তাতেও দুর্ঘটনা কমার কোনও লক্ষণ নেই। প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে রেলে যাত্রী সুরক্ষাকে আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দফতরের মন্ত্রীরা। তা সত্ত্বেও কখনও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিহারে রাজধানী এক্সপ্রেসে, কখনও রেলকর্মীদের অদক্ষতায় এরাজ্যেরই উত্তর দিনাজপুরের গাইসালে ব্রহ্মপুত্র মেল ও অওধ অসম এক্সপ্রেসে, আবার কখনও নাশকতার জেরে পশ্চিম মেদিনীপুরের সরডিহায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ঘুমের মধ্যেই চিরঘুমে চলে গিয়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। উপমহাদেশে তো বটেই, বিশ্বের নিরিখেও যে পরিসংখ্যান নজিরবিহীন।