ভাড়া বাড়িয়ে দলের তোপে দীনেশ
এতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক মহলের কানাঘুষো আর মিডিয়ার জল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই `দূরত্ব বৃদ্ধি`র ইঙ্গিত। এবার রেল বাজেটকে ঘিরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরই একদা বিশ্বস্ত `লেফটেন্যান্ট` দীনেশ ত্রিবেদীর মতপার্থক্য একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল।
এতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক মহলের কানাঘুষো আর মিডিয়ার জল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই 'দূরত্ব বৃদ্ধি'র ইঙ্গিত। এবার রেল বাজেটকে ঘিরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরই একদা বিশ্বস্ত 'লেফটেন্যান্ট' দীনেশ ত্রিবেদীর মতপার্থক্য একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল।
ইতিমধ্যেই ঘনিষ্ঠ মহলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আলোচনা না-করেই রেলের প্রতিটি স্তরে যাত্রীভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব সংসদে পেশ করেছেন দীনেশ ত্রিবেদী। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও'ব্রায়েন, মায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা যেভাবে রেল বাজেটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের মতো আদ্যন্ত ব্যক্তি-কেন্দ্রীক দলে দীনেশ ত্রিবেদীর টিকে থাকা যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বস্তুত, সংবাদমাধ্যেমে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি কিংবা ডেরেক ও'ব্রায়েনের ট্যুইটার-বার্তায় যে ভাবে রেলমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হয়েছে তাতে পরিষ্কার, ৩০-বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের অনুমোদন নিয়েই রেলমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা। আর সে ক্ষেত্রে মনমোহন সিং ক্যাবিনেট থেকে দীনেশ ত্রিবেদীর বিদায় কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে এদিনের রেলবাজেটকে সমর্থন জানিয়েছেন উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ।
এক দশক পর সর্বস্তরের যাত্রীভাড়া বাড়িয়ে আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা রেলকে নতুন দিশা দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করে নিজের দলেই প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ। যদিও বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, অনোন্যপায় রেলমন্ত্রীর সামনে বিকল্প কোনও পথই খোলা ছিল না। এবারের রেল বাজেটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণিতে কিলোমিটার পিছু ৩০ পয়সা, এসি টু' টায়ার-এ ১৫ পয়সা, এসি থ্রি' টায়ার-এ ১০ পয়সা এবং স্লিপার ক্লাস-এ কিলোমিটার পিছু ৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে নয়া রেল বাজেটে। পাশাপাশি লোকাল ট্রেনে টেনের ভাড়া কিলোমিটার পিছু ২ পয়সা এবং প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করার কথাও বলা হয়েছে ২০১২-১৩-র রেল বাজেটে।
দীনেশ ত্রিবেদীর সাফাই, রেলকে আর্থিক সঙ্কট থেকে রক্ষা করার জন্য 'যাত্রীভাড়া ন্যূনতম বাড়ানো হয়েছে'। যথাযথ সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানানোর পাশাপাশি ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে দীনেশ ত্রিবেদী বুঝিয়ে দিয়েছেন, রেলমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিছক 'রাবার স্ট্যাম্প' থাকতে চান না তিনি। সেই সঙ্গে রেল বাজেট পেশের পর যে ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে রেল মন্ত্রক এবং জাতীয় স্বার্থের প্রসঙ্গ তুলে ধরে কার্যত বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের তৃণমূলী দাবি খারিজ করার চেষ্টা করেছেন তাতে পরিষ্কার, সহজে রণে ভঙ্গ দেবেন না তিনি।