কখন প্রয়োগ করা যাবে স্বেচ্ছামৃত্যু, ব্যাখ্যা দিল সুপ্রিম কোর্ট
সজ্ঞানে কোনও ব্যক্তি ঘোষণা করতে পারেন, শুধুমাত্র জীবনদায়ী ব্যবস্থায় তাঁর বেঁচে থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে, সে জীবন তিনি চাইবেন না, সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য এই 'লিভিং উইল'কে মান্যতা দিতে হবে বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
নিজস্ব প্রতিবেদন : স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে শুক্রবার ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ শুক্রবার এই রায় দেয়।‘সম্মানজনক মৃত্যু জীবনের অধিকার’ বলে শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতের তরফে মন্তব্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়নেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। পাশাপাশি স্বেচ্ছা মৃত্যু নিয়ে আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশিকা বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সজ্ঞানে কোনও ব্যক্তি ঘোষণা করতে পারেন, শুধুমাত্র জীবনদায়ী ব্যবস্থায় তাঁর বেঁচে থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে, সে জীবন তিনি চাইবেন না, সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য এই 'লিভিং উইল'কে মান্যতা দিতে হবে বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১১ সালে অরুণা শানবাগ মামলায় পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুতে সায় দেয় শীর্ষ আদালত। পরে লিভিং উইল কার্যকর করার আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় 'কমন কজ' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বলা যেতে পারে এই আবেদনের ভিত্তিতেই আজকের এই রায়।
আরও পড়ুন- স্বেচ্ছা মৃত্যুতে সম্মতি সুপ্রিম কোর্টের
শুক্রবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে বলা হয়েছে, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কখন-কীভাবে কার্যকর করা হবে, তা ঠিক করবে মেডিক্যাল বোর্ড। পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে আইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন ঠিক করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আইন কমিশনের সুপারিশ মেনে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যুর ক্ষেত্রে আইন আনা হবে। তবে, প্রত্যক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কার্যকর করার কোনও প্রশ্নই নেই বলে আজ জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এখন প্রশ্ন উঠছে, কী এই প্রত্যক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু? চিকিত্সা বিজ্ঞান অনুসারে প্রত্যক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু আত্মহত্যাকে বলা হচ্ছে। আইনি ভাষায় যার ব্যাখ্যা, কোনও ব্যক্তি যখন নিষিদ্ধ ওষুধ নিজের ওপর মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করে আত্মহননের পথ বেছে নেন, তখন তাকে প্রত্যক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু বলা হয়।
কীভাবে প্রয়োগ করা হয় এই স্বেচ্ছামৃত্যু?
মেডিক্যাল ডিক্সেনারি অনুসারে, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু তখনই প্রয়োগ করা যায় যখন কোমায় থাকা কোনও ব্যক্তিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার মতো আর কোনও অবস্থা থাকে না। সেই সময় তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে সাধারণ পদ্ধতিতে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেন চিকিত্সকরা। এমনকী, তাঁর ওপর ওষুধ প্রয়োগও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অনেক ক্ষেত্রে রোগীকে মাত্রাতিরিক্ত পেইনকিলার দেওয়া হয়। এরফলে শ্বাসকষ্ট হয়ে মৃত্যুর দিকে ঢোলে পড়েন রোগী। চিকিত্সা বিজ্ঞানের মতে, এই পেইনকিলার একদিকে রোগীর ব্যাথা প্রশমনে কাজ করে, অন্যদিকে হৃদযন্ত্র ক্রমশ দুর্বল করে দেয়। ফলে, সময়ের আগেই মৃত্যু হয় রোগীর।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়গুলির উপরই প্রথমে আলোচনা করে। এরপর স্থির হয়, পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু কখন-কীভাবে কার্যকর করা হবে, তা ঠিক করবে মেডিক্যাল বোর্ড।