1/9
এগারো-বারো বছরের কন্যা। কলকাতার এইচএমভি স্টুডিওতে ভাই আর মামার সঙ্গে এসেছে গানের অডিশন দিতে। রিহার্সাল রুমে ঢুকে সে দেখে ঘি-রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা পরা এক ব্যক্তি বসে। সেই ব্যক্তিই মন দিয়ে তার গান শুনলেন। সেদিন বালিকার নিবেদনে ছিল 'যদি পরাণে না জাগে আকুল পিয়াসা', দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'কালো পাখিটা মোরে কেন করে জ্বালাতন'। রিহার্সাল রুমের সেই ব্যক্তি কন্যাটির গান সেদিন শুনে তারিফ করে বলেছিলেন, 'তোমরা দেখো, এই মেয়ে একদিন খুব ভাল গাইয়ে হবে'।
2/9
photos
TRENDING NOW
3/9
4/9
5/9
6/9
কী কী থাকছে এই ডিজিটাল আর্কাইভে? থাকছে শিল্পীর জীবনী, তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের তালিকা, থাকছে তাঁর সমগ্র গানভাণ্ডার-- নজরুলগান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক বাংলা গান, কাব্যগীতি, গীত ও গজল। শ্রোতারা এখানে শুনতে পাবেন তাঁর সব গান। রয়েছে গানের যাবতীয় তথ্যও-- রিলিজের সাল, সুরকার-গীতিকারের নাম, প্রকাশক কোম্পানির নাম। রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দুর্লভ সংগ্রহ। টেলিভিশন থেকে রেডিও, মঞ্চের অনুষ্ঠান থেকে সাক্ষাৎকার-- মিলবে এক ক্লিকেই। থাকছে বিভিন্ন বাংলা-ইংরেজি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর সাক্ষাৎকার, অনুষ্ঠান সমালোচনা, প্রতিবেদন।
7/9
আর্কাইভে থাকছে ওঁর ফোটোগ্যালারিও। এখানে তো অবশ্যই থাকছে ওঁর একক ছবি। থাকছে এমন ছবিও যাতে ধরা রয়েছে তাঁর পারিবারিক জীবন, সঙ্গীতজীবন। থাকছে বিভিন্ন দিকপালদের সঙ্গে শিল্পীর ছবি। থাকছে বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পীর তাঁকে ঘিরে স্মৃতিকথা। পাশাপাশি রয়েছে শিল্পীর হাতে-লেখা নোটবুকের কপি, চিঠিপত্র। আছে তাঁর স্বামী প্রখ্যাত সুরকার কমল দাশগুপ্তের জীবনী, তাঁর গানের খাতার প্রতিলিপি, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, গান এবং ছবি।
8/9
প্রসঙ্গত, আজ শিল্পীর স্বামী তথা প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব কমল দাশগুপ্তেরও জন্মদিন। কমল দাশগুপ্তের জন্ম ১৯১২ সালের ২৮ জুলাই। ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রথিতযশা সঙ্গীতশিল্পী, প্রসিদ্ধ সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। নজরুল ইসলামের বহু গানেও তিনি সুরারোপ করেছেন। ১৯৩৪ সাল থেকে স্বাধীনভাবে কাজী নজরুলের গানে সুরারোপ করতে থাকেন। প্রায় তিনশো নজরুলগীতির সুর রচয়িতা ছিলেন কমল দাশগুপ্ত। ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকে গ্রামোফোন ডিস্কে তাঁর সুরে গাওয়া বহু গান বিপুল জনপ্রিয় হয়েছিল। গানগুলির গীতিকার ছিলেন প্রণব রায়, শিল্পী ছিলেন যুথিকা রায়-- 'সাঁঝের তারকা আমি', 'আমি ভোরের যূথিকা' প্রভৃতি। এ সব গান আজও সমান ভাবে সমাদৃত। তাঁর কয়েকটি রাগাশ্রিত, কীর্তনাঙ্গ এবং ছন্দ-প্রধান গানও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৫ সালে ফিরোজা বেগমকে বিয়ে করেন কমল দাশগুপ্ত। তাঁর সুরেও ফিরোজার বিখ্যাত সব গান রয়েছে। বহুল প্রচলিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে-- 'আমি বনফুল গো', 'এমনই বরষা ছিল সেদিন', 'মোর জীবনের দুটি রাতি', 'মাটির এ খেলাঘরে' প্রভৃতি।
9/9
ফিরোজা বেগমের নামাঙ্কিত এই আর্কাইভের নির্মাণ প্রসঙ্গে সুস্মিতা আনিস জানান-- এই কাজ আমাদের কাছে খুব সম্মানের, গর্বেরও। এমন একজন কিংবদন্তি শিল্পীকে পরিবারের একজন হিসেবে পাওয়া সৌভাগ্যের। কাছ থেকে তাঁকে পেয়েছি, তাঁর কাছে গান শিখেছি। এই কাজ আমার গুরুদক্ষিণাও বলতে পারেন। খুবই যত্ন নিয়ে, ভালবাসা দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের এই ডিজিটাল আর্কাইভ। এক ছাদের নীচে ওঁর কাজগুলিকে নথিভুক্ত করা সত্যিই খুবই দুঃসাধ্য কাজ ছিল। পরিবারের সহযোগিতায় তা সম্ভব হল। আগামী দিনে আরও অনেক কিছু সংযোজিত হবে। ভবিষ্যতে কোনও গুণগ্রাহীর কাছে থেকে পাওয়া কোনও তথ্য, ভিডিয়ো বা গান এই আর্কইভে সংযোজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে যারা ওঁর গান নিয়ে চর্চা-সহ পড়াশোনা করবেন, তাঁদের জন্য এই আর্কাইভ এক সোনার ভাণ্ডার হয়ে রইল বলা চলে।
photos