দশ নম্বর বিশ্বকাপ! রাশিয়ায় বসে পরস্পরকে 'চিয়ার্স' বলতে চান কলকাতার দম্পতি
৮৫ বছর বয়সের পান্নালাল ও তাঁর ৭৬ বছরের স্ত্রী এখনও ফুটবলের প্রেমে পাগল।

নিজস্ব প্রতিনিধি : খিদিরপুরের ঘুপচি গলিতে তাদের ছোট্ট ফ্ল্যাট। ছাপোষা মধ্যবিত্তের সংসার। আর পাঁচজন মধ্যবিত্ত বাঙালির সঙ্গে তাদের এটুকুই শুধু মিল। কারণ, তাঁরা যে স্বপ্নটা দেখেছিলেন সেটাকে খিদিরপুরের ওই ছোট্ট গলির মধ্যবিত্ত পরিসরে আটকে রাখতে চাননি। তার জন্য পান্নালাল চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রীকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। তবে দমে যাননি। ফুটবলের প্রতি টান অনুভব করামাত্র দু'জনে হাত ধরাধরি করে বেড়িয়ে পড়েছেন। ৮৫ বছর বয়সের পান্নালাল ও তাঁর ৭৬ বছরের স্ত্রী এখনও ফুটবলের প্রেমে পাগল। আর তাই এবারও বেড়িয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন- মেসিকে 'অদ্ভুত' পরামর্শ মারাদোনার
এখনও পর্যন্ত ন'টা ফুটবল বিশ্বকাপ দেখেছেন কলকাতার এই দম্পতি। রাশিয়ায় পৌঁছে এবার একে অপরের সঙ্গে মাঠে বসে দশ নম্বর বিশ্বকাপ দেখার সাফল্য উদযাপন করতে চান। পান্নালালবাবু বলছেন, '২০২২ বিশ্বকাপের সময় আমার নব্বইয়ের কাছাকাছি বয়স হয়ে যাবে। মনে ইচ্ছে থাকলেও শরীর হয়তো তখন আর বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেবে না। তাই মনে হচ্ছে, রাশিয়া বিশ্বকাপেই আমরা শেষবার গ্যালারিতে বসে ম্যাচ দেখব।' পাশে বসে তাঁর স্ত্রী তখন চোখ মুছতে মুছতে বলছেন, 'জানেন, এই ন'টা বিশ্বকাপ দেখার জন্য আমাদের কতটা কষ্ট করতে হয়েছে! অনেক সময় সাধ হলেও আমরা ভাল ভাল খাবার আনিয়ে খেতে পারিনি। ভাল জামাকাপড় কিনতে পারিনি। একটা নির্দিষ্ট ছকে বাধা বাজেটে জীবন চালিয়েছি। যাতে আমাদের বিশ্বকাপ দেখতে যাওয়ার জন্য জমানো টাকায় হাত না পড়ে।'
আরও পড়ুন- ভারতীয় ফুটবলে নজির গড়ল কাশ্মীর
১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপ টিভিতে প্রথম সরাসরি সম্প্রচার দেখেছিল কলকাতা। পান্নালাল ও চৈতালি কিন্তু টিভির পর্দায় আটকে থাকতে চাননি। সে সময় লন্ডনে তাঁদের এক বন্ধু থাকতেন। তিনিই তাঁদের স্পেন বিশ্বকাপের কয়েকটা ম্যাচের টিকিট পাঠান। গ্যালারি থেকে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে নেশা ধরে যায় চট্টোপাধ্যায় দম্পতির। মনে মনে ঠিক করে ফেলেন, শরীর ও মনের জোর যতদিন থাকবে দুজনে মিলে বিশ্বজুড়ে বিশ্বকাপ দেখে বেড়াবেন। তার পর পেনশনের টাকা থেকে একটু একটু করে সঞ্চয় শুরু।
১৪ জুন রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তাঁরা। নক-আউট পর্বের টিকিট না পেলে ফিরে আসবেন ২৮ জুন। বিশ্বকাপের সব ম্যাচের টিকিট চেয়ে রাশিয়ান কনস্যুলেট ও ফিফার অরগানাইজিং কমিটিকে চিঠি লিখেছেন পান্নালাল। কিন্তু এখনও উত্তর আসেনি। চৈতালি বলছিলেন, 'অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের সময় আমরা সব ম্যাচের টিকিট পেয়েছিলাম। ফিফার লোকাল অরগানাইজিং কমিটি সহযোগিতা করেছিল। এমনকী, আমাদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওরা গাড়ি পাঠিয়েছিল। তার পর মাঠে আমাদের জন্য ডিনারের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু এবার আমরা মাত্র তিনটে ম্যাচের টিকিট জোগাড় করতে পেরেছি। আশা করছি ফিফা আমাদের অনুরোধ রাখবে।'
আরও পড়ুন- রিয়ালে থাকতে পারেন রোনাল্ডো, তবে দুটি শর্তে
বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্ত কোনটা? প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসেন চৈতালি। বলেন, 'এরকম অনেক টুকরো টুকরো মুহূর্ত রয়েছে। তবে গ্যালারিতে বসে মারাদোনার হাত দিয়ে গোল করা দেখেছিলাম। ওটা কখনও ভুলব না। আর একবার পেলের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ হয়েছিল। তখন তো এসব সেলফি টেলফির নাম শুনিনি। ৩৬ বছর ধরে এরকম অনেক সুখস্মৃতি জমা করেছি। এবার মনে হয় অবসর নেওয়ার পালা।' বলতে বলতে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন ফুটবল অন্ত প্রাণ দু'জনেই।