আর কয়েক ঘণ্টা পরেই ফুটবলের দেশে শুরু বিশ্বকাপ। সহস্র মাইল দূরে থেকেও ফুটবল ফ্লুয়ে আক্রান্ত বাঙালি
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই ফুটবলের দেশে শুরু বিশ্বকাপ, রাত জাগা শুরু বাঙালির
-----------------------------------------------
পেলের দেশে ফুটবলের বিশ্বযুদ্ধ। অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকঘণ্টার। তার আগে যেন দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতেছেন একদল মানুষ। আর একদল বলছেন এই বিশ্বকাপ চাই না। দেশের অর্থনীতি যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে তখন কেন সাধারণ মানুষের করের টাকায় ফুটবলের উতসব? প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
সাও পাওলোর মাঠে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। নেইমার-ফ্রেড-অস্কারদের জন্য গলা ফাটাতে তৈরি সাম্বার দেশ। দেশ-বিদেশের মিডিয়া, নামীদামী লোকজন থেকে শুরু করে অগুন্তি সমর্থক। হোটেল, পানশালা, খোলা রাস্তায় উচ্ছ্বাসের ছবি।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে কার্নিভালের মেজাজে ব্রাজিল।
তবে, এই ছবিটাই সব নয়। উতসবমুখর দেশটার ভিতর রয়েছে আরও একটা দেশ। যাকে দেখা যাচ্ছে কোপাকাবানার সৈকতে, রিওর রাস্তায়, সাও পাওলোর সাবওয়েতে। সর্বত্র সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ।
১৯৫০-এর পর ২০১৪। আর একটা বিশ্বকাপের আয়োজন করতে লেগে গেল ছয় দশকেরও বেশি সময়। সমীক্ষা বলছে, তারপরও ফুটবলের দেশের ষাট শতাংশ মানুষ বলছেন, এই বিশ্বকাপ তাঁরা চান না। এমনকি প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন একসময়ের বিশ্বজয়ী রোমারিও, বেবেতোর মতো ফুটবলারও।
জিনিসের দাম, যাতায়াতের খরচ আকাশছোঁয়া, চাকরি নেই, ছেলেমেয়ের স্কুলের খরচ কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না, সামাল দেওয়া যাচ্ছে না অসুখ-বিসুখের খরচ, নেই কোনও সামাজিক সুরক্ষা। সেদিকে নজর না দিয়ে বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম তৈরিতে কেন টাকার অপচয় করছে সরকার? প্রশ্ন তুলছেন পেলের দেশের মানুষ। সাতষট্টি শতাংশ ব্রাজিলবাসীর মতে বিশ্বকাপ ডেকে এনেছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
বিশ্বকাপের আয়োজনে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সত্তর হাজার কোটি টাকা খরচ করছে ব্রাজিল সরকার।
ব্রাজিলের অর্থনৈতিক বিকাশ হার মাত্র এক দশমিক সাত শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রায় সত্তর হাজার কোটি টাকা সরকারি খরচের পরও এই হার শূন্য দশমিক দুই শতাংশের বেশি বাড়বে না। উল্টে, বিপুল খরচের ধাক্কায় বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি, কমছে ব্রাজিলের কারেন্সি রিয়ালের দাম
ব্রাজিলের সরকার কিন্তু সমালোচনা শুনতে নারাজ। তাঁদের আশা, বিশ্বকাপ দেখতে আসবেন প্রায় সাঁইতিরিশ লক্ষ মানুষ। পর্যটন থেকে সরকারের ভাঁড়ারে আসবে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিরিশ হাজার কোটি টাকা। খরচের বাকিটা আখেরে উন্নত করবে দেশের পরিকাঠামো।
প্রেসিডেন্ট যাই বলুন না কেন, ফুটবল যে দেশের শিরায়-ধমনীতে সেই দেশের বড় একটা অংশের মানুষ বলছেন বিশ্বকাপ চাই না। বিশ্বকাপের সময় সারা পৃথিবীর চোখের সামনে বিক্ষোভের আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। সাও পাওলোর মাঠে বল গড়ানোর কয়েকঘণ্টা আগেও তাই তাল কাটছে সাম্বার ছন্দে।