ধর্মশালা বলে উঠছে ইডেনকে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!
স্বরূপ দত্ত
কিছু প্রবাদ জীবনে বড় প্রভাব ফেলে যায় চিরকাল। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই সেই ছেলেবেলা থেকে শুনে আসা প্রবাদটাই কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, তার অস্তিত্ব আছে। সে এভাবেই বোঝাতে চায় আমাদের আধুনিক সভ্য-সমাজকে যে, চিরকাল কিছু কথা নিয়মমাফিক চলতে থাকে। এমনটাই হতো। আজও হয়। আগামিকালেও হবে। আর দেখবে ঠিক মনে পড়ে যাবে যে, এমনটাই হওয়ার ছিল। আজ যখন ইডেন গার্ডেনের সোনালি উজ্জ্বল শরীরেও কালো বোরখাতে ঢেকে গিয়েছে তখন তিনটে প্রবাদ বড় মনে পড়ছে।
এক, ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে। দুই, কারও পৌষমাস কারও সর্বনাশ! আর তিন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। কেন? তারই ব্যাখ্যা ছোট্ট করে দিতে মন চাইলো।
ধর্মশালার মানুষদের চোখেও নেমেছিল বৃষ্টি, যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল যে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হবে ইডেনে, সেদিন জয় হয়েছিল কলকাতার। জিতেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। জিতেছিল ইডেন গার্ডেন। সত্যিই তো। ধারে-ভারে, কোনওকিছুতেই ইডেনকে ধর্মশালার ওই ছোট্ট স্টেডিয়াম হারাবে কীভাবে! হ্যাঁ, উচ্চতায় অবশ্যই হারাতে পারে। তবু, সেদিন ম্যাচটা ধর্মশালা থেকে সরে যাওয়ার পর ওই সুন্দর স্টেডিয়ামটাও হয়তো পাহাড়ের কোলে মাথা দিয়ে অঝোরে কেঁদে উঠেছিল। আমরা সেদিন আনন্দে আর কিছু অনুভব করিনি!
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, ধর্মশালার সঙ্গে ধর্ম যে ফেভিকলের মজবুত জোরের মতো করেই আটকে রয়েছে। তা সেই ধর্মশালা থেকে যখন ম্যাচ সরে যাচ্ছিল ইডেনে, তখন কি আর ওই ইট-কংক্রিটের বুকটা থেকেও একটা দীর্ঘশ্বাস পড়েনি! সে বলে ওঠেনি যে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে! শুধু বাতাস নয়, বৃষ্টিতেও নড়ে। তবু চাইবো, আর খানিকবাদে বৃষ্টি থেমে যাক। ম্যাচটা হোক। কিন্তু কে জানে, আর একটা প্রবাদ ফের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠবে কিনা যে, 'প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে!' ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের থেকেও বড় যুদ্ধ হয়ে গেল যেন এটাই। ধর্ম বনাম নন্দনকানন!