দু'বছর বেপাত্তা ছিলেন কেন, জানালেন সোনাজয়ী দীপা ও তাঁর কোচ
দীপা বুঝিয়ে দিলেন, এই দু বছর তিনি সাধনা করেছেন। নিজেকে ভেঙে গড়ে আরও মজবুত করেছেন। আর ফিরে আসার দিন গুনছেন প্রতিটি মুহূর্তে।
সুমন মজুমদার
ব্রাজিল থেকে ফিরলেন। আচমকাই বেপাত্তা হয়ে গেলেন দীপা কর্মকার। দু বছর বেপাত্তাই রইলেন। লোকে ভাবলো, ব্রাজিল অলিম্পিক থেকে চতুর্থ হয়ে ফেরা দীপা দিকভ্রষ্ট হয়েছেন। তার ফেরার রাস্তা কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। কিন্তু, হঠাৎ করেই আবার আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস এর মহাকাশে ভেসে উঠল দীপা কর্মকার নামের তারা। এবং আরও উজ্জ্বল হয়ে। প্রবলভাবে ফিরে এসে আগরতলার দীপা বুঝিয়ে দিলেন, এই দু বছর তিনি সাধনা করেছেন। নিজেকে ভেঙে গড়ে আরও মজবুত করেছেন। আর ফিরে আসার দিন গুনছেন প্রতিটি মুহূর্তে।
আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে সোনা জিতলেন দীপা। এরপরই চারিদিকে তাঁকে নিয়ে আবার ধন্যি ধন্যি রব। ঠিক যেমন হয়েছিল অলিম্পিক থেকে ফেরার পর। কিন্তু ফিরে আসার রাস্তাটা কি খুব সহজ ছিল? সব থেকে বড় কথা, যে ভল্টের জন্য দীপার এত নাম ডাক যশ সেটাই তো তাঁকে ছাড়তে হলো। কেন?
দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী বলছিলেন, চোটের জন্য তো ওর কেরিয়ার শেষ হতে বসেছিল। ওজন বেড়ে যাচ্ছিল। কত কষ্টে ওকে আবার ট্র্যাকে ফেরানো গিয়েছে তা শুধু আমার আর ওর পরিবারই জানা আছে। সেখানে কী করে আবার প্রোদুনভার মতো ঝুঁকিপূর্ণ ভল্ট নিতে দিতাম! আগস্টে এশিয়ান গেমস। ও এখন নতুন ভল্টের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।
রিও অলিম্পিকের পর চোট পেয়েছিলেন দীপা। রিহ্যাবে থাকার জন্য কমনওয়েলথ গেমসেও নামতে পারেননি। চোট সারিয়ে দীপা ফিরেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে ফেরেনি প্রোদুনভা। তবে কোচের নির্দেশ মেনে এবার নতুন ভল্ট দিলেন দীপা। আর শুরুতেই সেই ভল্টে বাজিমাত করলেন আগরতলার জিমন্যাস্ট। তুরস্কের মারসিনে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জে দীপা ব্যাকে দিলেন ‘সুকাহারা ৭২০ ডিগ্রি টার্ন ভল্ট’ এবং ফ্রন্টে ‘হ্যান্ডস্প্রিং স্ট্রেট বডি সমারসল্ট ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন ভল্ট’। পয়েন্ট করলেন ১৪.১৫০। দীপার দেওয়া এই দ্বিতীয় ভল্টটি একদম নতুন। আপাতত দ্বিতীয় ভল্টটি ৩৬০ ডিগ্রি নিলেও, ভবিষ্যতে সেটি ৫৫০ ডিগ্রির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়াই দীপার লক্ষ। কিন্তু, এভাবেও ফিরে আসা যায় সেটা দেখিয়ে দিয়ে কেমন লাগছে জিমন্যাস্টের?
তুরস্ক থেকে দীপা ফোনে বললেন, "কঠিন চোট সারিয়ে আবার প্রোদুনোভা ভল্ট দেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল। ফের চোট লাগার সম্ভাবনা ছিল। তাই নতুন ভল্ট নিয়ে ট্রেনিং শুরু করলাম। ভবিষ্যতেও এই ভল্ট নিয়েই এগোতে চাই। কোচ পাশে না থাকলে এভাবে ফিরে আসতে পারতাম না। আর নতুন ভল্ট দিয়ে এই সাফল্যও আসত না। এবার এশিয়ান গেমসে ভালো কিছু করাই আমার প্রথম লক্ষ।"
তুরস্ক থেকে কিছুদিনের জন্য আগরতলায় ফিরবেন দীপা। কারণ, এই ধন্যি মেয়ে খেলাধুলার সঙ্গে লেখাপড়াতেও ফাঁকি দিতে চান না। বহু লড়াই জেতা দীপা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসবেন। আরও পড়ুন- ময়দানে ফিরেই বাজিমাত দীপার, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতলেন বাঙালি তনয়া