প্রয়াত চিমা ওকেরির প্রিয় সতীর্থ চিবুজোর, ময়দানে শোকের ছায়া
৯০ মিনিটের যুদ্ধের পারফরম্যান্সের নিরিখে চিমা ও এমেকা অনেক এগিয়ে থাকলেও চিবুজোর ছিলেন প্রথম নাইজেরীয় বিদেশি যিনি তিন প্রধানে (পড়ুন, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং-এ) খেলেছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: আট ও নয়ের দশকে ময়দানের গ্যালারিতে একটা আওয়াজ প্রায় শোনা যেত। 'চিমা, এমেকা, চিবুজোর'। সেই চিবুজোর এ বার থেমে গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। নাইজেরিয়ায় রেখে গেলেন স্ত্রী ও সন্তানদের।
প্রিয় বন্ধু ছিলেন চিমা। সেই চিমার জন্যই তাঁর সঙ্গে ময়দানের যোগাযোগ। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, কৃষ্ণেন্দু রায়, অলোক মুখোপাধ্যায়, শিশির ঘোষদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছিলেন তিনি। এহেন চিমা লন্ডন থেকে জি ২৪ ঘণ্টাকে হোয়াটসঅ্যাপে বলছিলেন, "গত কয়েক বছরে অনেক বন্ধুকে হারিয়েছি। তবে 'চিবু'-র চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। আমরা প্রায় একসঙ্গে কলকাতায় খেলতে এসেছিলাম। ফুটবল খেলার মানের বিচারে আমি অনেক এগিয়ে থাকলেও, 'চিবু' ছিল অন্য গ্রহের। ওরমধ্যে ইগো ব্যাপারটা একেবারেই ছিল না। সেইজন্য ওকে সবাই ভালবাসত।"
ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর চার্চে ফাদার হয়ে গিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত। চিমা যোগ করলেন, "খেলোয়াড় জীবনের সময় থেকেই ওর মধ্যে ধর্ম নিয়ে প্রবল আগ্রহ ছিল। ওর ঘরে, ড্রেসিংরুমে ওর কিটব্যাগ রাখার জায়গায় বাইবেল রাখা থাকত। তাই আমরা সবাই চিবুকে সম্মান করতাম।"
৯০ মিনিটের যুদ্ধের পারফরম্যান্সের নিরিখে চিমা ও এমেকা অনেক এগিয়ে থাকলেও চিবুজোর ছিলেন প্রথম নাইজেরীয় বিদেশি যিনি তিন প্রধানে (পড়ুন, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং-এ) খেলেছিলেন। তিন প্রধান ছাড়া কলকাতায় তাঁর সেরা সময় কেটেছিল টালিগঞ্জ অগ্রগামীতে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত টালিগঞ্জ অগ্রগামীতে খেলেছিলেন এই স্ট্রাইকার। এরপর ১৯৯৮ সালে চার্চিল ব্রাদার্সের হয়ে খেলে আজীবনের মতো জার্সি তুলে রেখেছিলেন তিনি। শেষ সিজনে গোয়ার এই দলের হয়ে সাতটি গোল করেছিলেন প্রিয় 'চিবু'।
চিমা ছাড়া শিশির ঘোষের সঙ্গেও তাঁর দারুণ সম্পর্ক ছিল। প্রাক্তন স্ট্রাইকার শিশির ঘোষ বলছিলেন, "বেশ কয়েক বছর আগে রেভারেন্ড সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য একটি প্রদর্শনী ম্যাচে ও এসেছিল। সেই শেষবার আমরা আড্ডা দিয়েছিলাম। এরপর ফেসবুক ব্যবহার করার পর থেকে চিবুর সঙ্গে আমরা নেট মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতাম। ওর মতো মজাদার ছেলে আমি জীবনে দেখিনি। আর বেশি কিছু বলার নেই। চিবু যেখানেই থাকিস, ভাল থাকিস।"
খেলোয়াড় জীবন থেকে ধর্ম নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল। তাই বুটজোড়া তুলে রাখার পর নাইজেরিয়ার একটি চার্চে ফাদার হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ দিন পর্যন্ত সেই কাজ করে গিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে চার্চে বেশি সময় কাটালেও, ফুটবলের প্রতি নেশা এতটুকু কমেনি। তাই এলাকার উদীয়মানদের ট্রেনিং দিতেন। সঙ্গে চলতো ধারাভাষ্যের কাজ। কিন্তু থেমে গেলেন ময়দানের সদাহাস্য চিবু। আজীবনের জন্য।