Exclusive, Shankar Lal Chakraborty: প্রথম বাঙালি হিসেবে AFC Pro License কোচ! কাকে উৎসর্গ করলেন শঙ্কর?
এই মুহূর্তে সুদেভা দিল্লি এফসির হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। প্রো লাইসেন্স পাওয়ার ফলে শুধুমাত্র আইএসএল নয়, বিদেশি বিভিন্ন লিগেও এবার প্রধান কোচ হতে পারবেন শঙ্করলাল।
সব্যসাচী বাগচী
ভাগ্য দেবতা নাকি সবাইকেই ফের একবার সুযোগ দেয়। অনেকে এই মত মানবেন। আবার অনেকে এসব ভাগ্যের দোহাই পছন্দ করেন না। শঙ্কর লাল চক্রবর্তী (Shankar Lal Chakraborty) ভাগ্যকে দোহাই দেন কিনা, সেটা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। তবে এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, ফুটবল দেবতা শঙ্করলালের পাশে রয়েছেন। তাই তো নজির গড়ে প্রথম বাঙালি কোচ হিসেবে এএফসি প্রো-লাইসেন্স কোচিং (AFC Pro License Coach) পরীক্ষায় পাস করলেন সিঁথির বাসিন্দা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (Bangladesh Football Federation) অধীনে এই কোচিং ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন শঙ্করলাল।
এই মুহূর্তে সুদেভা দিল্লি এফসির (Sudeva FC) হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। প্রো লাইসেন্স পাওয়ার ফলে শুধুমাত্র আইএসএল নয়, বিদেশি বিভিন্ন লিগেও এবার প্রধান কোচ হতে পারবেন শঙ্করলাল। ১৯৯৭ সালে কলকাতা লিগের ডার্বি ম্যাচে চিমা ওকেরি (Chima Okorie) তাঁর পায়ের উপর দাঁড়িয়ে যান! সিন বোন ভেঙে যায় শঙ্করের। ফলে ফুটবলে ইতি টানতে বাধ্য হন। তবে দুই প্রধানে একটা সময় দাপিয়ে খেলা মিডফিল্ডার ফের একবার কোচ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরলেন। আর কেরিয়ারের এমন এক বিশেষ দিনে গোয়া থেকে টেলিফোনে জি ২৪ ঘন্টাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন শঙ্কর লাল।
প্রশ্ন: প্রথম বাঙালি হিসেবে এএফসি প্রো লাইসেন্স কোচ। এই সাফল্যে কতটা উচ্ছ্বসিত?
শঙ্কর লাল: ২০১৪ সালে এ লাইসেন্স পাশ করার পরেই, এএফসি প্রো লাইসেন্স ডিগ্রি পাশ করার তাগিদ অনুভব করেছিলাম। তবে উপায় খুঁজে বের করতে পারছিলাম না। তবে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের কোচ থাকার সময় আমাকে এই বিষয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া অনেক সাহায্য করেছিল। ওঁর সাহায্যেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে ২০২১ সালের মে মাসে আমার কাগজপত্র জমা নিয়েছিল। লক্ষ্য সবসময় বড় ছিল। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। সেই সুবাদে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আমাকে সার্টিফিকেট দিল। এবার জাতীয় দল কিংবা আইএসএল-এ কোনও দলের হেড কোচ হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই। এছাড়া বিদেশেও কোচিং করার ইচ্ছা আছে। বাকিটা দেখা যাক।
প্রশ্ন: আইএসএল-এর হেড কোচের আসনে ভারতীয়দের দেখাই যায় না। খালিদ জামিলের পর আপনি জায়গা করে নিতে পারবেন?
শঙ্কর লাল: আমি বরাবরই স্বপ্নটা বড় ভাবে দেখি। সেইজন্যই তো আইএসএল-এর হেড কোচ হতে চাই। লড়াই তো সব জায়গায় রয়েছে। আমার জীবনটাও তো লড়াইতে ভরা। তাই এবারও লড়তে হবে।
প্রশ্ন: আপনার আদর্শ কে? কাকে সামনে রেখে পেশাদার কোচ হতে চেয়েছিলেন?
শঙ্কর লাল: সত্যি বলতে আমার কোচিংয়ে আসার ইচ্ছাই ছিল না। ২০০৭ সালের ঘটনা। ফুটবলার হিসেবে অন্ধকার সময় কাটিয়ে শুধু অফিস ও বাড়িতে সময় কেটে যায়। এমন সময় আমার স্ত্রী পৌলমী আমাকে তাগিদ জুগিয়েছিল। ফুটবল নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার কোনও ইচ্ছা আমার ছিল না। বলা ভালো বিরক্ত ছিলাম। সেই সময় আমার স্ত্রী বলেছিল, 'তোমাকে কোচিং করাতে হবে। আগে লাইসেন্সটা নাও।' এরপর থেকেই ধাপে ধাপে কোচিং ডিগ্রি পাশ করেছি। এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদে যখনই কোনও কোচিং লাইসেন্স পাশ করেছি, তখনই কোন না কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি। সি লাইসেন্স পাশ করার পর মোহনবাগান স্কুল, বি লাইসেন্স পাশ করার পর আইএফএ অ্যাকাডেমি, এ লাইসেন্স পাশ করার পর সুভাষ ভৌমিকের অধীনে মোহনবাগানে কাজ করার সুযোগ পাই। আর এবার এএফসি প্রো লাইসেন্স পাশ করার পর সুদেভা এফসি-তে যোগ দিলাম। আর যদি আইডলের কথা বলেন, তাহলে পেপ গোয়ার্দিওয়ালা ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারি না। আমি ওঁর পাগল ফ্যান।
প্রশ্ন: এমন বিশেষ দিনে কাউকে মিস করছেন?
শঙ্কর লাল: ফ্যামিলির দিক থেকে বাবা। আর পেশাদার কোচিংয়ের জগতে সুভাষ ভৌমিক। কারণ কোচ ভৌমিক দা-কে আমি এখনও মিস করি। সারাজীবন মিস করব।
প্রশ্ন: চিমার কাছে আঘাত পেয়ে আপনার ফুটবল কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়। সেই সময় মনে হয়েছিল আপনি এতটা উচ্চতায় উঠবেন?
শঙ্কর লাল: সেই সময় চারদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। বন্ধু-বান্ধব কেউ আমার পাশে ছিল না। সত্যি বলতে তখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে ছিলাম। তবে পরিবার ও স্ত্রী সেই সময়ও সঙ্গে ছিল। তাই আমিও ভেবেছিলাম এবার পালটা লড়াই করতে হবে। কারণ পিঠ তো আমার আগেই ঠেকে গিয়েছিল। নতুন ভাবে তো কিছু হারানোর নেই। ফুটবল শুধু খেলায়াড় দিয়ে হয় না। এখানে কোচেরও একটা বড় ভূমিকা আছে। কারণ 'মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়। আড়ালে তার সূর্য আসে'। এই ধরনের লাইনগুলোও আমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: এএফসি প্রো লাইসেন্স করার জন্য কীভাবে লেখাপড়া করেছেন? কোন সময়টা বেছে নিয়েছিলেন?
শঙ্কর লাল: যেহেতু বাড়িতে দুটি দুষ্টু ছেলে আছে, তাই আমি রাতকেই লেখাপড়া করার জন্য বেছে নিয়েছিলাম। রাত ১১টা থেকে ১:৩০ মিনিট ছিল আদর্শ সময়। যাবতীয় লেখাপড়া তখনই সারতাম। আসলে এই কোর্স অনেকটা পিএইচডি-র মতো। অনেক রিসার্চ করতে হয়। এখানে শুধু মাঠে নামা এগারো জন খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা হয় না। এটা কিন্তু বিরাট কর্মযজ্ঞ।
প্রশ্ন: এএফসি প্রো লাইসেন্স পাশ করার জন্য কীভাবে এবং কতটা লেখাপড়া করতে হয়?
শঙ্কর লাল: সবটাই ফুটবলের উপর আলোচনা হয়। ফুটবল কালচার, ফুটবলের পরিবেশ গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। একজন কোচ কীভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করবে, কীভাবে ফুটবলাদের নিয়ে এগিয়ে যাবে, কর্তাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন হবে, ম্যাচে গেমপ্ল্যান সাজানো থেকে ট্যাকটিক্যাল প্ল্যান সাজানো, খারাপ সময় একজন কোচ কীভাবে লিড করবে, সবকিছু আমাদের আলোচনার বিষয়। এছাড়া বর্তমান যুগের আধুনিক ফুটবল কেমন এবং ভবিষ্যতে ফুটবল কোন জায়গায় দাঁড়াবে, সেটা নিয়েই কিন্তু একজন কোচের জ্ঞান থাকতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং করেছেন?
শঙ্কর লাল: আমি লাইসেন্স করার জন্য নরওয়েতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে ১২ দিন ট্রেনিং করেছিলাম।
প্রশ্ন: আগামি মরসুমের জন্য কোনও আইএসএল দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন?
শঙ্কর লাল: এখন তো কোনও উপায় নেই। কারণ মরসুম তো প্রায় শেষের দিকে। আগামি মার্চ থেকে ফের আমাদের ফুটবল মরসুম শুরু হবে। তবে এর আগে থেকেই সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রশ্ন: লেখাপড়া করার জন্য আপনি আলাদা কোনও বই পড়তেন? ইউ টিউবে মোটিভেশনাল ভিডিয়ো দেখতেন?
শঙ্কর লাল: এই কোর্স করার সময় তো একাধিক বই দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া বেশ কিছু ইউ টিউবে মোটিভেশনাল ভিডিয়ো দেখেছি। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ছোট দলগুলোকে নিয়েও আলোচনা হত। কেন ছোট দেশগুলো বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করল, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হত।