Deepak Hooda: অন্ধকার, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে জ্বলে উঠলেন বিতর্কিত অলরাউন্ডার দীপক
দীপকের জীবনে ‘অকাল দীপাবলি’।
সব্যসাচী বাগচী: ঠিক এক বছর আগেও ওঁর নামের পাশে ‘অনিশ্চয়তা’, ‘অন্ধকার’, ‘বিতর্কিত’ শব্দগুলো অনায়াসে জুড়ে দেওয়া যেত। তবে সেই সব ‘কালো দিন’ কাটিয়ে ফের স্বমহিমায় ফিরলেন দীপক হুডা (Deepak Hooda)। অবশেষে জাতীয় দলের দরজা খুলে গেল ২৬ বছরের এই অলরাউন্ডারের জন্য।
২০২১ সালের জানুয়ারি-
গত বছর এই জানুয়ারি মাসেই সৈয়দ মুস্তাক আলির একটা ম্যাচের আগে বরোদা দলে জৈব বলয় ভেঙেছিলেন। এর কারণ হিসেবে দীপকের দাবি ছিল সেই দলের অধিনায়ক ক্রূনাল পান্ডিয়া তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। অন্য সতীর্থদের সামনেই নাকি ক্রূনাল তাঁকে মারতেও গিয়েছিলেন। এমন গুরুতর অভিযোগ বরোদার ক্রিকেট কর্তাদের লিখিত জানানো হলেও লাভ হয়নি। কারণ দীপককেই উল্টে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সেই ঘটনার পর মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলেন দীপক। প্রায় দুই মাস নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছিলেন। তবে সেই অন্ধকার জীবন বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ, পরিবার ও কাছের কয়েক জন বন্ধু ছাড়াও দীপকের জীবনে আলো ফিরিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছিলেন দুই ভাই ইউসুফ ও ইরফান পাঠান।
জাম্পকাট, ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি-
সত্যি ভাগ্য অদ্ভুত খেল দেখায়। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বদলে গেল ওঁর জীবন। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১১টা, জীবন বদলে দেওয়া খবরটা পেলেন দীপক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আসন্ন তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে তাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে। বিসিসিআই-এর টুইট দেখেই ওঁর দুই চোখে জল চলে এসেছিল।
২৭ জানুয়ারি জি ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে সেটাই বলেছিলেন, “জানেন এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। গত বছর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় কাটিয়েছি। সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠি। ঘর বন্ধ করে একা কাঁদতাম। কোনও অন্যায় না করলেও আমার কাছ থেকে ক্রিকেট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় পরিবার ও কয়েক জন কাছের বন্ধু তো পাশে ছিলই। তবে ইউসুফ ও ইরফান ভাই পাশে না দাঁড়ালে আমি হারিয়ে যেতাম। ওঁদের জন্যই আবার মাঠে ফিরতে পেরেছিলাম। সেই জন্য জাতীয় দলেও এল সুযোগ। এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে।”
আরও পড়ুন: Kuldeep Yadav: কুলদীপের প্রত্যাবর্তন, বিষ্ণোইয়ের ডাক! টুইটার বলছে 'দ্রাবিড় যুগের শুরু'
আরও পড়ুন: Ravi Bishnoi: জাতীয় দলে ডাক পেয়ে রবি বিষ্ণোই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন কুম্বলেকে
২০১৭-১৮ মরশুমেও একবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই বার প্রথম একাদশের দরজা খোলেনি। তবে এ বার সুযোগ পেলে সদ্ব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে আছেন তিনি। দীপক যোগ করলেন, “জাতীয় দলে ফের একবার ডাক পাওয়ার মাঝে প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেল। তবে সত্যি বলতে প্রত্যেক ঘরোয়া মরশুম শুরু হওয়ার আগে নীল জার্সি গায়ে চাপানোর স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু আমি সেই দরজা কিছুতেই ভাঙতে পারতাম না। কিন্তু গত বছরের অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। মাথা গরম না করে ধৈর্য বজায় রাখতে শিখিয়েছে গত ১২টা মাস। আর সেই অভিজ্ঞতাই আমার এগিয়ে চলার সম্বল।“
টেলিফোনিক আলোচনায় ঘুরেফিরে আবার পাঠান ভাইদের কথা চলে এল। ভারতের দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার যেন দীপকের কাছে ভগবান! সেটাই বুঝিয়ে দিতে চাইছিলেন তিনি। দীপক বলছিলেন, “আমার এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব ইউসুফ ও ইরফান ভাইয়ের। ওঁরা শুধু আমাকে অনুশীলন করাতেন না, কীভাবে জীবনে এগিয়ে যাওয়া উচিত, মানুষের সঙ্গে কেমন ভাবে আচরণ করা উচিত সেই গুনও রপ্ত করেছি ওঁদের কাছ থেকেই।“
কীভাবে চলতো অনুশীলন? দীপক বললেন, “রোজ সকালে মোতিবাগ স্টেডিয়াম কিংবা বরোদার পুলিশ মাঠে কিট ব্যাগ নিয়ে চলে যেতাম। আমি মাঠে যাওয়ার আগে থেকে দুই ভাই হাজির থাকতেন। নেটে ইরফান ও ইউসুফ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যাট করার পাশাপাশি ওঁদের বিরুদ্ধে একনাগাড়ে বল করতাম। এ ভাবেই আমার অন্ধকার দিনগুলোকে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করেছেন ওঁরা।“
ফিরে আসার এই লড়াইতে তিনি অনিল কুম্বলে ও কেএল রাহুলকেও পাশে পেয়েছিলেন। গত দুই মরশুম পঞ্জাব কিংসে খেলেছিলেন দীপক। এর মধ্যে আবার গত আইপিএল-এ নামার আগে কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচও খেলতে পারেননি। তবুও কুম্বলে এই তরুণের প্রতি ভরসা দেখিয়েছিলেন।
সেই প্রসঙ্গে দীপক যোগ করলেন, “আমার কেরিয়ারে অনিল স্যার অনেক বড় ভূমিকা নিয়েছেন। কেএল রাহুলও ভরসা দেখিয়েছিল। তাই পঞ্জাব কিংসের হয়ে সাফল্যের সঙ্গে খেলেছিলাম।“
নির্বাসন উঠে যাওয়ার পর ওঁকে বরোদা দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু দীপক আত্মসম্মান হারাতে রাজি ছিলেন না। রাজস্থানে গিয়ে নাম লেখান। আর সেটাই ছিল দীপকের কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। তাঁকে দলের অধিনায়কত্ব দিয়ে দেওয়া হয়। এরপরেই বিজয় হাজারে ট্রফিতে দাপট দেখিয়েছিলন। ৬ ম্যাচে ২৯৪ রান করে ব্যাট হাতেই জবাব দিয়েছিলেন দীপক। এর মধ্যে কর্নাটকের বিরুদ্ধে ১০৯ রান রয়েছে।
দীপকের মতে, “রাজস্থান গিয়ে যেন আমার পুনর্জন্ম হল। এক মিনিটের জন্যও মনে হয়নি যে আমি ভিন রাজ্যে খেলছি। আর সেটাই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল।“
অনেক ক্রিকেট পন্ডিতদের মতে দীপকের জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলেও সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। তবে এক সময় অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া ছেলেটা এই সুযোগকে কাজে লাগাতেই মরিয়া। কারণ দীপকের জীবনে যে আবার আলো ফিরে এসেছে।