ISL 2022-23, ATKMB vs EBFC: ফিরে দেখা শেষ চার ডার্বির বিশেষ মুহূর্ত
স্বাভাবিক ভাবেই আইএসএল-এ কলকাতা ডার্বিই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই মঞ্চে প্রথমবার মুখোমুখি হয় সবুজ-মেরুন ও লাল-হলুদ বাহিনী। তবে কোভিডের জন্য গত চার ডার্বি আয়োজন করা হয়েছিল ফাঁকা স্টেডিয়ামে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মাঝে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। চলতি আইএসএল-এ (ISL 2022-23) ফের একবার মর্যাদার ডার্বির সাক্ষী থাকবে ভারতীয় ফুটবল (Indian Football)। ফের একবার ৯০ মিনিটের যুদ্ধে মুখোমুখি হতে চলেছে এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। শতবর্ষ পেরনো ডার্বির (Kolkata Derby) লড়াই কেমন হবে, সেটা তো রেফারির শেষ বাঁশি বেজে ওঠার পর বোঝা যাবে। শনিবার রাতে কাদের মুখের হাসি বেঁচে থাকবে, তা এখনই আন্দাজ করা কঠিন। তবু বিতর্ক থামা নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই আইএসএল-এ কলকাতা ডার্বিই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এই মঞ্চে প্রথমবার মুখোমুখি হয় সবুজ-মেরুন ও লাল-হলুদ বাহিনী। তবে কোভিডের জন্য গত চার ডার্বি আয়োজন করা হয়েছিল ফাঁকা স্টেডিয়ামে। এই প্রথমবার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকরা গ্যালারিতে বসে আওয়াজ তুলতে পারবেন। ডার্বির আবহ যখন তৈরি হয়েই গিয়েছে, তখন ফিরে যাওয়া যাক গত দুই মরসুমের চারটি ডার্বিতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
২৭ নভেম্বর ২০২০, প্রথম লেগ, তিলক ময়দান স্টেডিয়াম, ভাস্কো
এটিই ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রথম আইএসএল ম্যাচ। অন্য দিকে এটিকে মোহনবাগানের কাছে সেটি ছিল লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে এক গোলে হারানোর পরে স্বাভাবিক ভাবেই সবুজ-মেরুন শিবির ছিল আত্মবিশ্বাসী। আর প্রথম ম্যাচই চিরপ্রতিদ্বন্দী দলের বিরুদ্ধে হওয়ায় এসসি ইস্টবেঙ্গল ছিল একটু নার্ভাস। ৪৯ মিনিটে রয় কৃষ্ণা ও ৮৫ মিনিটে মনবীর সিংয়ের দুর্দান্ত দুই গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারায় সবুজ-মেরুন শিবির। বিপক্ষের কড়া ডিফেন্সের দুর্ভেদ্য দেওয়াল ভেঙে গোল করার সে রকম সুযোগ তৈরি করতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। ৫৮ শতাংশ বল পজেশন থাকলেও ম্যাচের দখল নিতে পারেনি রবি ফাউলারের লাল-হলুদ।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, দ্বিতীয় লেগ, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, ফতোরদা
নভেম্বরে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পরে এটিকে মোহনবাগান দ্বিতীয় ডার্বির আগে পর্যন্ত যে ১৫টি ম্যাচ খেলে, তার মধ্যে ন’টিতেই জিতেছিল আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। ফিরতি লিগে যখন তারা চিরপ্রতিদ্বন্দীদের মুখোমুখি হয়, তখন লিগ টেবলের এক নম্বরে সবুজ-মেরুন শিবির। আগের চার ম্যাচে দশ গোল করে তারা। অন্য দিকে, প্রথম ও দ্বিতীয় ডার্বির মধ্যে ১৬টি ম্যাচ খেলে এসসি ইস্টবেঙ্গল। তার মধ্যে পাঁচটিতে ছিল হার। একটা সময়ে তারা টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত ছিল। দ্বিতীয় ডার্বির আগের দুই ম্যাচেই জামশেদপুর এফসি-কে হারায় ও হায়দরাবাদ এফসি-র সঙ্গে ড্র করে রবি ফাউলারের দল। তাই ফিরতি ডার্বি নিয়ে আশায় ছিলেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা। ফিরতি লেগের ম্যাচ ৩-১ গোলে জিতে নেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ম্যাচের শুরুতেই রয় কৃষ্ণা এবং দ্বিতীয়ার্ধে ডেভিড উইলিয়ামস ও জাভি হার্নান্ডেজের গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা। তাঁদের সতীর্থ ডিফেন্ডার তিরির আত্মঘাতী গোল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে সমতা এনে দেওয়া সত্ত্বেও অবশ্য সেই স্কোর ধরে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ শিবির।
২৭ নভেম্বর ২০২১, প্রথম লেগ, তিলক ময়দান স্টেডিয়াম, ভাস্কো
অষ্টম আইএসল-এর শুরুটাও লাল-হলুদের জন্য ভালো হয়নি। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। শুরুতে গোল দিয়ে বিরতির ঠিক আগে গোল খেয়ে যাওয়ার পরে আর দ্বিতীয়ার্ধে গোলের মুখ খুলতে পারেননি লাল-হলুদ ফরোয়ার্ডরা। পেরোসেভিচ বহু চেষ্টা করলেও চিমা ম্লান থাকায় কাজের কাজটি করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। তবে মর্চেলা ও পর্চের পারফরম্যান্স আশা জাগানোর মতোই ছিল। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় দিয়ে সে বারের মরসুম শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। কেরালার ব্লাস্টার্সকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়েছিল সবুজ-মেরুন। আগের বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি থেকে নিয়ে আসা ফরাসি মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস সে দিন নিজে দুটি গোল করা ছাড়াও একটি গোলে অ্যাসিস্টও করেন।
সেই ডার্বিতেও এটিকে মোহনবাগানের আধিপত্য এতটুকু কমেনি। ২৩ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যাওয়া এটিকে মোহনবাগানকে বাকি সময়টা কোনও রকমে ঠেকিয়ে রাখে তারা। শেষ পর্যন্ত ৩-০-য় জিতলেও নিজেদের ভুলে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ নষ্ট করে তারা। এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা আক্রমণাত্মক মেজাজে শুরু করলেও দশ মিনট পর থেকে ম্যাচের রাশ নিয়ে নেয় এটিকে মোহনবাগান। ১৪ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোলে এগিয়ে যায় তারা। রয় কৃষ্ণা ও মনবীর সিং দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে ২৩ মিনিটের মাথায় ফের চিরপ্রতিদ্বন্দীরা ধাক্কা খায় লিস্টন কোলাসোর সুযোগসন্ধানী গোলে। এই গোলের সময় অভাবনীয় ভুল করতে দেখা যায় এ বছরই সবুজ-মেরুন থেকে লাল-হলুদ শিবিরে আসা গোলকিপার ও অধিনায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে। শুধু ভুল নয়, চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলেও যেতে হয় তাঁকে। এই অবস্থায় বিপর্যস্ত এসসি ইস্টবেঙ্গল শিবির আর খেলায় ফিরতে পারেনি। সারা ম্যাচে একটি শটও গোলে রাখতে পারেনি তারা।
আরও পড়ুন: KL Rahul: ফর্ম হারানো কেএল রাহুলকে নিয়ে ভারতের প্রাক্তনের ভিন্ন মত, কিন্তু কেন? জেনে নিন
২৯ জানুয়ারি ২০২২, দ্বিতীয় লেগ, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম, ফতোরদা
২১ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড কিয়ান নাসিরি সেদিন 'সুপার সাব' হিসেবে জীবনের প্রথম ডার্বি খেলতে নেমেছিলেন। সে দিন যে ভাবে বিপক্ষের ডিফেন্সের বুক চিরে আধ ঘণ্টার মধ্যে পরপর তিনটি গোল করে এটিকে মোহনবাগানকে জেতান, তার জন্য বোধহয় কোনও বিশেষণই যথেষ্ট ছিল না। সারা ম্যাচে দুরন্ত লড়াই করে ড্যারেন সিডোলের গোলে এগিয়ে যাওয়া এসসি ইস্টবেঙ্গল ২১ বছরের সেই তরুণের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। ডেভিড উইলিয়ামস পেনাল্টি মিস করা সত্ত্বেও সাফল্যের ধারা অব্যহত রেখে ৩-১-এ ডার্বি জিতে নেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)